পারফেক্ট ময়েশ্চারাইজিং-এর জন্য নারিকেল ও অলিভওয়েলের তৈরি সাবান
আমাদের ত্বককে পরিষ্কার ও ময়েশ্চারাইজ করতে সাবানের ব্যবহার আমাদের স্কিন কেয়ার রুটিনের একটি নিয়মিত অংশ। কিন্তু সাবানের ক্ষতিকর কেমিক্যাল ও অন্যান্য উপাদান আমাদের ত্বক থেকে ময়েশ্চার কেড়ে নিতে পারে, ত্বককে করে তুলতে পারে শুষ্ক। এ কারণেই, ঘরে তৈরি সাবান ব্যবহার করা একটি দারুণ আইডিয়া হতে পারে। প্রাকৃতিক উপাদান থেকে প্রস্তুতকৃত ও রাসায়নিক মুক্ত একটি হোমমেড সাবান কোন ক্ষতিকারক প্রভাব না ফেলেই আপনার ত্বকের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। পাশাপাশি, যেহেতু কোন পণ্যের গুণগত মান এটি প্রস্তুত করতে ব্যবহৃত উপাদানগুলোর দ্বারা নির্ধারিত হয়, তাই নানা প্রাকৃতিক উপাদানের উপস্থিতিই এই সাবান ব্যবহারের একটি বড় কারণ।
হোমমেড সাবান কেন?
নানা কারণেই ত্বকের যত্ন নিতে ঘরে বসেই সাবান তৈরি করা একটি দারুণ আইডিয়া হতে পারে। প্রথমত,হোমমেড সাবানে গ্লিসারিন থাকে, যা সাবান তৈরির প্রক্রিয়ার একটি প্রাকৃতিক উপজাত বা বাইপ্রোডাক্ট, যা একটি দুর্দান্ত ময়েশ্চারাইজার এবং এটি ঘরে তৈরি সাবানকে আপনার ত্বকের জন্য উপকারী করে তোলে! গ্লিসারিন হল একটি ইমোলিয়েন্ট যা বাতাস থেকে আর্দ্রতা টেনে নিয়ে সারা দিন ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে। অন্যদিকে, বাজার থেকে কেনা সাবানে সাধারণত গ্লিসারিনের ঘাটতি থাকে এবং এটি আপনার ত্বকে জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, ঘন ফেনা বা সাবানের বারে নির্দিষ্ট দৃঢ়তা আনতে নানা সিনথেটিক রাসায়নিকও ব্যবহৃত হয়। এজন্য বাজার থেকে না সাবান না কিনে প্রাকৃতিক, হাতে তৈরি সাবান বেছে নেওয়া ভাল।
নারিকেল ও অলিভ অয়েল সাবান : আপনার ত্বকের জন্য একটি হোমমেড সাবান
বাড়িতে সাবান তৈরি করতে আপনি বিভিন্ন তেল ব্যবহার করতে পারেন, কারণ সেগুলোর নিজ নিজ উপকারিতা রয়েছে। তবে আপনি যদি আপনার ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজিং সাবান খুঁজে থাকেন, তবে আপনার অবশ্যই নারিকেল এবং অলিভ অয়েলের সাবান ব্যবহার করা উচিৎ। এই সেকশনে কীভাবে আপনি সহজেই এই ডিআইওয়াই প্রাকৃতিক সাবানটি প্রস্তুত করতে পারেন সে সম্পর্কে কথা বলব:
উপকরণসমূহ
- তিন চা চামচ লাই
- পাঁচ চা চামচ নারিকেল তেল
- সাত চা চামচ ডিস্টিলড ওয়াটার
- দশ চা চামচ অলিভ অয়েল
- ছয় চা চামচ পাম অয়েল
প্রস্তুত প্রণালী
প্রয়োজনীয় উপাদানগুলো সংগ্রহ করুন
প্রথমে প্রয়োজনীয় উপাদান এবং সরঞ্জামগুলো সংগ্রহ করুন। মনে রাখবেন লাই (সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড) খুব বিষাক্ত একটি পদার্থ। তাই সাবান প্রস্তুত করার সময় অবশ্যই গ্লাভস, লম্বা হাতার জামা, সুরক্ষা চশমা এবং বায়ু চলাচল করতে পারে এমন একটি স্থান নিশ্চিত করুন।
সঠিক পরিমাণ নিশ্চিত করুন
উপাদানগুলো নেওয়ার সময় তাদের পরিমাণ সম্পর্কে যথাসম্ভব নির্ভুল থাকার চেষ্টা করুন
লাই ও ডিস্টিলড ওয়াটার মেশান
একটি পাত্রে ধীরে ধীরে লাই এবং ডিস্টিলড ওয়াটার ঢালুন। এটি যাতে ছড়িয়ে না পড়ে, এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করুন। অতঃপর একটি কাঠের বা স্টেইনলেস স্টিলের চামচের সাথে নাড়াচাড়া করে মেশাতে থাকুন। এছাড়া মনে রাখবেন, যখন লাই এবং পানি মিশ্রিত হয়, তখন তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে সাবধান থাকুন ও মিশ্রণটি ঠান্ডা হতে দিন।
তেলগুলোকে মেশান
একটি প্যানে অলিভ অয়েল, পাম তেল এবং নারিকেল তেল নিন ও কম আঁচে গরম করতে করতে মিশ্রিত করুন। তাপমাত্রা ১০০-০ ডিগ্রি পৌঁছানোর পরে প্যানটি নামিয়ে ফেলুন।
লাই এবং তেলের মিশ্রণটি একত্রিত করুন
লাই মিশ্রণের তাপমাত্রা কমে ১০০-১১০ ডিগ্রির মধ্যে নেমে আসলে তেলের মিশ্রণে লাই দ্রবণটি সাবধানে যোগ করুন।
ভালোভাবে মেশান
এই ধাপে, উপাদানগুলো একটি স্টিক ব্লেন্ডারের সাহায্যে মিশ্রিত করুন যতক্ষণ না এটি ঘন হয়। মিশ্রণের ফোঁটা এর পৃষ্ঠের উপর পড়ার পর দৃশ্যমান থাকতে শুরু করলে বুঝবেন মিশ্রণটি যথেষ্ট ঘন হয়েছে।
মিশ্রণটিকে ছাঁচে ফেলুন
সাবান মিশ্রণ দিয়ে একটি ছোট কার্ডবোর্ড বাক্স পূর্ণ করুন। তার আগে, বাক্সটির ভেতরের অংশকে কোন ব্যাগ বা পার্চমেন্ট কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে নিন। সাবানের আকার বাক্সের আকার দ্বারা নির্ধারিত হবে। একটি কার্ডবোর্ডের টুকরো দিয়ে বাক্সটি ঢেকে রাখুন এবং সাবান শক্ত না হওয়া পর্যন্ত ২৪-৩৬ ঘন্টা রেখে দিন।
শক্ত হয়ে যাওয়ার পর কেটে টুকরো করে নিন
শক্ত সাবানটি বাক্সের বাইরে এনে সাবানের বারের আকারে কাটুন। বারগুলি কাটার পর তাদের একটি শীতল, শুকনো জায়গায় রেখে দিন।
নারিকেল ও অলিভ অয়েল সাবান ব্যবহারের উপকারিতা
আপনার ত্বকের জন্য এই প্রাকৃতিক হ্যান্ডমেড সাবান ব্যবহারের অসংখ্য সুবিধা রয়েছে। এই ময়েশ্চারাইজিং সাবানের মূল উপাদান, নারিকেল তেল এবং অলিভ অয়েলের রয়েছে নানা চমৎকার বৈশিষ্ট্য। নারিকেল তেলে ফ্যাটি অ্যাসিড বেশী থাকার কারণে এটি একটি দুর্দান্ত হাইড্রেটিং ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে। এছাড়া, ত্বক প্রশমনকারী লিনোলিক অ্যাসিডের উচ্চ পরিমাণের কারণে, ব্রণযুক্ত ত্বকের চিকিত্সায়ও নারিকেল তেল কার্যকর হতে পারে। অন্যদিকে, জলপাই তেলের ভিটামিন এ, ডি, ই এবং কে আপনার ত্বককে স্বাস্থ্যকর রাখতে সহায়তা করে। পাশাপাশি এতে ময়েশ্চারাইজিং এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্যও রয়েছে। এছাড়া আপনার যদি ব্রণের সমস্যা থেকে থাকে, তবে একটি জলপাই তেল ভিত্তিক সাবান ব্যবহারে এর হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
আপনি যেহেতু এখন এই নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েলের সাবান দিয়ে নিখুঁত ময়েশ্চারাইজ করার দুর্দান্ত রহস্যটি জানেন, বাড়িতে এই প্রাকৃতিক সাবানটি বানাতে ও ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
১। হোমমেড সাবান বানাতে কী কী উপকরণ প্রয়োজন?
– হোমমেড সাবান বানাতে আপনার প্রয়োজন হবে তিন চা চামচ লাই, পাঁচ চা চামচ নারিকেল তেল, সাত চা চামচ ডিস্টিলড ওয়াটার, দশ চা চামচ অলিভ অয়েল এবং ছয় চা চামচ পাম অয়েল।
২। হোমমেড সাবান কীভাবে তৈরি করবো?
– ঘরে তৈরি ময়েশ্চারাইজিং সাবান তৈরির জন্য প্রথমে আপনাকে সাত চা চামচ ডিস্টিলড ওয়াটারের সাথে তিন চা চামচ লাই মিশ্রিত করতে হবে। এরপরে, পাঁচ চা চামচ নারকেল তেল, দশ চা চামচ অলিভ অয়েল এবং ছয় চামচ পাম অয়েল একসাথে মিশিয়ে নিন। এরপরে এই তেলের মিশ্রণটি লাই দ্রবণের সাথে মিশ্রিত করুন এবং এটি ঘন হওয়া পর্যন্ত নাড়ুন। তারপরে, মিশ্রণটি একটি ছাঁচে রাখুন এবং সাবান পর্যাপ্ত শক্ত না হওয়া পর্যন্ত ২৪-৩৬ ঘন্টা রেখে দিন। অবশেষে, শক্ত সাবানটিকে বাক্সের বাইরে নিন এবং এটিকে সাবানের বারের আকারে কাটুন।
৩। নারিকেল তেলের সাবান কি আমার মুখমন্ডলের জন্য ভাল?
– হ্যাঁ, নারিকেল তেলের সাবান আপনার মুখমন্ডলের জন্য ভাল। বেশী পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকার কারণে, নারিকেল তেল একটি দুর্দান্ত ময়েশ্চারাইজার হিসাবে কাজ করে। এছাড়াও, লিনোলিক অ্যাসিডের উচ্চ পরিমাণের কারণে নারিকেল তেল থেকে তৈরি প্রাকৃতিক সাবান ব্রণযুক্ত ত্বকের চিকিত্সার ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।
সাধারণ জিজ্ঞাসাঃ
https://lovelygreens.com/simple-castile-soap-recipe-make-olive-oil-soap/
https://www.goodhousekeeping.com/home/cleaning/a20705805/how-to-make-homemade-soap/
https://www.healthline.com/health/olive-oil-benefits-face#benefits
https://www.cosmopolitan.com/style-beauty/beauty/a27305882/coconut-oil-benefits-skin/
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।