বিশেষ দিনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন? অনুসরণ করুন এই ১০ দিন ব্যাপী ত্বকের যত্নের রুটিন এবং হয়ে উঠুন আরও আকর্ষণীয়
- আপনার দিনের শুরু এবং শেষ হউক সিটিএম (ক্লিনজিং, টোনিং, ময়শ্চারাইজিং) ক্রম অনুসরণের মাধ্যমে।
- ত্বকের মৃত কোষ ঝড়িয়ে ফেলতে সপ্তাহে ২ থেকে ৩ বার এক্সফলিয়েট করুন।
- রেটিনল ব্যবহার এর ক্ষেত্রে রাতের সময়টি বেছে নিন।
দৈনন্দিন জীবনের ক্লান্তি ও অবসাদ কি আপনার ত্বকে প্রতিফলিত হচ্ছে? কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই রয়েছে কোন বিশেষ উপলক্ষ?
উৎসবের আমেজে পরিপূর্ণ সমগ্র ফেব্রুয়ারি মাস। স্বাভাবিকভাবে, বিশেষ কোন উপলক্ষে আপনি নিজেকে সেরা রূপে দেখতে চাইতেই পারেন। কিন্তু আপনি কি আপনার ত্বককে সেভাবে প্রস্তুত করছেন? এটা ভেবে ভুল করবেন না যে ফাউন্ডেশন ও কন্সিলারের নিচে আপনার ত্বকের নির্জীবতা আড়াল করতে পারবেন। দুর্ভাগ্যক্রমে, কোন প্রকার মেকআপই সুস্থ ও সুন্দর ত্বকের পরিপূরক হতে পারে না।
সুতরাং, উৎসবের দিন গুলোতে নিজেকে অনন্য ভাবে পরিবেশনের জন্য আপনার উচিত আজ থেকেই প্রস্তুতি নেওয়া। সেজন্য আপনি আস্থা রাখতে পারেন নিম্নে উল্লিখিত ত্বকের যত্নের রুটিনটির উপর। এটি আপনার ত্বককে পুনরুজ্জীবিত করে বিয়ে কিংবা অন্য যে কোন অনুষ্ঠানে আপনাকে করে তুলবে আরও আকর্ষণীয়।
১০ দিনের ত্বকের যত্নের রুটিন
১. সকালে ও রাতে দুইবার ত্বকের পরিচর্যা করুনঃ প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিয়মমাফিক ত্বকের যত্ন নিন। সকালে ব্যবহার করুন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার এবং এসপিএফ ৩০+ সানস্ক্রিন। এই পণ্যগুলো দূষণের বিরুদ্ধে সারাদিন আপনার ত্বককে লড়াই করতে সহায়তা করবে।
তাছাড়া, প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে আপনার আপনার ত্বক পরিষ্কার করুন। এতে করে আপনার লোমকূপগুলো প্রশমিত হবে এবং আপনি ব্রণ থেকে রক্ষা পাবেন। সুতরাং, যতই ক্লান্ত হয়ে পড়ুন না কেন, সকালে এবং রাতে নিজের ত্বকের জন্য় কিছুটা সময় বের করুন। এসময় নিচের ধারাবাহিকতা মেনে চলুন-
- ক্লিনজারঃ আপনার ত্বকের ধরণ উপযোগী একটি মৃদু ক্লিনজার বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে নিয়ে প্রতিদিনের ত্বকের যত্নের রুটিনটি শুরু করুন। এতে করে আপনার ত্বক পরিষ্কার হয়ে উঠবে। মনে রাখবেন, যদি না আপনি পরিষ্কার ত্বকে স্কিনকেয়ার সামগ্রী প্রয়োগ করেন, তবে তা ফলপ্রসূ হবেনা।
কিন্তু, দিনে দু বারের বেশি মুখ ধুবেন না। তা নাহলে, আপনার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য ঠিক থাকবে না। তাছাড়া অতিরিক্ত মুখ ধুলে আপনার মুখ থেকে প্রয়োজনীয় তেলগুলোও কমে যাবে।
- টোনারঃ অনেকের মতে টোনার ব্যবহার না করলেও চলে। তবে প্রকৃতপক্ষে, টোনার ব্যবহারের মাধ্যমে আপনার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্য বজায় থাকে। এছাড়াও, এটি আপনার মুখ থেকে অবশিষ্ট ময়লা দূর করতে সাহায্য করে।
মনে রাখবেন, সর্বদা অ্যালকোহল মুক্ত টোনার ব্যবহার করা উচিত। অন্যথায়, এটি আপনার ত্বককে শুষ্ক করে তুলতে পারে।
- ময়েশ্চারাইজঃ আপনার ত্বকের ধরণ যা-ই হোক না কেন, সকলের জন্যই ময়েশ্চারাইজিংয়ের গুরুত্ব অপরিসীম। ভালো ময়েশ্চারাইজারের অভাবে আপনার ত্বক অতিরিক্ত তেল উৎপাদন করে। এতে করে, আপনার তৈলাক্ত ত্বক আরও বেশি তৈলাক্ত দেখায়। আর যদি আপনি শুষ্ক ত্বকের অধিকারী হন, ময়েশ্চারাইজিংয়ের অভাবে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে আরও শুষ্ক এবং সময়ে অসময়ে ত্বকের মৃত কোষগুলো দৃশ্যমান হয়ে থাকবে।
২. আই ক্রিম ব্যবহার করুনঃ আপনার চোখের আশেপাশের অংশগুলোর বাড়তি যত্ন নেওয়া উচিত কারণ এ অংশের চামড়া সবচেয়ে বেশি পাতলা হয়ে থাকে। যদি আপনার চোখের নিচে কালি থাকে, তবে রেটিনল এবং ভিটামিন সি-যুক্ত আইক্রিম ব্যবহার করুন। এ উপাদান গুলো ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধি করে ত্বকের পুরুত্ব বাড়াবে। ফলে আপনার চোখের আশেপাশের ত্বক হয়ে উঠবে স্বাস্থ্যকর ও উজ্জ্বল।
৩. সানস্ক্রিন ব্যবহারে মনযোগী হউনঃ দিনের বেলা সানস্ক্রিন না লাগিয়ে বাইরে যাবেন না। সানস্ক্রিন আপনার ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে রক্ষা করে। এতে করে, সহজেই আপনার ত্বকে বয়সের ছাপ বোঝা যায়না। কখনোই এসপিএফ ৩0 এর কম সানস্ক্রিন বেছে নেবেন না।
৪. এক্সফোলিয়েটঃ এক্সফোলিয়েশন আপনার ত্বকের মৃত কোষগুলো দূর করে ত্বকের নতুন স্তর অনাবৃত করে। ফলস্বরূপ, আপনি হয়ে ওঠেন লাবণ্যময়ী। তবে কখনোই সপ্তাহে দুই থেকে তিনবারের বেশি এক্সফোলিয়েট করতে যাবেন না। অন্যথায়, এটি আপনার ত্বকের জন্য হানিকারক হবে।
৫. বেশি বেশি পানি পান করুনঃ ত্বকের যত্নের পাশাপাশি আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়াও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যখন আপনি আপনার স্বাস্থ্যের যত্ন নেবেন, তখন তা আপনার ত্বকেও প্রতিফলিত হবে। সুতরাং, প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ গ্লাস পানি পান করুন। এটি আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে আপনাকে করে তুলবে দীপ্তিময়ী।
৬. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন: যথেষ্ট ভাবে ঘুম না হলে চেহারায় শ্রান্তির ছাপ দেখা দেয়। শুধু তাই নয়, এটি আপনার ত্বকের পিএইচ ভারসাম্যও নষ্ট করে। সুতরাং, আপনি যদি স্বাস্থ্যকর ত্বকের অধিকারী হতে চান, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান।
৭. ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহার করুনঃ ১0 দিনের মধ্যে আপনার চেহারায় দীপ্তিময় আভা পেতে প্রাকৃতিক উপাদান সমৃদ্ধ ত্বকের যত্নের রুটিন মেনে চলুন। একটি ভাল ফেস প্যাক ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি ত্বকের বিভিন্ন রকম দাগ দূর করতে সক্ষম হবেন। ত্বকের প্রভা বাড়ানোর জন্য হলুদ, মধু, লেবু, কফি, আলু ইত্যাদি ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
তবে মুখের সর্বত্র প্যাক গুলো লাগানোর আগে অবশ্যই অল্প কিছু অংশে লাগিয়ে দেখুন। কেননা, প্রতিটি উপাদান আপনার ত্বকের জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে।
৮. ব্যায়াম করুনঃ আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দিতে নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। ঘাম ঝরানোর মাধ্যমে আপনার লোমকূপগুলো পরিষ্কার হয়। এতে করে আপনি হয়ে উঠবেন দ্যুতিময়। তবে ব্যায়াম না করতে চাইলে আপনি সউনাতেও যেতে পারেন।
উৎসবের আমেজে নিজেকে রাঙিয়ে নিতে এই সহজ ত্বকের যত্নের নিয়মগুলো অনুসরণ করুন। এতে করে ১০ দিনের মধ্যেই আপনি হয়ে উঠতে পারেন আরও বেশি মনোরম। কিন্তু এই পদক্ষেপ গুলো নিয়মিত চর্চা করতে হবে। অন্যথায়, রাতারাতি পরিবর্তন আশা করাটা হবে বোকামি।
সাধারণ জিজ্ঞাস্য প্রশ্ন সমূহ
১. প্রতিদিনের ত্বকের যত্নের রুটিনটি কেমন হওয়া উচিত?
- দিনে দুবার সিটিএম পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে, প্রথমে মৃদু ক্লিনজার দিয়ে আপনার মুখ পরিষ্কার করুন। তারপরে টোনার লাগান। অবশেষে আপনার মুখ ময়েশ্চারাইজ করুন।
২. কীভাবে আমি আমার ত্বকের জন্য উপযুক্ত রুটিনটি খুঁজে পাব?
- মানানসই ত্বকের যত্নের রুটিন পেতে হলে আপনার ত্বকের ধরণটি অবশ্যই জানতে হবে। শুষ্ক ত্বকের অধিকারীদের জন্য যা দুর্দান্ত কাজ করে, তৈলাক্ত বা মিশ্র ত্বকের জন্য তা অনেকসময় ক্ষতিকারক হতে পারে। তাই, প্রথমেই আপনার ত্বকের ধরণ জানুন এবং তারপর সেই অনুযায়ী কাজ করুন।
৩. কোন সময়ে আপনার ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত?
- আপনার অবসরের উপর নির্ভর করে দিনের যে কোনও সময়ে আপনি ত্বকের যত্ন নিতে পারেন। তবে ত্বকের যত্নের জন্য সেরা সময় হল সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে। যেকোনো সময়ে আপনি মুখে বিভিন্ন ফেস প্যাক লাগাতে পারেন। কিন্তু কোনমতেই সকাল এবং রাতের সিটিএম রুটিনটি বাদ দেওয়া যাবে না।
৪) আমার ত্বকের যত্নের রুটিনটি কোথা থেকে শুরু করব?
- ত্বকের যত্নের প্রথম ধাপটি হওয়া উচিত একটি ভালো মানের ক্লিনজার বা ফেস্ ওয়াশ দিয়ে মুখ ধোওয়া।
৫. কীভাবে আমি আমার ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে পারি?
- সবসময় আপনার ত্বকের যত্নের রুটিনটি মেনে চলুন, প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন, সুষম ডায়েট বজায় রাখুন, প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমান এবং প্রতিদিন ব্যায়াম করুন।
১০. আমি কীভাবে 10 দিনের মধ্যে লাবণ্যময়ী হতে পারি?
- প্রতিদিন দুবার সিটিএম পন্থায় ত্বকের যত্ন নিন, প্রচুর শাক সবজি খান এবং পানি পান করুন, কিছু ঘরোয়া ফেস প্যাক ব্যবহার করুন এবং দিনের বেলা বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন প্রয়োগ করুন। এই সহজ পদ্ধতিগুলো অবলম্বন করে ১0 দিনের মধ্যে আপনি হয়ে উঠবেন অসাধারণ দীপ্তিময়ি।
তথ্যসূত্র:
https://stylesatlife.com/articles/how-to-get-glowing-skin-in-10-days/
https://www.goodhousekeeping.com/beauty/anti-aging/a24790/skin-care-routine/
https://pharmeasy.in/blog/simple-home-remedies-for-glowing-skin/
https://skinkraft.com/blogs/articles/how-to-get-glowing-skin
[sc name=”getting-ready-for-your-special-day-here-is-your-10-day-skin-care-routine-to-look-best-bn”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।