তৈলাক্ত ত্বকের জন্য কার্যকরী হোম মেড ময়েশ্চারাইজার
উজ্জ্বলতা আমরা সবাই ভালোবাসি, কিন্তু যখন ত্বকের প্রসঙ্গ আসে, তখন আমরা পুরো মুখ জুড়ে সেই চকচকে ভাব চাই না। তৈলাক্ত ত্বক আছে এরকম কারও জন্য এটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু গরম যেহেতু চলে এসেছে আর তাপমাত্রাও বেড়ে গেছে; জেনেটিক্স যেরকম হোক এই ব্যাপারে আমরা কমবেশি ভুগতে পারি।
কেন তৈলাক্ত ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করা জরুরি?
ফেস ময়েশ্চারাইজিং স্কিনকেয়ার রুটিনের গুরুত্বপূর্ণ একটা ধাপ যেটা তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও খাটে। অনেকেই স্কিন অয়েলকে স্কিন হাইড্রেশন ভেবে ভুল করে। স্কিন অয়েলে সেবাম নামে একটা মোমের মতো অংশ থাকে যেটা বাইরের স্তরের সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সেবাশিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে আলাদা করা থাকে। অন্যদিকে স্কিন হাইড্রেশন এমন একটা প্রক্রিয়া যেখানে ত্বকের ত্বকের ভেতরে পানি ঢুকে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ও দৃঢ়তা রক্ষা করে। বাইরের উপাদান যেমন দূষণ, অতিবেগুনী রশ্মি, অতিরিক্ত আর্দ্রতা এবং কখনো কখনো বাড়তি ক্লিনসিং ত্বকের আর্দ্রতার স্তরের ক্ষতি করতে পারে,য একারণে ময়েশ্চার কমে যেতে পারে। ময়েশ্চারাইজার বাদ দিয়ে যদি কেমিক্যালযুক্ত কিছু ব্যবহার করা হয় তাহলে অয়েল গ্ল্যান্ড থেকে আরও বেশি তেল বের হবে। যথেষ্ট ময়েশ্চার ছাড়া ত্বকের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে এবং ত্বকে আরও বেশি জ্বালাপোড়া, সংক্রমণ, ভাজ পড়া, বলিরেখার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কীভাবে ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বককে সুরক্ষা দিতে পারে?
এটা ত্বকের ভাজ ঠেকায়: ডিহাইড্রেটেড স্কিন ত্বকে ভাজ হওয়া এবং ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া। ময়েশ্চারাইজেশন ত্বককে মসৃণ ও টানটান রাখতে সাহায্য করে।
ত্বককে সুরক্ষা দেয়: ময়েশ্চারাইজার মেক-আপ ও অন্যান্য প্রোডাক্টের ক্ষেত্রে নরম ও ডিফেন্সিভ লেয়ার হিসেবে কাজ করে।
চুলকানির অনুভূতি দেয়: ময়েশ্চারাইজেশন ত্বককে হাইড্রেট করে এবং ধোয়ার পর শরীরে নরম একটা অনুভূতি দেয়।
অ্যাকনে নিয়ন্ত্রণ করে: ময়েশ্চারাইজার ত্বকের পোরস মুক্ত করতে সাহায্য করে এবং অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ করে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ফেস ময়েশ্চারাইজার যেমন বাধ্যতামূলক, তেমনি ওয়াটার-বেজড ময়েশ্চারাইজার এবং নন কোমেডোজেনিক (মানে যেগুলো পোরস জমাট বাঁধায় ও অ্যাকনে উৎপাদন করে) ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করাই ভালো। কেমিক্যালি ফর্মুলেটেড ময়েশ্চারাইজার ত্বকের জন্য ভালো নাও হতে পারে। সেজন্য ঘরে তৈরি হোম মেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। এখানে খুব কম চেষ্টায় তৈরি এরকম কিছু হোমমেড ময়েশ্চারাইজারের নাম দেওয়া হলো।
১) গোলাপের পাতা দিয়ে তৈরি ময়েশ্চারাইজার
এই ময়েশ্চাইরাইজার তৈরির জন্য প্রথমে অল্প পরিমাণ গোলাপের পানি ও পাপড়ি একটা পটে নিন। এরপর সেখানে দুই টেবিলচামচ অ্যালোভেরা জুস নিয়ে মেশান ও ঠাণ্ডা হতে দিন। একটা এয়ারটাইট গ্লাস কন্টেইনারে এটা রেখে দিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করতে পারেন। গোলাপের পাপড়ি ও পানির ত্বকের পর অ্যান্টি-ফ্ল্যামেটরি প্রভাব আছে।
২) মিল্ক অলিভ অয়েল ময়েশ্চারাইজার
২/৩ কাপ দুধের সঙ্গে ২/৩ টেবিল চামচ লেবুর রস নিন এবং সেখানে ২/৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মেশান। দুধ ত্বককে নরম করে, অলিভ অয়েল পিএইচের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে ও পুরো লেমন জুস ত্বক থেকে ব্যাক্টেরিয়া কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বকের দাগ দূর করে। এটা ত্বকের জন্য সবচেয়ে প্রাকৃতিক ফেস ময়েশ্চারাইজারগুলোর একটি।
৩) বেসন, হলুদ ও টক দই
একটু হলুদের সঙ্গে টক দইয়ের সঙ্গে বেসন নিন। এই মিশ্রণটা ত্বকে দিন এবং না শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। ন্যাচারাল ফেস ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এটা ত্বককে নরম করে এবং বেসন বাড়তি তেলটা শুষে নেয়।
৪) কলা
কলায় প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ আছে যেটা ত্বকের রুক্ষতা দূর করে। একটা কলার পেস্ট নিয়ে পুরো মুখে দিন, ২০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন ও কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা স্কিন ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে এবং কলাতে থাকা ভিটামিন সি প্রাকৃতিকভাবে ত্বককে উজ্জ্বল করে।
৫) অ্যালো ভেরা
অ্যালো ভেরা ত্বককে শুধু ময়েশ্চারাইজারই করে না, একই সঙ্গে অতিবেগুনী রশ্মি থেকেও রক্ষা করে এবং ন্যাচারাল একটা হিউমেক্ট্যাক্ট হিসেবে কাজ করে। ১ টেবিল চামচ কারনাউবা ওয়াক্স, ২-৩ টেবিল চামচ জজবা অয়েল, ১ টেবিল চামচ পানি নিন। এই মিশ্রণটা স্টিম দিয়ে মেশান, ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য সময় দিন, দুই টেবিল চামচ অ্যালো ভেরা জেল দিন এবং ভালোমতো মেশান। এই ময়েশ্চারাইজার আপনার মুখ ও ঘাড়ে দিন।
৬) শসা
শসার জুস ভালো একটা ফেস ময়েশ্চারাইজার। এর অ্যান্টিঅক্সিডন্ট ত্বকের অকালে বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায় এবং ভিটামিন সি চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল দূর করে এবং ফোলা ভাব কমায়।
৭. মধু ও লেবু
লেবু একটা অ্যাস্ট্রিজেন্ট হিসেবে কাজ করে যেখানে মধু হচ্ছে এমন একটা ইমোলিয়েন্ট যেটা শুধু ময়েশ্চারাইজই করে না অ্যাকনেও প্রতিরোধ করে। লেবুর রস নিয়ে সেখানে মধু মেশান। এরপর সেই মিশ্রণ আপনার মুখ ও ঘাড়ে দিন। ১৫ মিনিট পর এটা ধুয়ে ফেলুন।
৮. নারিকেল তেল
নারিকেল তেলের জন্য ফেস ময়েশ্চাইজার খুব ভালো একটা মেক আপ রিমুভার হিসেবে কাজ করে এবং ভালো স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। এটা ত্বকের ভেতর ঢুকে এবং ত্বককে নরম ও মসৃণ রাখে। এটা ত্বক থেকে ময়লা দূর করে এবং জীবাণুমুক্ত করে। দুই টেবিল চামচ নারিকেল তেলের সঙ্গে চার টেবিল চামচ অ্যালু ভেরা, ১ টেবিল ভিটামিন ই এবং দুই টেবিল চামচ অ্যালমন্ড অয়েল দিন। প্রতিদিন গোসলের পর এটা ব্যবহার করলে ত্বক দাগ ও সূর্যরশ্মি থেকে রক্ষা করে।একই সঙ্গে ত্বককে শুষ্কতা থেকে রক্ষা করে। যাদের ত্বকের সমস্যা আছে তাদের জন্য এই ময়েশ্চাইজার বেশ ভালো।
তৈলাক্ত ত্বক ম্যানেজ করা বেশ চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু ঠিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক চিটচিটে ভাব ছাড়াই হাইড্রেটেড থাকবে। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করা। আপনি যদি অ্যালার্জিক কোনো সমস্যায় ভোগেন তাহলে সঙ্গে সঙ্গে একজন চিকিৎসক বা চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া উচিত।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন
কীভাবে আপনি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য হোমমেড ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন?
অয়লি স্কিনের জন্য হোম মেড ময়েশ্চাইজার ব্যবহার করা কঠিন কিছু নয়। এতে আপনার অনেক টাকা বাঁচতে পারে। তার ওপর এটা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ামুক্ত। অ্যালু ভেরা, নারিকেল তেল, গোলাপের পানি ও পাপড়ি, দুধ, অলিভ অয়েল, লেবু ও মধু ভালোভাবে মেশালে ঘরে তৈরি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
কীভাবে আপনি তৈলাক্ত তেল থেকে পুরোপুরি মুক্ত পাবেন?
নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করলে আপনার ত্বকে পোরস জমাট বাঁধে না। বাড়তি তেল দূর করার জন্য টিস্যু পেপারের বদলে ব্লটিং পেপার ব্যবহার করুন। মুখ ধোয়ার পর নন কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন, যেটা আপনার ত্বককে আর্দ্র রাখবে ও তৈলাক্তহীন ত্বক নিশ্চিত করবে।
ময়েশ্চারাইজার কি তৈলাক্ত ত্বক ঠেকায়?
ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে ও বাড়তি সেবাম নির্গমন ঠেকিয়ে মসৃণ, সুন্দর ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক নিশ্চিত করে।
তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো ময়েশ্চারাইজার কী?
মিল্ক, অলিভ অয়েল, গোলাপ পানি ও পাপড়ি, অ্যালু ভেরা, জজবা অয়েল, নারিকেল তেল, লেবু, মধু, কলা ও শসা ভালো ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
লেবু কি তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভালো?
লেবুতে যে সাইট্রিক এসিড থাকে সেটা অ্যাস্ট্রিনজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এটা কমলেক্সন বাড়ায় আর স্কিনকে টোনিং করে তেল নিয়ন্ত্রণ করে।
তথ্যসূত্র:
https://www.verywellhealth.com/do-i-need-a-moisturiser-if-i-have-oily-skin-15595
https://www.truselforganics.com/blogs/news/benefits-of-using-an-oil-free-moisturiser
https://skinkraft.com/blogs/articles/moisturiser-for-oily-skin
https://www.amitanni.in/2016/09/best-moisturisers-oily-acne-prone-skin.html
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।