স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য সেরা স্কিন কেয়ার রুটিন
- আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী অবশ্যই একটি স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলার অভ্যাস থাকতে হবে।
- ভিটামিন সি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন এবং সুষম খাবার খান। এতে করে শরীরের ভিতর থেকে উজ্জ্বলতা ফিরে আসবে।
প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল ও গ্লোয়িং ত্বক পেতে হলে সবার আগে আপনাকে একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা বজায় রাখতে হবে। মানসিক চাপ, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব ও অপুষ্টির কারণে আপনার ত্বক প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা হারিয়ে ফেলে। যতোই মেক-আপ করুন না কেন, ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো না থাকলে আপনার ত্বককে গ্লোয়িং ও সুন্দর দেখাবে না।
কাজেই, ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কিছুটা সময় ব্যয় করা কিন্তু অর্থহীন না। আর এ জন্যই আপনার সুবিধার্থে আজ আমরা আলোচনা করবো ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষার গোপন রহস্য। এই টিপগুলো নিয়মিত মেনে চললে আপনার ত্বকের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে। এবং আপনিও হয়ে উঠবেন উজ্জ্বল ও গ্লোয়িং ত্বকের অধিকারী।
গ্লোয়িং ত্বকের গোপন রহস্য
১। প্রতিদিনের স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলুন- প্রথমেই আপনার ত্বককে দাগমুক্ত করার জন্য আপনার অটল ইচ্ছা থাকা জরুরি। এ ক্ষেত্রে আপনি সহজ একটি স্কিন কেয়ার রুটিন তৈরি করুন ও এটা নিয়মিত মেনে চলুন। এই স্কিন কেয়ার রুটিনের মধ্যে কী কী থাকতে পারে?
- ক্লিনজিং করুন- যে কোনো স্কিন কেয়ার রুটিন শুরুই হয় মুখ ধোয়া দিয়ে। মুখের ধুলো-ময়লা, অতিরিক্ত তেল বা যে কোনো ইমপিউরিটি দূর করতে প্রয়োজন ভালো একটি ক্লিনজার। ক্লিনজারই আপনার ত্বককে পরবর্তী স্কিন কেয়ার স্টেপগুলোর জন্য তৈরি করে। কাজেই দেখে শুনে ভালো একটি ক্লিনজার কিনুন। সব ধরনের ত্বকের জন্য কিন্তু সব ধরনের ক্লিনজার উপযুক্ত নয়। তাই প্রথমে আপনার ত্বকের ধরন আপনাকে বুঝে নিতে হবে। তারপর ত্বকের ধরন অনুযায়ী ক্লিনজার কিনে নিন।
- টোনার ব্যবহার করুন- স্কিন কেয়ার রুটিনের ক্ষেত্রে অনেকেই মনে করেন টোনার ব্যবহার করলেও চলে, না করলেও চলে। কিন্তু সত্যি বলতে টোনার কিন্তু অন্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টগুলো ত্বকে সহজে শোষণ করে নিতে সাহায্য করে। এছাড়া এটি আপনার ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স ধরে রাখতেও সাহায্য করে।
আপনার স্কিন যদি সেনসিটিভ বা অ্যাকনে-প্রোন হয়ে তবে স্যালিসাইলিক এসিড সমৃদ্ধ টোনার ব্যবহার করুন। আর ত্বক যদি শুষ্ক হয় তবে হাইড্রেটিং টোনার ব্যবহার করুন।
- ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন- সব ধরনের ত্বকের জন্যই ময়েশ্চারাইজার সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ময়েশ্চারাইজার আপনার ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্কতা থেকে যেমন রক্ষা করে, তেমনি ত্বকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদনও বন্ধ করতে সাহায্য করে। ত্বকের দাগ ঢাকতে এবং হালকা কভারেজের জন্য একটু ভারি ময়েশ্চারাইজারও আপনি ব্যবহার করতে পারেন। তবে এ ধরনের ময়েশ্চারাইজার রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ব্যবহার করবেন না। রাতে আপনি নিয়মিত যে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন সেটাই ব্যবহার করুন নয়তো আপনার পোরস ক্লগ হয়ে যেতে পারে।
স্কিন কেয়ারের এই ধাপগুলো আপনাকে দিনে দুইবার মেনে চলতে হবে, সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে। ত্বককে প্রাকৃতিকভাবে উজ্জ্বল করতে চাইলে স্কিন কেয়ারের এই ধাপগুলো কখনোই বাদ দেয়া যাবে না। পাশাপাশি যেদিন আপনি একটু বেশি সময় পাবেন সেদিন আরো বাড়তি কিছু স্কিন কেয়ার করতে পারেন।
২। ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহার করুন- আপনার ত্বক যদি হাইপারসেনসিটিভ না হয় তাহলে আপনার ত্বকের জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ প্রোডাক্ট উপযুক্ত। ভিটামিন সি সিরাম ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করা থেকে শুরু করে ত্বকে কোলাজেন উৎপাদন বৃদ্ধিসহ নানা রকম উপকার করে থাকে। এটি সূর্যের ক্ষতিকর ইউভি রশ্মি থেকেও ত্বককে রক্ষা করে। কাজেই টোনার ব্যবহারের পর ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহার করুন। এটি আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করবে।
৩। আই ক্রিম ব্যবহার শুরু করুন- চোখের আশেপাশের চামড়া কিন্তু সবচেয়ে পাতলা। তাই বয়সের সাথে সাথে এটি কোলাজেন তৈরি করা কমিয়ে দেয়। তাই ক্লান্তির ছাপ চোখের চারপাশেই বেশি স্পষ্ট করে বোঝা যায়। তাই, চোখের চারপাশের ত্বকের যত্ন কিন্তু বেশি করে নিতে হবে। চোখের নিচের কালো দাগ ও ফোলা ভাব দূর করতে রেটিনল, পেপটাইড ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ আই ক্রিম ব্যবহার করুন। তবে আলাদাভাবে যদি আই ক্রিম কিনতে খ্রুচ করতে না চান তবে এমন ধরনের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন যাতে সিরামিড ও হাইয়ালুরনিক এসিড রয়েছে।
৪। ত্বকের সুরক্ষায় সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন- আবহাওয়া যেমনই থাকুক, বাইরে বের হলে সানস্ক্রিন লাগাতে কখনোই ভুলবেন না। অল্প বয়সেই ত্বক বুড়িয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল সূর্যের আলোতে বের হওয়া।
কিছু কিছু ডার্মাটোলজিস্ট এমনকি ঘরের ভিতর থাকলেও সানস্ক্রিন ব্যবহারের পরামর্শ দেন। আপনার সানস্ক্রিনের এসপিএফ অবশ্যই ৩০ বা তার বেশি হতে হবে। আর সূর্যের আলোতে যদি বেশিক্ষণ থাকতে হয় তাহলে চেষ্টা করুন প্রতি দুই ঘন্টা পরপর সানস্ক্রিন মেখে নিতে।
৫। এক্সফলিয়েট করুন- উজ্জ্বল ত্বকের গোপন রহস্যের মধ্যে অন্যতম হল এক্সফলিয়েশন। মৃত কোষের কারণে ত্বক নিস্তেজ ও ম্লান দেখায়। সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার ত্বকে মাইল্ড এক্সফলিয়েটর দিয়ে এক্সফলিয়েট করলে মৃত কোষ দূর হয়ে যায়। ফলে পোরসের মুখ খুলে যায় এবং অনান্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট সহজেই ত্বকের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। ফলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।
৬। শরীরের যত্ন নিন- আপনি যদি আপনার শরীরের ভিতরে যত্ন নেন তাহলে সেটা আপনার ত্বকেও ফুটে উঠবে। শুধুমাত্র হাইড্রেটিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করাই যথেষ্ট নয়। শরীরের ভিতর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে আপনাকে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করতে হবে। পাশাপাশি সুষম খাবার খাওয়াও প্রয়োজন। কাজেই আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় মাছ, অ্যাভোক্যাডো, ওয়ালনাটস, ব্রোকলি, গ্রিন টি, আঙুর ইত্যাদি রাখুন।
৭। ডিআইওয়াই ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন- আপনি যদি ঘরে থাকা উপাদান দিয়েই রূপচর্চা করতে পারেন তাহলে বাইরে থেকে কিনতে যাবেন কেন? হলুদ, অ্যালোভেরা, লেবু, পেঁপে, মধু, আলু, শশা ইত্যাদি দিয়ে রূপচর্চা করলে আপনার ত্বক হয়ে উঠবে উজ্জ্বল ও দীপ্তিময়।
তবুও এর মধ্যে কিছু কিছু উপাদানে অনেকের অ্যালার্জি হতে পারে তাই ব্যবহার করার আগে পরীক্ষা করে নিন আপনার অ্যালার্জি আছে কি না।
৮। ব্যায়াম করুন- নিয়মিত ব্যায়াম করলেও ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়। ব্যায়াম করার ফলে ঘাম বেশি হয় যা রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে এবং শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। ফলে আপনার ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি পায়। কাজেই এ জন্য জিমে যেতে পারেন বা ইয়োগা অথবা জুম্বা শুরু করতে পারেন।
স্বাস্থ্যোজ্জ্বল তেওক কিন্তু এক রাতেই পাওয়া যায় না। এ জন্য স্কিন কেয়ার রুটিন নিয়মিত মেনে চলতে হবে এবং দুশ্চিন্তা কমাতে হবে। আপনি যদি এ ৮টি ধাপ নিয়মিত মেনে চলতে পারেন তাহলে দ্রুতই ত্বকের পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।
সাধারণ প্রশ্ন
১। স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো রুটিন কী?
আপনাকে প্রতিদিন দুইবার ক্লিনজার, টোনার ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। পাশাপাশি সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার মাইল্ড এক্সফলিয়েটর দিয়ে ত্বক এক্সফলিয়েট করে নিন যাতে ত্বকের যাবতীয় মৃত কোষ দূর হয়ে যায়।
২। প্রত্যেকটি স্কিন কেয়ার রুটিনে কী কী থাকা প্রয়োজন?
প্রত্যেকটি স্কিন কেয়ার রুটিনে ত্বক উপযোগী একটি ক্লিনজার, টোনার ও ময়েশ্চারাইজার থাকা খুবই জরুরি। আর আপনার ত্বক যদি হাইপারসেনসিটিভ না হয় তাহলে টোনারের পর প্রতিদিন দুইবার ভিটামিন সি সিরাম ব্যবহার করতে পারেন।
৩। আমার স্কিন কেয়ার রুটিন আরো ভালো করব কীভাবে?
স্কিন কেয়ার রুটিন আরো ভালো করতে স্কিন কেয়ারের ধাপে এসপিএফ ৩০ বা তার বেশি এসপিএফ সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ব্যবহার শুরু করুন। এছাড়া অ্যাকনে, রিংকেলস বা ফাইন লাইনস দূর করতে রাতে রেটিনল ব্যবহার করতে পারেন। তবে ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ ছাড়া রেটিনল ব্যবহার করবেন না।
৪। দাগমুক্ত ত্বক কীভাবে পাবো?
প্রথমেই স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলার ব্যাপারে অটল থাকতে হবে। বাইরে বের হওয়ার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। দিনে কমপক্ষে ৮ থেকে ২০ গ্লাস পানি পান করুন ও স্বাস্থ্যকর খাবার খান। এছাড়া অনেক বেশি মেক-আপ প্রোডাক্ট ব্যবহার না করাই ভালো। ত্বকের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ধরে রাখতে আপনার স্কিন কেয়ার রুটিন অবশ্যই নিয়মিতভাবে মেনে চলতে হবে। কাজেই দুশ্চিন্তা বাদ দিয়ে ধৈর্য ধরুন।
৫। উজ্জ্বল ত্বক পেতে প্রতিদিন কী করতে হবে?
সকালে ঘুম থেকে উঠেই মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর টোনার লাগিয়ে নিন। সবশেষে ত্বক উপযোগী ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন যাতে আপনার ত্বকে তেলের উৎপাদন স্বাভাবিক থাকে।
৬। স্কিন কেয়ার শুরু করব কী দিয়ে?
সবসময় ভালো একটি ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধোয়ার মাধ্যমে স্কিন কেয়ার শুরু করা উচিত।
তথ্যসূত্র:
https://skinkraft.com/blogs/articles/how-to-get-glowing-skin
https://www.goodhousekeeping.com/beauty/anti-aging/a22850819/best-skincare-routine/
https://lifewithme.com/sleep-in-makeup/
https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/vitamin-c-serum-benefits#skin-type
https://www.healthline.com/nutrition/12-foods-for-healthy-skin#The-bottom-line
https://www.stylecraze.com/articles/simple-home-remedies-for-glowing-skin/
https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/how-does-retinol-work#what-it-treats
[sc name=”get-healthy-glowing-skin-with-an-ideal-skincare-routine-bn”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।