প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় চুল গজানোর ১০ টি উপায়
- প্রাকৃতিক উপায়গুলো আমাদের নমনীয় স্ক্যাল্পকে ক্ষতির থেকে রক্ষা করে।
- সুষম খাদ্যাভ্যাস চুলের বৃদ্ধিসাধন করে।
- তেল দেয়া, স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ পুনরায় চুল গজাতে সহায়তা করে।
- এলো ভেরা, পেঁয়াজ, গ্রিন টি, আদা, এবং আমলকি প্রাকৃতিকভাবে চুল পুনরায় গজানোর সেরা কিছু উপায়।
অতিরিক্ত চুল পড়া মাঝে মাঝে বেশ হৃদয়বিদারক হয়ে ওঠে। আপনি যদি এখন চুল পড়া সমস্যাটির সম্মুক্ষীন হন, তবে আপনার ব্যথাটা আমরা বুঝতে পারছি। কিন্তু এখনই হতাশ হবার কোনো কারণ নেই, আমাদের কাছে আছে চুল প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় গজানোর ১০ টি সেরা টিপস।
হাজারো মানুষের কাছে চুলের বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক উপায়ই পছন্দ কেননা প্রাকৃতিক উপায়গুলো আমাদের ত্বকের কোমলতা ধরে রাখে এবং রাসায়নিক উপাদানের মত চুলের ফলিকলের ক্ষতি করে না। তাহলে দেখে নেয়া যাক চুল পড়া বন্ধ এবং পুনরায় গজানোর ঘরোয়া কিছু উপায়।
১. খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা
আমাদের খাদ্যাভ্যাস আমদের ধারণার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সঠিক খাবার চুলের বৃদ্ধির জন্য জাদুর মত কাজ করে।
ডিমঃ
আপনার খাদ্যাভ্যাস থেকে ডিম বাইরে রাখা সম্ভবই না। প্রায় যত প্রয়োজনীয় নিউট্রিয়েন্টস আছে, সবই ডিমে উপস্থিত। বায়োটিন, ভিটামিন ডি এবং আমিষ যেগুলো চুলের জন্য খুবই দরকার, সবই আছে ডিমে।
মাছঃ
যেসব মাছ ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডে ভরপুর যেমন স্যামন, ম্যাকারেল এবং হেরিং- এসব মাছ চুলের বৃদ্ধির জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
বাদামঃ
আপনার চুলের প্রয়োজন জিংক, ভিটামিন বি এবং বিভিন্ন ফ্যাটি এসিড যে কারণে যত চুল বাড়ার উপায় সামনে আসে, সব জায়গায়ই বাদাম এর কথা উল্লেখ থাকে। বিভিন্ন ধরনের বাদাম খান, বিশেষ করে কাঠবাদাম।
মাংসঃ
মুরগি এবং টার্কির মাংস আমিষের বেশ ভালো উৎস এবং সেই সাথে আপনার চুলের জন্য প্রয়োজনীয় আমিষের যোগান দেয়।
এসব খাদ্যের পাশাপাশি খাবারে পালং শাক এবং এভোকাডো রাখার চেষ্টা করুন কেননা এরা ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন, জিংক এবং ভিটামিন ই এর মত ভিটামিন এবং খনিজের উৎস।
২. স্ক্যাল্প ম্যাসাজ
নিয়মিত স্ক্যাল্পে ম্যাসাজ আপনার চুলের ঘনত্ব বাড়াতে পারে এবং দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে, যেটি আপনার চুল বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।
৩. চুলে তেল দেয়া
চুলে তেল দেবার গুরুত্ব বলে শেষ করা যাবে না। প্রাকৃতিকভাবে চুল পুনরায় গজানোর জন্য চুলে অবশ্যই তেল দেয়া দরকার। বিভিন্ন ধরনের তেল প্রাকৃতিক উপায়ে চুল গজানোর তালিকায় শীর্ষস্থান দখল করে আছে।
নারিকেল তেলঃ
এটি চুল পড়া সমস্যায় বহু প্রাচীন এক সমাধান। ঈষদুষ্ণ নারিকেল তেল দিয়ে ম্যাসাজ চুলের গোড়া মজবুত করে, চুলে পুষ্টি যোগায় এবং চুলের বৃদ্ধি করে।
অলিভ অয়েলঃ
বহুমুখী ব্যবহার উপযোগী এই তেলে রয়েছে ওলেইক এসিড, এন্টি-অক্সিড্যান্টস এবং ভিটামিন ই , যেগুলো চুলের বেড়ে ওঠার জন্য দরকারি। এটির ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য আপনার চুলকে রাখে চকচকে এবং সুন্দর!
ল্যাভেন্ডার অয়েলঃ
এই তেল আপনার হেয়ার ফলিকলে উদ্দীপনা যোগায় এবং চুল বৃদ্ধি করে। এছাড়াও এটি সিবাম অয়েল উৎপাদন এর ভারসাম্য বজায় রাখে। এটি দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিতেও সহায়তা করে।
আলমন্ড অয়েলঃ
ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডে ভরপুর অলিভ অয়েল চুল এর ক্ষতি হওয়া এবং ভাঙ্গা থেকে রক্ষা করে। তাছাড়া এটি দ্রুত চুল বৃদ্ধি করে।
জোজোবা অয়েলঃ
যাদের খুশকি সমস্যা এবং শুষ্ক স্ক্যাল্প আছে, তাদের জন্য এই তেলটি ভালো পছন্দ। এটি চুল পুনরায় গজাতে সাহায্য করে এবং চুল পড়া অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
ক্যাস্টর অয়েলঃ
চুল ঘন করার জন্য অন্যতম সেরা একটি তেল এবং চুলের বৃদ্ধির যেকোনো টিপসে এটি থাকে। অন্য কোনো তেল যেমন নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েলের সাথে মিশিয়ে স্ক্যাল্পসহ পুরো মাথায় প্রয়োগ করুন। এক ঘন্টা পর মৃদু প্রকৃতির শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
৪. এলো ভেরা
স্ক্যাল্পে এলো ভেরা প্রয়োগে আপনার আরাম অনুভূত হবে। এটি আপনার স্ক্যাল্প স্কিনের খুশকি এবং অন্যান্য অস্বস্তি থেকে মুক্তি দেয়। এছাড়া এটি তেল দিয়ে বন্ধ হওয়া ফলিকল খুলে দেয় যেটি চুল বাড়তে সহায়তা করে।
৫. লেবু
লেবু আপনার স্ক্যাল্পকে পরিষ্কার রাখে। লেবুর রস অথবা তেল, উভয়ই চুল বৃদ্ধি করে এবং স্ক্যাল্প সুস্থ রাখে। চুলে শ্যাম্পু দেবার আগে লেবুর রস লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট রাখুন এবং এরপর ধুয়ে ফেলুন।
৬. পেঁয়াজ
প্রাকৃতিক উপায়ে চুল বাড়াতে আরেকটি কার্যকর উপায়, যেটি সহজলভ্য এবং আমাদের কাছে সুপরিচিত। পেঁয়াজের রস মাথায় লাগালে চুলের ঘনত্ব বাড়ার সাথে সাথে চুলের বৃদ্ধি ও হয়।
৭. আদা
আমরা প্রায়ই চুলের যত্নে আদাকে রাখি না। কিন্তু এটি এন্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এবং এন্টিফাংগাল, এন্টিমাইক্রোবায়াল বৈশিষ্ট্যের অধিকারী।
কিছু পরিমাণ আদার রসের সাথে নারিকেল তেল বা জোজোবা অয়েল মেশান। মিশ্রণটি আপনার স্ক্যাল্পে এবং চুলে আস্তে আস্তে লাগান। মৃদু প্রকৃতির শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলার আগে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। এটি আপনার স্ক্যাল্পকে সুরক্ষা দেয় এবং চুলের বৃদ্ধির জন্য কম পরিচিত এক প্রাকৃতিক উপায়।
৮. গ্রিন টি
আপনি এটি চা হিসেবে পান করতে পারেন অথবা হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন, গ্রিন টি আপনার চুলের জন্য একই রকম উপকারিতা দিবে। গ্রিন টি চুল পড়া প্রতিরোধ করে এবং পুনরায় গজাতে সাহায্য করে।
এটি চুলের বৃদ্ধির জন্য অন্যতম সেরা এবং সহজলভ্য ঘরোয়া একটি উপায়। দুই টেবিল-চামচ গ্রিন টি, ১ টি ডিমের কুসুম, ১ টেবিল-চামচ নারিকেল তেল এবং ১ টেবিল-চামচ অলিভ অয়েল নিয়ে একত্রে ভালমত মেশান এবং মাস্কটি স্ক্যাল্পে এবং চুলে প্রয়োগ করুন। ২০ মিনিটের মত রাখুন এবং এরপর মৃদু প্রকৃতির শ্যাম্পু দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেলুন।
৯. আমলকি
চুল প্রাকৃতিকভাবে কিভাবে পুনরায় গজানো যায় এটা নিয়ে ভাবার সময় প্রায়ই আমরা আমলকির কথা ভুলে যাই। এটিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি এবং প্রাকৃতিকভাবে চুলের বৃদ্ধিতে অন্যতম সহজলভ্য এক উপায়।
কিছু পরিমাণ আমলকি গুঁড়ো নিয়ে হালকা গরম করা নারিকেল তেলে মেশান। মিশ্রণটি আপনার চুলে এবং স্ক্যাল্পে প্রয়োগ করুন। মাথা ধুয়ে ফেলার আগে ১ ঘন্টা রাখুন ।
এটি আপনার খুশকির সমস্যা দূর করতে এবং চুল প্রাকৃতিক উপায়ে পুনরায় গজাতে সহায়তা করবে।
১০. ব্যায়াম এবং ঘুম
নিয়মিত ব্যায়াম এবং ভালো ঘুমের গুরুত্ব চুল পুনরায় গজানোর ক্ষেত্রে এবং বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অনেক। নিয়মিত ব্যায়াম আমাদের স্ক্যাল্পে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে এবং আমাদের দুশ্চিন্তা কমায়। এবং এগুলোর মাধ্যমে চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
পরিশেষ
চুল ভেজা থাকা অবস্থায় না আঁচড়ানো, গরম পানি দিয়ে চুল না ধোয়া কেননা এটি স্ক্যাল্পকে শুষ্ক করে তোলে এমন ছোটখাটো কিছু জিনিস মেনে চলার পাশাপাশি আমাদের দেয়া টিপস অনুসরণ করে প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় আপনার চুল গজানোর পাশাপাশি চুলকে বানান আরো উজ্জ্বল, আরো আকর্ষনীয়!
সাধারণ জিজ্ঞাসা
প্রশ্নঃ প্রাকৃতিকভাবে পুনরায় চুল গজানো সম্ভব কি?
উত্তরঃ সুষম খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং ঘরোয়া উপায়ে চুল বৃদ্ধির উপায়গুলি প্রাকৃতিকভাবে চুল গজানোর উপায়ের মাঝে পড়ে। এগুলোর মাধ্যমে পুনরায় চুল গজানো সম্ভব।
প্রশ্নঃ চুল কিভাবে দ্রুত পুনরায় গজাতে পারে?
উত্তরঃ যদি আপনার হেয়ার ফলিকলের ক্ষতি না হয়ে থাকে, তবে ভালো হেয়ার রুটিন মেনে চললে, সুষম খাদ্যাভ্যাস থাকলে দ্রুতই চুল গজিয়ে যাবে। এছাড়াও আমাদের দেয়া টিপস অনুসরণ করে চুল আরো দ্রুত গজানো যায়!
প্রশ্নঃ আমার চুল কিভাবে দ্রুত বাড়ানো এবং ঘন করা যায়?
উত্তরঃ ক্যাস্টর অয়েল এবং নারিকেল তেলের মিশ্রণ স্ক্যাল্পে প্রয়োগ করুন এবং এক ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। তাছাড়া সুষম খাদ্যাভ্যাস ও এটিতে সহায়তা করে।
প্রশ্নঃ চুল পাতলা হয়ে যাওয়া রোধ করা যায় কি?
উত্তরঃ হ্যাঁ, যথাযথ হেয়ার রুটিন এবং চুল বৃদ্ধির টিপস এর মাধ্যমে চুলের ঘনত্ব বাড়ানো যায়।
প্রশ্নঃ নারিকেল তেল কি চুল বাড়তে সহায়তা করে?
উত্তরঃ হ্যাঁ, নারিকেল তেল স্ক্যাল্প এবং চুলের এর উন্নতি সাধন করে এবং চুল গজাতে এবং বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
প্রশ্নঃ কোন ঘরোয়া উপায়ের ব্যবহারে আমার চুল দ্রুত বৃদ্ধি পাবে?
উত্তরঃ বেশ কিছু ঘরোয়া উপায়ই আপনি ব্যবহার করতে পারেন। উপরে উল্লেখিত ঘরোয়া উপায়গুলোর মাঝে সেরা পরামর্শ টা অনুসরণ করুন চুলের দ্রুত বৃদ্ধির জন্য।
তথ্যসূত্রঃ
https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/hairline-restoration#clinical-treatments
https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/hairline-restoration#clinical-treatments
https://www.medicalnewstoday.com/articles/320155
https://www.healthline.com/nutrition/foods-for-hair-growth#TOC_TITLE_HDR_10
https://www.femina.in/beauty/hair/12-best-oils-for-hair-growth-thickness-113509.html
https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/coconut-oil-for-hair-growth#for-the-hair
[sc name=”10-tips-to-naturally-regrow-your-hair-bn”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।