যেভাবে ধাপে ধাপে স্কিন এক্সফোলিয়েশন করবেন
এক্সফোলিয়েশন হচ্ছে ত্বকের বাইরের স্তর থেকে ফিজিক্যাল বা কেমিক্যাল পদ্ধতিতে ধীরে ধীরে মৃত কোষ তুলে ফেলা।
বাইরের পরিবেশের জন্য মেমব্রেন সেলে ছিড়ে যাওয়া বা ক্ষয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হয়। আপনার ত্বকের মৃত কোষের ওপর স্বাভাবিকভাবেই নতুন কোষ জন্মায়। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় সেলুলার টার্নওভার। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের এটি করতে ২৮ থেকে ৪৫ দিন সময় লাগে।
অন্যদিকে ত্বকের মৃত কোষগুলো ওপরের দিকে জমা হতে থাকে। এ কারণে ত্বকের ডিসকোলোরেশন, এমনকি অ্যাকনেও হতে পারে। ভালো একটি এক্সফোলিয়েটর দিয়ে এক্সফোলিয়েশন করা মানে ত্বকের মৃত কোষগুলো দূর করা, ত্বকের কোষগুলোর পুনরুৎপাদনে সাহায্য করা এবং ত্বক উজ্জ্বল করা। আমরা জানি স্বাভাবিকভাবে আমাদের সিস্টেম এক্সফোলিয়েট করতে পারে, কিন্তু সেটা সবসময় যথেষ্ট নয়। সেজন্য ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে কীভাবে আমাদের ত্বক এক্সফোলিয়েট করতে হবে তা আমাদের জানা প্রয়োজন।
স্কিন এক্সফোলিয়েট করা মানে মৃত কোষ তুলে ফেলা, যেখানে রাবিং ও স্ক্রাবিং এর মতো সহজ পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করা হয়। এই পদ্ধতিগুলো সাধারণত দ্রুত ফল এনে দেয়, কারণ এতে করে শুধু মৃত কোষই দূর করে না, ত্বকের রক্ত সঞ্চালন ঠিক রাখতেও সাহায্য করে।
বডি এক্সফোলিয়েটরের মাঝে আছে লুফাহ, বডি ব্রাশ, বাথ সল্ট, এক্সফোলিয়েটিং স্ক্রাব, মসলিন ওয়াশক্লথ ও অন্যান্য। কিছু কিছুতে আবার গ্রেইন বা গ্রাউন্ড আপ নাটসের মতো ক্ষুদ্র পার্টিকল থাকে যা বেশ রুক্ষ। আবার মাইক্রডারমাব্রেশনের মতো পদ্ধতিতে আপনি কোনো দক্ষ বিউটিশিয়ানের সাহায্যেও এই কাজটি করাতে পারেন।
এক্সফোলিয়েশনের ধরন
১। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশন
এ ব্যাপারটি মাথায় রাখা জরুরি যে ঠিকমতো ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েশন না করলে অস্বস্তি বা ত্বক শুকিয়ে যাওয়ার মতো সমস্যা হতে পারে। একই সঙ্গে এটাও নিশ্চিত করতে হবে বাজার থেকে কিনে আনা স্ক্রাবে যেন এমন কোনো বড় উপাদান না থাকে যেটা আপনার ত্বকে কোনো ক্ষত তৈরি করতে না পারে।
২। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন
অন্যদিকে কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশনের অংশ হচ্ছে মৃত কোষ ও ত্বক থেকে অন্যান্য ময়লা দূর করতে মাইল্ড এসিড বা এনজাইমের মতো কিছু কেমিক্যাল ব্যবহার করা। বিশেষজ্ঞদের অনুমতিপ্রাপ্ত কেমিক্যাল ব্যবহারে সাধারণত ক্ষতির কিছু নেই। তবে, ব্যবহারের আগে প্যাচ টেস্ট করে দেখে নেওয়া উচিত এসবের কোনো ক্ষতিকারক প্রভাব আছে কি না।
কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর সাধারণত মৃদু হয় এবং এর প্রভাবও হয় দীর্ঘস্থায়ী। আলফা হাইড্রক্সি এসিড বা বিটা হাইড্রক্সি এসিড আপনার কেমিক্যাল এক্সফলিয়েটরে থাকতে পারে। ল্যাকটিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, গ্লাইকলিক এসিড এবং অন্যান্য আপফা হাইড্রক্সি এসিডও ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে স্যালিসাইলিক এসিড হচ্ছে সেই বিটা হাইড্রক্সি এসিড যা সাধারণত এক্সফোলিয়েশনের জন্য ব্যবহার করা হয়।
যদিও এক্সফোলিয়েশনের অনেক রকম সুবিধা আছে, কিন্তু এমন কোন পণ্য পাওয়া দুষ্কর যেটি কিনা একাধিক সুবিধা দিতে পারে। কোন এক্সফোলিয়েটর ব্যবহার করবেন সেটা জানার আগে আপনার ত্বকের ধরন জানা প্রয়োজন। কারও কারও ত্বক অতিরিক্ত সেনসিটিভ, আবার কারও রোসাশিয়া বা অন্যান্য সমস্যা থাকতে পারে। এ ব্যাপারগুলো মাথায় রেখেএক্সফোলিয়েটর নির্বাচন করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে, আপনার একজন ডার্মাটোলজিস্টের সাহায্য নেওয়া উচিত বা এক্সফোলিয়েশন থেকে পুরোপুরি বিরত থাকা উচিত।
প্রাথমিক ধাপগুলো হচ্ছে-
স্টেপ ১: ঠিক প্রোডাক্ট বেছে নিন
স্টেপ ২: সঠিকভাবে এক্সফোলিয়েটর প্রয়োগ করুন
স্টেপ ৩: এক্সফোলিয়েটরটিকে কাজ করার সময় দিন
স্টেপ ৪: ভালভাবে মুখ ধুয়ে নিন
স্টেপ ৫: ময়েশ্চারাইজ করা
এখানে কীভাবে ত্বককে সহজে এক্সফোলিয়েট করা যায় তার কিছু সহজ উপায় দেওয়া হলো।
১। ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েন্টের আগে আপনার মুখ সাধারণ ক্লিন্সার দিয়ে পরিস্কার করে নিন।
২। এরপর আপনার মুখের চার ভাগের এক ভাগ ফেস স্ক্রাব দিয়ে বৃত্তাকারভাবে মুছতে থাকুন, শুধু চোখের অংশ বাদ দিয়ে।
৩। ৩০ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট সময় ধরে আপানার মুখে প্রোডাক্টটি ম্যাসাজ করুন। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিয়ে একটি পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে মুছে ফেলুন।
৪। এরপর একটি মাস্ক, সেরাম বা ক্রিম দিন।
৫। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহারের ক্ষেত্রে আপনার পুরো মুখে দিন এবং সেই সঙ্গে শরীরে বা হাতের অন্যান্য জায়গায়ও তা লাগিয়ে নিন।
পরবর্তী ধাপে যাওয়ার আগে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন কারণ কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট আপনার মুখের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে কয়েক মিনিট সময় নেয়। জেল এক্সফোলিয়েন্টগুলোও একই ভাবে কাজ করে। কিছু কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েন্ট, যেগুলো পিল নামেও পরিচিত। সেগুলো মাস্কের মতো একইভাবে ব্যবহার করা হয় এবং কয়েক মিনিট পর ধুয়ে ফেলতে হয়।
এক্সফোলিয়েটর রেসিপি
একটা রেডি টু ইউজ স্ক্রাব ব্যবহার করতে হলে এই উপাদানগুলো একসঙ্গে নিয়ে কাটা চামচ দিয়ে নাড়ুন। হাত, পা, বাহু, পায়ের পাতাতেও স্ক্রাবটি ব্যবহার করা যাবে। ব্যবহারের পর অবশিষ্ট অংশ একটি এয়ার টাইট বাক্সে ভরে রাখুন। ন্যাচারাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহার করা সবসময়ই ভালো।
উপাদান
-১/২ কাপ নারিকেল তেল (অপশনাল)
-১ কাপ চিনি (সাদা)
– দশ ফোটা ভ্যানিলা এসেনশিয়াল অয়েল
নির্দেশনা
- আধা কাপ নারিকেল তেল মাইক্রোওয়েভে ৪৫ সেকেন্ড ধরে গরম করুন যতক্ষণ পর্যন্ত পুরোপুরি গলে না যায়। এ
- তারপর ছোট একটা বাটিতে নারিকেল তেল ও এক কাপ সাদা চিনি নিন।
- এরপর ভালোভাবে নাড়ুন এবং এতে ১০ ড্রপ ভ্যানিলা এসেনশিয়াল অয়েল মেশান যতক্ষণ না পর্যন্ত ভালোভাবে না মেশে।
- এরপর একটি জারের মধ্যে রেখে দিন। স্ক্রাবটি ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত।
আপনার ত্বক ঠিকমতো এক্সফোলিয়েট করা হলে তা নিশ্চিত করবে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল, লাবণ্যময় ত্বক। কোন এক্সফোলিয়েশনে যাবেন সেটার আগে আপনার ঠিক করতে হবে আপনি কী অর্জন করতে চান। ওভার এক্সফোলিয়েশনের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন কেননা তা অনেক সমস্যার উদ্রেক করতে পারে। সেজন্য সবার আগে আপনার ত্বক সম্পর্কে জানুন।
সাধারণ প্রশ্ন
কীভাবে ন্যাচারালি ত্বককে এক্সফোলিয়েট করা সম্ভব?
কফি, ওটস, লেমন জুস, ইয়োগার্ট, পাপায়া, মধু, চিনির মতো ন্যাচারাল এক্সফোলিয়েন্ট ব্যবহার করুন যা প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের নির্যাস করে।
দিনে এক্সফোলিয়েট করব না রাতে?
এক্সফোলিয়েটিং যে কোনো সময়েই করা যায়। সকালে ত্বক অনেক রিল্যাক্সড, দূষণমুক্ত থাকে যদি আপনি ভালো একটা রাতের রুটিন নিশ্চিত করতে পারেন। আবার অন্যদিকে সারাদিনের ধকলের পর ত্বকের একটু বাড়তি যত্নেরও দরকার হয়। আপনার প্রয়োজন বুঝে সময় বেছে নিন।
ভালো হোমমেড স্কিন এক্সফোলিয়েটর কী হতে পারে?
বাজারে বেশ কিছু ভালো হোমমেড স্কিন এক্সফোলিয়েটর আছে। একটা ভালো এক্সফোলিয়েটর আপনার চাওয়া পূরণ করতে পারে। আপনার ত্বকের ধরন, পুষ্টি ও পরিবেশ বিবেচনা করে উপাদান বেছে নিন।
কীভাবে আপনি নিজে নিজে এক্সফোলিয়েট করবেন?
খুব সেনসিটিভ স্কিনের জন্য ওয়াশক্লথ ভালো একটা অপশন। একটা অর্ডিনারি ওয়াশক্লথ নিয়ে সেটা গরম পানির সাথে মেশান এবং বৃত্তাকারভাবে সেটা ত্বকের ওপর মেশান। ন্যাচারাল স্পঞ্জ খুব ভালোভাবে ত্বক থেকে মৃত কোষ দূর করতে পারবে।
কীভাবে বুঝবেন আপনার ত্বকের এক্সফোলিয়েশনের দরকার?
যখন আপনার ত্বক নির্জীব দেখাবে, ধরে নিতে হবে এখনি এক্সফোলিয়েশনের দরকার। ময়লা ও তেল দূর করতে, ত্বকের মন্দাভাব কমাতে ও মৃত কোষ দূর করতে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ সপ্তাহে এক বা দুই দিন এক্সফোলিয়েট করার উপদেশ দিয়েছেন। কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটরস নিজে থেকেই ভেতরে পরিষ্কার করে, যেখানে স্ক্রাব আলতো করে মৃত কোষ মুছে ফেলে।
তথ্যসূত্র:
https://skinkraft.com/blogs/articles/how-to-exfoliate-skin
https://www.dermstore.com/blog/how-to-exfoliate-skin/
https://www.luxyhair.com/blogs/hair-blog/3-easy-diy-coconut-oil-scrubs
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।