শীতে ঘরোয়া পদ্ধতিতে নারিকেল তেলের সাহায্যে যেভাবে খুশকি দূর করবেন
- শীতকালে খুশকি খুবই কমন একটি সমস্যা।
- নারিকেল তেল খুশকি দূর করতে হতে পারে আপনার প্রিয় বন্ধু কারণ এতে রয়েছে অ্যন্টি ইনফ্ল্যামাটরি বৈশিষ্ট্য যা খুশকি দূর করতে সহায়ক।
- ঘরোয়া পদ্ধতিতে নারিকেল তেলের সাথে অন্যান্য উপকারি উপাদান যেমন দই, রোজম্যারি এসেনশিয়াল অয়েল, মেথি, কর্পূর, টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল ইত্যাদি মিশিয়ে ব্যবহার খুশকি দূর করতে সহায়ক।
মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে সাদা গুড়ো গুড়ো এক ধরনের যে স্তর তৈরি হয় তাকে আমরা খুশকি বলি। বেশিরভাগ মানুষই এই খুশকির সমস্যায় ভোগেন। এটাও ঠিক যে বেশিরভাগ মানুষই এই সমস্যার তেমন কোনো সমাধান নিয়ে ভাবেন না। তবে নারিকেল তেলের সাহায্যে ঘরোয়া পদ্ধতিতে সহজেই এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
নারিকেল তেল কীভাবে খুশকির সমাধান হতে পারে তার আগে চলুন জেনে নিই খুশকির মূল কারণ কী কী। ম্যালাসেজিয়া নামক ফাঙ্গাসকেই খুশকির প্রাথমিক কারণ হিসেবে দায়ী করা হয়। ফাঙ্গাস ত্বকের প্রাকৃতিক তেলের পরিমাণ নষ্ট করে দেয়। সমস্যা শুরু হয় যখন মাথার ত্বকে ফাঙ্গাসের পরিমাণ বেড়ে যায়। কারণ এটি মাথার ত্বকে ওলিক এসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় ফলে মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় আর খুশকি বেড়ে যায়। তৈলাক্ত ত্বক খুশকির অন্যতম প্রধাণ একটি কারণ। অন্যান্য কারণগুলো হল ত্বকের শুষ্কতা, ধুলো-ময়লা, অতিরিক্ত চুল ধোয়া, কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য ব্যবহার ইত্যাদি।
এখন প্রশ্ন হল নারিকেল তেলকে কেন খুশকির প্রাকৃতিক প্রতিরোধক বলা হয়? কারণ এতে খুশকি প্রতিরোধের জন্য প্রাকৃতিক কিছু বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। একটি সমীক্ষায় দেখে গেছে নারিকেল তেল প্রাপ্তবয়স্কদের ত্বক থেকে একজিমা ও ফাঙ্গাস দূর করতে সাহায্য করে। খুশকি জন্মের প্রধান কারণ যেহেতু ফাঙ্গাস, তাই নারিকেল তেল সহজেই ফাঙ্গাস জন্ম প্রতিরোধ করতে পারে। নারিকেল তেলে রয়েছে লরিক এসিড যা এন্টিমাইক্রোবিয়াল, তাই এটিও ফাঙ্গাস দূর করতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। এবং সবশেষে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল নারিকেল তেলে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামাটরি বৈশিষ্ট্য সোরিয়াসিস সহ মাথার ত্বকের অন্যান্য রোগ নিরাময় করতে দারুণ কার্যকর। খুশকির কারণে মাথায় চুলকানি ও ইরিটেশন হতে পারে। ভার্জিন কোকোনাট অয়েলে রয়েছে ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ই ও ভিটামিন কে যা খুশকি দূর করতে কার্যকর।
নারিকেল তেল খুশকি দূর করতে কীভাবে ব্যবহার করবেন? ঘরোয়া পদ্ধতিতে নারিকেল তেলের সাথে অন্যান্য উপকারি উপাদান যেমন দই, রোজম্যারি এসেনশিয়াল অয়েল, মেথি, কর্পূর, টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল ইত্যাদি। খুশকির জন্য ভার্জিন কোকোনাট অয়েল বেশি ভালো কারণ এতে কোনো রাসায়নিক পদার্থ থাকে না এবং পরিশোধিতও নয়, একদম প্রাকৃতিকভাবেই খুশকি নিরাময় করতে সাহায্য করে। তবে সাধারণ নারিকেল তেল ব্যবহার করলে কিছু রেসিপি আছে যা দিয়ে সহজেই আপনার খুশকিমুক্ত হতে পারবেন।
১। নারিকেল তেল দিয়ে ডিপ কন্ডিশনিং:
কন্ডিশনিং হেয়ার ট্রিটমেন্টের জন্য চুল শুধু শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে নিন। তারপর হাতের তালুতে অল্প পরিমাণ নারিকেল তেল নিয়ে চুলে লাগিয়ে নিন। শাওয়ার ক্যাপ বা হালকা গরম তোয়ালে চুল পেচিয়ে নিন। ৩০ মিনিট পর আবারো শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
২। নারিকেল তেলের হট অয়েল মাসাজ:
খুশকির অন্যতম মূল কারণ হচ্ছে মাথার ত্বকের শুষ্কতা। নিয়মিত নারিকের তেল মাসাজ করলে মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর হয়, মাথার ত্বকে ময়েশ্চার ব্যালেন্স নিশ্চিত হয় এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে যা খুশকি দূর করতে দারুণ সাহায্য করে থাকে। এ জন্য হট অয়েল মাসাজের ক্ষেত্রে তেল চুলায় নিয়ে সামান্য গরম করে নিন। তারপর আপনার মাথার ত্বকে ভালোভাবে আঙুলের সাহায্যে মাসাজ করুন। চুলের গোড়ায় গোড়ায় খুব ভালোভাবে ১৫-২০ মিনিট ধরে মাসাজ করুন। ৩০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।
৩। নারিকেল তেল ও লেবুর রস:
২ চা চামচ লেবুর রস ও ২ চা চামচ নারিকেল তেল ভালোভাবে মিশিয়ে হালকা গরম করে নিন। মিশ্রণটি মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে ১০-১৫ মিনিট মাসাজ করুন। ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে এক থেকে দুইবার করলে খুব কার্যকর ফলাফল পাওয়া যাবে।
৪। নারিকেল তেল, অলিভ অয়েল ও দই:
২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল, মধু এবং অলিভ অয়েল নিন। সাথে নিন ৩ টেবিল চামচ দই। ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর আঙুলের সাহায্যে ৫-১০ মিনিট মাথার ত্বকে পেস্টটি মাসাজ করুন। ৪৫-৬০ মিনিট অপেক্ষা করে মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। পেস্টটি মাথা থেকে ধুয়ে ফেলতে একটু সমস্যা হতে পারে তাই বারবার পানি দিয়ে ধুয়ে নিন।
৫। নারিকেল তেল এবং রোজম্যারি/জোজোবা অয়েল:
এটি ঠিক আগের পদ্ধতিতে ব্যবহার করুন। নারিকেল তেলের সাথে রোজম্যারি বা জোজোবা অয়েল মিশিয়ে নিয়ে মাথায় ভালোভাবে মাসাজ করে শাওয়ার ক্যাপ দিয়ে ঢেকে রাখুন। ৩০ মিনিট পর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
নারিকেল তেল খুশকি দূর করতে হতে পারে আপনার প্রিয় বন্ধু। এটি মাথার ত্বকে চুলকানি ও ফাঙ্গাস ইনফেকশন দূর করে, মাথার ত্বকের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, চুল পড়া বন্ধ করতে সাহায্য করে, প্রোটিন লস কমায়, এবং মাথার ত্বকে ময়েশ্চার ব্যালেন্স নিশ্চিত করে। নারিকেল তেল ব্যবহারের পরেও যদি আপনার খুশকি দূর না হয়, তবে আপনার ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
সাধারণ প্রশ্ন:
১। চুলকে খুশকিমুক্ত রাখতে নারিকেল তেলের সাথে কী মিশিয়ে ব্যবহার করবো?
ঘরোয়া পদ্ধতিতে নারিকেল তেলের সাথে অন্যান্য উপকারি উপাদান যেমন দই, রোজম্যারি এসেনশিয়াল অয়েল, মেথি, কর্পূর, টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল ইত্যাদি মিশিয়ে শীতকালে খুশকি দূর করার জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
২। খুশকি দূর করার জন্য নারিকেল তেল কী ভালো?
শীতকালীন চুল পরিচর্যার রুটিন হিসেবে খুশকির জন্য নারিকেল তেল, জোজোবা, রোজম্যারি ইত্যাদি ব্যবহার করা যায় কারণ এই উপাদানগুলোতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামাটরি এবং ময়েশ্চারাইজিং বৈশিষ্ট্য যা খুশকি দূর করতে দারুণ সহায়ক।
৩। খুশকি দূর করতে কোন তেল ভালো?
নারিকেল তেলে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামাটরি ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য, এটি খুশকি দূর করার জন্য আয়ুর্বেদিক উপাদান হিসেবে খুবই উপকারি।
৪। নারিকেল তেল কী খুশকি বাড়িয়ে দেয়?
না, নারিকেল তেল মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর করে, ময়েশ্চারাইজ করতে সাহায্য করে এবং এভাবে মাথার ত্বক খুশকি মুক্ত হয়।
৫। খুশকি থেকে চিরতরে মুক্তি পাবো কীভাবে?
খুশকি দূর করতে নারিকেল তেলের সাথে অন্যান্য উপকারি উপাদান যেমন দই, রোজম্যারি এসেনশিয়াল অয়েল, মেথি, কর্পূর, টি ট্রি এসেনশিয়াল অয়েল ইত্যাদি মিশিয়ে ব্যবহার করলে চিরতরে খুশকি মুক্ত থাকতে পারবেন।
৬। নারিকেল তেল কখন কখন ব্যবহার করব?
সবচেয়ে ভালো ফলাফলের জন্য বিশেষজ্ঞ মতে খুশকি দূর করতে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার নারিকেল তেল ব্যবহার করুন।
Reference:
https://thestatesman.com/lifestyle/winter-secrets-strong-healthy-hair-1502824106.html
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।