যে পাঁচ কারণে নারিকেল তেল আপনার চুলের সব সমস্যার সমাধান করতে পারে
- নারিকেল তেল কয়েক শতাব্দী ধরে চুলের যত্নে ব্যবহৃত হচ্ছে
- নারিকেল তেল মাথার ত্বকের শুষ্কতা হ্রাস করতে সহায়তা করে যার ফলে খুশকি দূর করে
- নারিকেল তেলের নিয়মিত ব্যবহারে চুল পড়া কমে যায় এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ে
- নারিকেল তেলে ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে যা চুলের গভীরে পৌঁছে তাদের পুষ্টি দেয়
- যদি আপনি নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার করেন তবে এটি চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং আপনার চুলকে নজরকাড়া সুন্দর করে তুলবে
চুলের জন্য সৌন্দর্য বিলাসিরা বিভিন্ন রাসায়নিক পণ্য যুগ যুগ ধরে সারা বিশ্ব জুড়ে চুলের স্টাইলের জন্য ব্যবহার করে আসছে, যদিও এই পদার্থগুলো চুলের বৃদ্ধির জন্য ক্ষতিকারক। তবে একটি হেয়ারকেয়ার পণ্যের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত চুলের প্রাকৃতিক বৃদ্ধি নিশ্চিত করা এবং চুলকে মসৃণ, কোমল এবং রেশমী করে তোলা। সুতরাং, যদি এ পন্যগুলো দীর্ঘমেয়াদে ব্যবহার আপনার চুলের জন্য ক্ষতিকারক হয়, তবে ব্যয়বহুল পণ্যগুলো কিনে কেন অপচয় করবেন?
বরং, চুলের জন্য আপনার নারিকেল তেলের উপর নির্ভর করা উচিত। চুলে নারিকেল তেল লাগানোর অসংখ্য সুবিধা রয়েছে। এটি ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ। এজন্য, এটি যুগে যুগে চুলের সমস্যার ঘরোয়া সমাধান হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
নারিকেল তেল কেবল চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করতেই নয়, চুলের ক্ষতি এবং খুশকিসহ বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায়ও ব্যবহৃত হয়। চুলের এমন কোন সমস্যা নেই যা নারিকেল তেল নির্মূল করতে পারে না। সুতরাং, যদি আপনি জানতে চান কিভাবে নারিকেল তেল ব্যবহার করে শুষ্ক চুল এবং চুলের অন্যান্য সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন, তবে আমাদের সাথেই থাকুন।
১. খুশির বিরুদ্ধে লড়াই করা:
খুশকি মাথার ত্বকের অন্যতম প্রধান সমস্যা। খুশকির পেছনের প্রধান কারণগুলি হল:
- প্রতিদিন আপনার মাথার ত্বক সঠিকভাবে পরিষ্কার না করা
- ক্ষতিকারক পদার্থ দ্বারা তৈরি রাসায়নিক পণ্য ব্যবহার
- আপনার মাথার ত্বকে এবং চুলে পর্যাপ্ত পরিমাণে তেল না দেওয়া
নারিকেল তেলে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা খুশকি মোকাবেলায় সহায়তা করে। লেবুর রসের মতো অন্য যে কোনও প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে নারিকেল তেল মিশিয়ে আপনি খুশকির বিরুদ্ধে নিজের ঘরোয়া প্যাক তৈরি করতে পারেন। লেবু আপনার মাথার ত্বক থেকে জমে থাকা ময়লা এবং অতিরিক্ত তেল অপসারণ করতে সহায়তা করে।
পদ্ধতি:
- দুই থেকে তিন টেবিল চামচ নারিকেল তেল নিন এবং এটি গরম করুন
- তারপরে তেলে এক টেবিল চামচ লেবুর রস দিন
- আপনার মাথার ত্বকে মিশ্রণটি আলতো করে ম্যাসাজ করুন
- হালকা শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলার আগে ৩০ মিনিটের জন্য অপেক্ষা করুন
২. চুল পড়া রোধ করতে:
চুলে প্রোটিনের অভাবের কারণে চুলের নালী নরম হয়ে তা ভঙ্গুর হয়ে যায় এবং ভেঙে যেতে শুরু করে। নারিকেল তেল চুল পড়ার জন্য একটি প্রাকৃতিক ঘরোয়া প্রতিকার। এতে লরিক অ্যাসিড রয়েছে যা চুলে বেশ দারুণভাবে শোষিত হয়। ফলস্বরূপ, চুল আবার প্রোটিন ফিরে পায় এবং চুল হয়ে ওঠে আরও মজবুত। তাই, নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার চুলের ক্ষতি খুব কমে যায়।
৩. প্রাকৃতিক ডিপ কন্ডিশনার হিসাবে কাজ করে:
চুলের বৃদ্ধি বজায় রাখার জন্য ডিপ কন্ডিশনিং করা খুব জরুরি। নারিকেল তেল প্রাকৃতিক ডীপ কন্ডিশনার হিসেবে দুর্দান্ত কাজ করে। এতে ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে যা চুলের গভীরে পৌঁছে তাদের পুষ্টি দেয়।
চুল ধোয়ার কয়েক ঘন্টা আগে নারিকেল তেল দিয়ে চুলকে গোঁড়া হতে আগা পর্যন্ত ম্যাসাজ করে ডীপ কন্ডিশনিং করা যায়।
৪. চুল পুষ্ট করার জন্য:
নারিকেল তেল চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে একটি প্রাকৃতিক উপাদান। নারিকেল তেলে থাকা ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ভিটামিনগুলো চুলের গভীরে পৌঁছে এবং অতিরিক্ত সিবামের উৎপাদন বন্ধ করে। ফলে চুল আরও শক্তিশালী হয়। অতএব, আপনার চুল হয়ে ওঠে আরও বেশি আকর্ষণীয়।
৫. শুষ্কতা দূর করতে:
নারিকেল তেল রুক্ষ চুলের শুষ্কতা দূর করতে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। তালুতে খুব স্বল্প পরিমাণে নারকেল তেল প্রয়োগ করুন এবং এটি আপনার চুলে ভালো করে ম্যাসাজ করুন। এটি করে, আপনি তাত্ক্ষণিকভাবে শুষ্কতা দূর করতে এবং চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখতে পারেন।
নারকেল তেল আপনার চুলের জন্য অমৃতসম। ঘরোয়া পদ্ধতিতে চুল পড়ার সমাধান বা সাশ্রয়ী মূল্যের ডীপ কন্ডিশনিং- সব ক্ষেত্রেই এটি সমান কার্যকর। তবে এটি আপনাকে নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে। তাই, নিয়মিত চুলের জন্য নারিকেল তেল ব্যবহার করুন এবং ধীরে ধীরে আপনার চুল আরও ঘন, রেশমি ও মজবুত হবে।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য
১. নারিকেল তেল কি চুল পুনরায় গজাতে সাহায্য করতে পারে?
– হ্যাঁ, নারকেল তেল চুল পুনরায় গজাতে সহায়তা করতে পারে। কিন্তু অন্যান্য যেকোনো ভালো জিনিসের মতো এটিও আপনাকে ধৈর্য নিয়ে নিয়মিতভাবে ব্যবহার করতে হবে।
২. ক্ষতিগ্রস্ত চুলের জন্য আপনি কিভাবে নারিকেল তেল ব্যবহার করবেন?
– ক্ষতিগ্রস্থ চুলের জন্য একদিন পরপর নারিকেল তেল ব্যবহার করুন। গোসল করার ৩০ মিনিট আগে এ তেল দিয়ে আপনার চুল ডীপ কন্ডিশন করুন। এই পুরো সময় একটি শাওয়ার ক্যাপ পরুন। প্রক্রিয়াটি আপনার চুলকে এই তেলের পুষ্টি শোষণে সহায়তা করবে।
৩. আমি কিভাবে বাড়িতে আমার ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত করতে পারি?
– বাড়িতে ক্ষতিগ্রস্ত চুল মেরামত করতে নিয়মিত আপনার চুলে তেল লাগাতে হবে। এজন্য আপনি নারিকেল তেল, ক্যাস্টর অয়েল, জলপাই তেল, বাদাম তেল বা জোজোবা তেলের মিশ্রণ ব্যবহার করতে পারেন। সর্বোচ্চ সুবিধার জন্য এটি সারারাত মাথায় রেখে দিন।
৪. আমি কীভাবে আমার ক্ষতিগ্রস্ত চুল না কেটে মেরামত করতে পারি?
– আপনার চুল অনেক ছোট যে করতে হবে তা না। তবে আপনাকে প্রতি তিন থেকে চার মাস পর পর আপনার চুলের আগা ছাঁটতে হবে। তাছাড়া, নিয়মিত আপনার চুলে তেল মালিশ করুন এবং ডিপ কন্ডিশনিং এর পর সালফেট-মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করুন, বেশি বেশি পানি পান করুন এবং সুষম ডায়েট বজায় রাখুন। এছাড়াও, চাপমুক্ত থাকতে চেষ্টা করুন এবং প্রতি রাতে আট থেকে নয় ঘন্টা ঘুমান।
তথ্যসূত্র:
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।