এই গরমে কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে সানস্ক্রিন তৈরি করবেন
UV- রশ্মির ঝুঁকি দিন দিন বেড়েই চলছে । আর ওজোন স্তর এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, UV- রশ্মি এখন সরাসরি মানুষের ত্বকের ক্ষতি করছে।
এমন ক্ষতিকর রশ্মি থেকে আপনার ত্বক কে রক্ষা করতে চাইলে, সানস্ক্রিন এর কোনো বিকল্প নেই। সানস্ক্রিন ক্ষতিকর রশ্মি গুলো কে ব্লক করে আপনাকে সানবার্ন থেকে রক্ষা করবে।
যাই হোক, প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরি সানস্ক্রিন কিন্তু সবসময়ে ভাল ফলাফল দেয়।এটি আপনি আপনার ঘরে বসেই বানিয়ে ফেলতে পারবেন। তাহলে চলুন জেনে নিন, এই গরমে কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে সানস্ক্রিন তৈরী করবেন-
স্কিন ক্যান্সার হতে শুরু করে সাধারণ ট্যান থেকে আপনার সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই আমাদের আজকের আয়োজন। আমরা আপনাদের সামনে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরী একটি কার্যকরী রেসিপি তুলে ধরব। যা আপনি ঘরে বসেই তৈরি করতে পারবেন।
চলুন তাহলে, তৈরি করে ফেলি-
এই গরমে কিভাবে ঘরোয়া উপায়ে সানস্ক্রিন তৈরী করবেন
মুখের জন্য, ঘরে তৈরি প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হল সবচেয়ে কার্যকরী। তাই সেরা ফলাফল পেতে চাইলে যথাসম্ভব অর্গানিক উপাদান ব্যবহার করুন।
ঘরোয়া উপায়ে সানস্ক্রিন তৈরি করার জন্য অনেক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান ও নানারকম রেসিপি রয়েছে।তবে আমরা এমন কিছু রেসিপি তুলে ধরব যা আপনার জন্য খুবই উপকারী হবে।
সানস্ক্রিন রেসিপি (অ্যালোভেরা/ নারকেল তেলের সানস্ক্রিন)
মানুষের ত্বকে যেসব প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা হয় তার মধ্যে অ্যালোভেরা অনেক বেশি জনপ্রিয়। রোদে পুড়ে যাওয়া ত্বকের চিকিৎসা ও সুরক্ষার জন্য অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যায়। আর নারকেল তেলের সাথে মেশানো হলে এটি দারুণ একটি অর্গানিক সানস্ক্রিনের কাজ করে।
উপাদান
- নারকেল তেল (১/৪ কাপ)
- অ্যালোভেরা জেল (১/৪ কাপ)
- জিঙ্ক অক্সাইড (২ চা চামচ বা বেশি)
- অতিরিক্ত তেল- ওয়ালনাট (২৫ ফোঁটা)
- শেয়া বাটার (সর্বোচ্চ ১ কাপ)
- মাঝারি সাইজের মিক্সার বাটি (লক্ষ রাখবেন একে তাপ দেয়া যাবে কিনা)
- একটি পাত্র
ধাপ-১
প্রথমত, মিক্সিং বাটিটি নিয়ে নিন। অ্যালোভেরা জেল আর জিঙ্ক অক্সাইড বাদে সব উপাদান গুলো বাটিতে নিন। লক্ষ রাখবেন, যেন প্রতিটি উপাদান সঠিক পরিমাণে থাকে।
ধাপ-২
তেল গুলো এবং সিয়া বাটার অল্প আচেঁ মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি কে বার বার নাড়তে ভুলবেন না কিন্তু। মিশ্রণটি কিন্তু একদম মসৃণ আর পাতলা হওয়া চাই।
ধাপ-৩
এরপর আমাদের মিশ্রণে অ্যালোভেরা জেল মেশাতে হবে। তবে মিশ্রণটি গরম থাকা অবস্থায় কিন্তু মেশানো যাবে না। মিশ্রণটিকে কিছু সময়ের জন্য ঠান্ডা হতে দিতে হবে। এরপর এতে অ্যালোভেরা মিশিয়ে নিতে হবে।
অ্যালোভেরা মেশানোর আগে কিছুক্ষণ ঠান্ডা হতে দিন।আর অ্যালোভেরা অবশ্যই ভালো করে নেড়ে নিতে হবে।
ধাপ-৪
মিশ্রণটি পুরোপুরি ঠান্ডা হয়ে গেলে এতে জিঙ্ক অক্সাইড মেশাতে হবে। জিঙ্ক অক্সাইড মেশানোর সময়ে খেয়াল রাখবেন যাতে পুরো মিশ্রণে সমানভাবে মিশে যায়। জিঙ্ক অক্সাইড রোদে পুড়ে যাওয়া থেকে আপনার ত্বক কে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।
ধাপ-৫
এখন আপনি দেখবেন যে, মিশ্রণটা যতটা আঠালো হবার কথা ততটা আঠালো হয় নি। তাই সমাধান পেতে এর সাথে চটচটে কোন উপাদান মিশ্রিত করতে হবে। এর ফলে একটি আঠালো মিশ্রণ তৈরি হবে। ঠিক যেমনটা হওয়া উচিত।
ধাপ-৬
এই পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করাও কিন্তু একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সানস্ক্রিনের ভাল ফলাফল পাওয়ার একে জন্য কাঁচের পাত্রে সংরক্ষণ করা উত্তম।
মিশ্রণটিকে একটি কাঁচের পাত্রে নিয়ে নিন এবং ঠান্ডা পরিবেশে সংরক্ষণ করুন।
তৈলাক্ত ত্বকের সমাধান
যারা তৈলাক্ত ত্বকের অধিকারী, সানস্ক্রিন নিয়ে তারা নানা রকম সমস্যয় পড়েন। সানস্ক্রিন ব্যবহারের আগে তারা দ্বিতীয় বার ভেবে নেন। আসলে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য এটা খুবই অস্বস্তিকর।
সৌভাগ্যক্রমে, এমন কিছু এসেনশিয়াল অয়েল আছে যেগুলো এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। এগুলো আপনার ত্বকের অতিরিক্ত তেল উৎপাদন হ্রাস করে। উপরে দেয়া রেসিপি থেকে আপনাকে শুধু একটি উপাদান অদলবদল করতে হবে।
নারকেল তেলের বদলে শুধু অন্য একটি ক্যারিয়ার অয়েল ব্যবহার করতে হবে। এটা হতে পারে বাদামের তেল কিংবা জোজোবা অয়েল। নারকেল তেলের মতই জোজোবা অয়েল কিন্তু আপনার ত্বককে ময়েশ্চারাইজড রাখে।
তাছাড়া ত্বক তৈলাক্ত দেখালেও পোরস গুলো আর উন্মুক্ত হবে না। এটা থাকলে আপনার আর অন্য সানস্ক্রিন এর প্রয়োজনও পড়বে না।
সানস্ক্রিন ও সানব্লক নিয়ে ভুল ধারনা
অনেক আগে থেকেই সানস্ক্রিন আর সানব্লক নিয়ে মানুষের মধ্যে একটি ভুল ধারনা আছে। আসলে উপাদান ও ব্যবহারের ভিত্তিতে এই দুটি পরস্পরের থেকে একদমই আলাদা।
সানস্ক্রিন আপনার ত্বককে সুরক্ষা দিতে ব্যবহৃত হয়। আর অন্যদিকে সানব্লক ব্যবহৃত হয় সূর্যের রশ্মিকে প্রতিফলিত করতে । তাছাড়া সানস্ক্রিন আপনি বার বার ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু সানব্লক খুব একটা ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ এটা আপনার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
তাই, এরপর যদি কখনো কেউ আপনার কাছে মুখের জন্য সেরা সানব্লক সম্পর্কে জানতে চায়, তাদেরকে সত্যিটা জানার সুযোগ করে দিন।
প্রায়শই জিজ্ঞেসিত কিছু প্রশ্ন
প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন হিসেবে কোনটি ব্যবহার করা যায়?
প্রাকৃতিক সানস্ক্রিন তৈরি করার জন্য অনেক উপাদান রয়েছে। তবে সবচেয়ে কার্যকরী হল, নারকেল তেল, রেড রাসবেরী বীজের তেল, গাজরের বীজের তেল, গম অঙ্কুরের তেল, তিলের তেল এবং অ্যালোভেরা।
ঘরোয়া উপায়ে কিভাবে মুখের জন্য সানস্ক্রিন তৈরী করবেন?
এর জন্য আপনার দরকার
- ৫০ মিলিলিটার মিনারেল ওয়াটার,
- ১ চা-চামচ গ্লিসারিন,
- ১/২ চা চামচ সূর্যমুখীর তেল
- অথবা গ্লিসারিনের বদলে অ্যালোভেরা
- এই সব উপাদান গুলো একত্রে মিশ্রিত করে একটি লোশন তৈরি করুন।
- এরপর এতে ৩ থেকে ৪ চা চামচ জিঙ্ক অক্সাইড মিশিয়ে নিন
- ড্রাই স্কিন হলে, ভিটামিন-ই ও মিশিয়ে নিতে পারেন।
জিঙ্ক অক্সাইড ছাড়া কিভাবে সানস্ক্রিন তৈরী করা যায়?
সিয়া বাটার, নারকেল তেল, অ্যাভোকাডো অয়েল, বিসওয়াক্সের দানা একত্রিত করুন। এরপর হালকা আঁচে গরম করুন। সবগুলো একসাথে মিশিয়ে নিন এবং এগুলোকে ১৫ থেকে ৪৫ মিনিটের জন্য ফ্রীজে সংরক্ষণ করুন। এরপর গাজরের বীজের তেল ও রেড রাসবেরী বীজের তেল এর সাথে মেশান। যতক্ষণ পর্যন্ত একটি ক্রিমের মত মিশ্রণ তৈরি না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত নাড়তে থাকুন।
ঘরোয়া সানস্ক্রিন কতক্ষণ স্থায়ী থাকে?
সানস্ক্রিন এর স্থায়ীত্ব নির্ভর করে, আপনি ক্যারিয়ার হিসেবে কোন তেলটি ব্যবহার করছেন তার উপরে। তবে এটি কমপক্ষে ৬ মাস স্থায়ী হয়। তাছাড়া ঠান্ডা পরিবেশে সংরক্ষণ করলে আরো বেশি দিন ভাল রাখা সম্ভব।
শেষ কথা
আশা করি আপনি জানতে পেরেছেন, কিভাবে এই গরমে ঘরোয়া উপায়ে সানস্ক্রিন তৈরী করবেন। গরমের জন্য ঘরোয়া সানস্ক্রিন সবসময়েই স্বাস্থ্যকর সমাধান। তবে এর কিছু অপকারীতা ও আছে।
যদি আপনি একজন পেশাদার রসায়নবিদ হন। তাহলে আপনি বুঝতে পারবেন ঘরোয়া সানস্ক্রিন আপনার ত্বককে রক্ষা করতে কত ভাল কাজ করে।
তবে কিছু ভালো মানের বাণিজ্যিক সানস্ক্রিন রয়েছে যা আপনার ত্বকের জন্য খুবই কার্যকর হবে। কারণ এগুলো তে আপনার ত্বকের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো থাকে।
আসলে, যতদিন আপনি অর্গানিক প্রডাক্টস ব্যবহার করবেন, ততদিন আপনার ত্বক ও সুরক্ষিত থাকবে। আমরা আশা করি, কোনো রকম অস্বস্তিকর ট্যান ছাড়াই আপনি গ্রীষ্মের দিনগুলো উপভোগ করতে পারবেন।
সূর্যের আলোকে উপভোগ করুন, কারণ এই আনন্দ আপনার প্রাপ্য।
তথ্যসূত্র:
https://bumblebeeapothecary.com/diy-natural-sunscreen-recipe/
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।