পহেলা বৈশাখে চুলের যত্নবিধি
পহেলা বৈশাখ সবসময়ই বছরের একটা চমৎকার সময়। সারা বিশ্বের বাঙালিদের সাথে আমাদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতির অপূর্ব এক মেলবন্ধন ঘটায় এই পহেলা বৈশাখ। সেজেগুজে বৈশাখের মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যাওয়ার আগে সবাই সুস্বাদু খাবার খেতে পছন্দ করে।
কোভিড-১৯ এর নানা বিধিনিষেধের কারণে এবছর এইসব আয়োজন অনেকটাই কমে গেছে। তবুও, আপনি নিজেকে সুন্দর দেখানো ও সুন্দর অনুভব করার অধিকার রাখেন। এবং এজন্য অন্যতম উপায় হচ্ছে চুলের যত্নবিধি অনুসরণ করা।
এজন্যই আমরা আপনার চুলের যত্নে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ নিয়ে এসেছি। এতে করে খুব সহজেই আপনি পাবেন উজ্জ্বল, মসৃণ ও ঝলমলে চুল।
১. আপনার কী কী প্রসাধনী দ্রব্য আছে তা দেখে নিন
চুলের যত্নে প্রথম ধাপ হিসেবে আপনার প্রসাধনীর বাক্সে চোখ বুলিয়ে দেখে নিন চুলের যত্নের জন্য ইতোমধ্যেই আপনার কী কী প্রসাধনী আছে। আপনার কী কী প্রসাধনী আছে সেটা জেনে নিলে আপনি একদম শুরুতেই বুঝতে পারবেন আর কী কী পণ্য কেনা দরকার।
আপনার কি চমৎকার একটি পরিষ্কারক শ্যাম্পু আছে? আপনার ময়েশ্চারাইজিং কন্ডিশনার ও তেলগুলো কি ঠিকঠাক আছে? এই বিষয়গুলো আপনার খেয়াল করা দরকার।
২. স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা অনুসরণ
চুলের যত্নে কোনো রুটিন শুরুর একটা ভাল উপায় হচ্ছে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যতালিকা অনুসরণ। প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার থেকে আপনি অভাবনীয় উপকার পেতে পারেন। এতে আপনার চুল আরো স্বাস্থ্যকরভাবে বাড়বে এবং প্রাকৃতিক প্রাণোচ্ছলতা ফিরে পাবে।
খাদ্যতালিকায় কিছু নির্দিষ্ট ফল, ঔষধি গাছ-গাছড়া ও শাকসবজি দিয়ে শুরু করুন। চুলের যত্নে বেগুন, ছোলা, ডালিম, জাফরান ইত্যাদি বেশ জনপ্রিয়। এগুলো আপনার খাদ্যতালিকায় যোগ করার জন্য এই পহেলা বৈশাখ এক দারুণ সময়।
৩. তেল ও হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করুন
আপনি কি আপনার ঔজ্জ্বল্য হারানো এলোমেলো চুল নিয়ে দিশেহারা? শুধু আপনি একাই নন, সবাইই চায় মসৃণ ও শক্তিশালী উজ্জ্বল চুল। এজন্যই আমরা আপনাকে দিচ্ছি চুলের যত্নে সহজ ও প্রাকৃতিক সমাধান।
সপ্তাহে অন্তত একবার চুলে প্রাকৃতিক তেল ও মাস্ক ব্যবহার করার চেষ্টা করুন। বিভিন্ন তেল যেমন আর্গান, নারিকেল, সূর্যমুখী এমনকি জুঁই ফুলের তেলের মধ্য থেকে আপনার পছন্দমত ব্যবহার করতে পারেন। এগুলো আপনার চুলে পুষ্টি যোগাবে এবং ক্ষতিকর উপাদান থেকে রক্ষা করবে।
এর পরে চুলের ঘর্ষণ কমাতে হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। তেলের জাদুকরী প্রভাবে আপনার প্রিয় চুলের প্রত্যেকটি গুচ্ছ নির্বিঘ্ন থাকবে। সবচেয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষটিও বাসায় বসে চুলের যত্ন নিতে পারবেন!
৪. গোসলের সর্বোত্তম ব্যবহার করুন
কখনো কখনো চুল পড়া ও ভেঙে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় কারণগুলো চোখের আড়ালেই থেকে যায়। আপনি জানতেন কি যে পানিতে অধিক খনিজ পদার্থ আপনার চুলের ক্ষতি করতে পারে? অতিরিক্ত খনিজ পদার্থযুক্ত পানি আপনার চুলের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি সাধন করতে পারে।
এজন্যই ফিল্টারযুক্ত শাওয়ার হেডের জন্য কিছু টাকা ব্যয় করা আপনার দৈনন্দিন চুলের যত্নে একটি ভালো পদক্ষেপ। গোসলের জন্য গরম পানি পরিহার করে ঠাণ্ডা পানি ব্যবহারও উপকারী হতে পারে। মনে রাখবেন, আপনার স্ক্যাল্প বেশি গরম হলে চুলের তেল এবং অন্যান্য উপকরণগুলো ঠিকঠাক কাজ করবে না।
৫. আপনার চুল প্রায়ই ময়লা হলে একটি মৃদু পরিষ্কারক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
সত্যি বলতে বায়ু ও পানি দূষণ আমাদের শহরের একটা বড় সমস্যা। তাই চুল দ্রুতই ময়লা বা শুষ্ক হয়ে যাওয়া বিচিত্র কিছু না। কতবার কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরে আয়নায় এলোমেলো চুল ঠিক করতে হয়েছে?
এজন্যই আপনার সপ্তাহে দুই-তিনবার পরিষ্কারক শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিৎ। এটা মূলত আপনার চুলের সহনশীলতা এবং কতবার বাইরে যান তার ওপর নির্ভর করে। মনে রাখবেন, কোনো সাধারণ পরিষ্কারক শ্যাম্পু হলে কাজ হবে না। শুধু একটিমাত্র সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহারের চেষ্টা করুন। একাধিক সালফেটযুক্ত শ্যাম্পু আপনার চুল রুক্ষ করে দেবে এবং চুলের যত্নের রুটিনে ব্যাঘাত ঘটাবে।
৬. খুব বেশি প্রসাধনী ব্যবহার করতে না চাইলে একটি ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু ব্যবহার করুন
সচরাচর বাইরে না গেলে ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু বাসায় বসে চুলের যত্নে বেশ কার্যকরী। এইসব শ্যাম্পুতে পরিষ্কারক শ্যাম্পুর মত সালফেট থাকে না। এর পরিবর্তে এগুলো আপনার চুলকে ময়েশ্চারাইজ করে এবং স্বল্প পরিসরে বাসায় চুলের যত্নে সহায়তা করে। এতে করে চুল হবে কোমল এবং চুলের বিরক্তিকর পাক ও জট একেবারে দূর হয়ে যাবে।
৭. চুল ডিপ কন্ডিশন করুন।
ডিপ কন্ডিশনিংয়ের অনেক সুবিধা আছে। প্রথমত, পরিষ্কারক শ্যাম্পু ব্যবহারের পরে কন্ডিশনিং আপনার চুলকে কোমল ও উজ্জ্বল করবে। দ্বিতীয়ত, এটা চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত পুষ্টি সরবরাহ করে। এবং তৃতীয়ত, এর ফলে আপনি চুলে আরো বিভিন্ন উপকারী প্রসাধনী পণ্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীনভাবে ব্যবহারের সুযোগ পাবেন।
এজন্য আপনার চুল সপ্তাহে অন্তত একবার ডিপ কন্ডিশন করা দরকার। কিন্তু যদি আপনার চুল বেশি চিকন হয় তাহলে এক সপ্তাহ পরপর কন্ডিশন করুন।
৮. হেয়ারস্টাইলে সতর্কতা অবলম্বন করুন
আপনার হয়ত পহেলা বৈশাখের নতুন হেয়ারস্টাইল আপনার পরিবারকে ও বন্ধুদের দেখানোর তর সইছে না। এজন্যই পহেলা বৈশাখের আগেই আপনার চুলের প্রত্যেকটি গুচ্ছের প্রতি সতর্ক হওয়া দরকার।
স্বাচ্ছন্দ্যমত একটি ঝুঁটি বা বেণী করা এই কাজটাকে আরো সহজ করে দিতে পারে। ঝুঁটি বা বেণী সহজেই করা যায় এবং চুলকে একইসাথে প্যাঁচ বা জট লাগা থেকে রক্ষা করতে পারে। আপনার চুলে কোন স্টাইলটি ভাল যায় সেটি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারেন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নঃ
১. আমার চুল প্রাকৃতিকভাবে সুন্দর দেখাতে কী করতে পারি?
প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার এবং প্রাকৃতিক চুলের তেল ব্যবহারই যথেষ্ট। কেমিক্যালযুক্ত পণ্য থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা করুন। আপনার মুখমণ্ডলের মতই চুলের যত্ন নিতে ভুলবেন না।
২. প্রাকৃতিক চুলের জন্য দৈনন্দিন রুটিন কী?
আপনি সহজেই আপনার সময়মত একটি রুটিন করে নিতে পারেন। তবুও, খাদ্যতালিকায় প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার রাখার চেষ্টা করুন, চুল খুব জোরে আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকুন এবং প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করুন।
৩. রাতে কীভাবে চুল সুন্দর ও গোছালো রাখতে পারি?
ঘুমানোর সময়ে চুল খুবই বিরক্তির সৃষ্টি করতে পারে। এসময়ে চুল সুন্দর ও গোছালো রাখতে হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। এটা আপনার চুলকে বালিশের সাথে ঘর্ষণের হাত থেকে রক্ষা করবে। আপনি চাইলে তেল ব্যবহার করে সকালে উঠে প্রথমেই ধুয়ে ফেলতে পারেন।
৪. কীভাবে প্রাকৃতিক চুলের রুটিন শুরু করতে পারেন?
অন্যসব রুটিনের মতই চুলের সুরক্ষার রুটিনেও আপনার উদ্যম থাকা দরকারি। গরম পানির গোসল পরিহার এবং রুক্ষভাবে চুল আঁচড়ানো থেকে বিরত থাকার মাধ্যমেই রুটিনের ভাল একটা সূচনা হতে পারে। অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত চুলের প্রসাধনী ব্যবহারও পরিত্যাগ করতে পারেন। এসব ছোট ছোট জিনিসের মাধ্যমেই অনেক বেশি উপকৃত হবেন। তাই এসব ছোট ছোট চর্চা দিয়েই শুরু করতে পারেন।
উপসংহার
আশা করি আমাদের এই পরামর্শগুলো আপনার চুলের জন্য পূর্ণাঙ্গ যত্নবিধি প্রণয়নে সহায়তা করবে। এই পহেলা বৈশাখে আপনার চুলের সৌন্দর্যে সবাইকে বিমোহিত করার জন্য শুভ কামনা!
মেটা বিবরণীঃ আপনি কি পহেলা বৈশাখে চুলের জন্য সেরা যত্নবিধি খুঁজছেন? তাহলে আপনার জন্যই আছে আমাদের পূর্ণাঙ্গ দিকনির্দেশনা। আপনার চুল সুস্থ রাখতে এই পরামর্শগুলো দেখুন!
তথ্যসূত্র:
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।