স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য সেরা এসেনশিয়াল অয়েল
গত এক দশকে এসেনশিয়াল অয়েলের ঔষধী ও ত্বকের গুণের কথা মানুষ ভালোভাবে জানতে পেরেছে। প্রাচ্যের দিকে অনেক বছর ধরেই এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার হয়ে আসছে কিন্তু বিশ্বের অন্য জায়গায় এটার ব্যবহার এখনো নতুন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের যত্নেও এটা ব্যবহার হচ্ছে। সেজন্য ত্বকে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহারের উপকারিতা শোনার আগে আমাদের জানতে হবে ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো এসেনশিয়াল অয়েল কী। বিভিন্ন গাছ থেকে আহরিত হওয়ার পর মেশানোর পর এই এসেনশিয়াল অয়েল পাওয়া যায়। ধারণা করা হয়, এটা ওই নির্দিষ্ট গাছে গুণাগুণ সমৃদ্ধ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, কোনো একটা গাছের যদি অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণ থাকে, তাহলে সেটার তেলেরও তা থাকবে। বলাই বাহুল্য, এই তেল বিকল্প ঔষধ হিসেবে বিশ্বের নানা জায়গায় ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অনেক স্কিনকেয়ার কোম্পানি এটা উৎপাদন করছে। এখানে আমরা আলোচনা করব কীভাবে আমরা স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য এসেনশিয়াল অয়েল কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং এর ব্যবহার নিয়ে।
শুরুতে টি-ট্রি অয়েলের কথায় আসা যাক। সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় তেল এটাই। দেখা গেছে, বেশির ভাগ অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রডাক্টেই এই তেল থাকে। সেজন্য এটা অ্যাকনে ও পিম্পল চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। কয়েক ফোঁটা টি-ট্রি অয়েলের সাথে মধু মেশান এবং এই পেস্ট আপনার মুখে দিন। ৩০ মিনিট রেখে দেওয়ার পর এটা কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। অ্যাকনে ও পিম্পল ঠিক করার জন্য কাজটা প্রতিদিন করুন। ডার্ক স্পট ঠিক করা ও শুষ্ক ত্বক নিরাময়ের জন্য তি-ট্রি অয়েলের সাথে অন্য এসেনশিয়াল অয়েল মেশাতে পারেন।
এসেনশিয়াল অয়েলের মধ্যে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জজবা অয়েল। এই তেলটা মূলত ডিপ হাইড্রেটিং প্রপার্টির কারণে পরিচিত। এটা ত্বকের গভীরে ঢোকে ও ডিপ ময়েশ্চারাইজ করে। যেহেতু এটা পানির মতো ধারাবাহিক নয়, পরিবেশে এটা সহজে বাষ্প হয়ে উড়ে যায় না। সেজন্য এটার প্রভাব অনেক দীর্ঘস্থায়ী হয়। কয়েক ফোঁটা নারিকেল তেলের সাথে মেশানো যায় এবং ময়েশ্চারাইজার হিসেবে নারিকেল তেলে দেওয়া যায়। জজবা অয়েলের সাথে অ্যন্টি-এজিং প্রপার্টিও থাকে, এবং এটা ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া ঠেকায়। এর বাইরেও এটা্র মধ্যে ভিটামিন বি ও ই আছে, সেজন্য স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য এই অয়েল উপকারী।
এরপর আমরা আলোচনা করব লেমনগ্রাস অয়েল নিয়ে। এটা ত্বক থেকে বাড়তি তেল শুষে নেয়। এটার উপকারিতার জন্য ডিস্টিল্ড ওয়াটারের সাথে কয়েক ফোঁটা তেল নিয়ে আপনার মুখে দিন। শুকিয়ে গেলে মুখে একটা ময়েশ্চারাইজার দিন। লেমনগ্রাস অয়েল ত্বক থেকে ব্ল্যাকহেডস দূর করার ব্যাপারে দারুণ কার্যকর। একই সঙ্গে এটা ব্যাক্টেরিয়াল সংক্রমণও ঠেকায় এবং ত্বককে রিফ্রেশ করে। দই ও মধুর সাথে এটা মেশানো হলে এটা ত্বকের জন্য দারুণভাবে কাজ করে এবং সকালের সতেজ ভাবটা এনে দেয়।
সবার শেষে যে এসেনশিয়াল অয়েল নিয়ে আলাপ করব সেটা হচ্ছে ক্যারট সিড অয়েল। এটাতে ন্যাচারাল এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে সেজন্য অ্যান্টি-এজিং ক্রিমের ভালো বিকল্প। এটার অ্যান্টি-ফ্ল্যামাটরি পদার্থ আছে যা ত্বকের জ্বালাপোড়া ও চুলকানি কমায়। এটাতে ভিটামিন এ ও সি আছে এবং সুস্থ করার জন্য দারুণ উপকারী। ভালো উপায় হচ্ছে কয়েক ফোঁটা ক্যারট সিড অয়েল ও লেবুর রসের সাথে মিশিয়ে একটা পেস্ট বানানো। সকালে ত্বকের যত্নে এটা ব্যবহার করতে পারেন।
বোঝাই যাচ্ছে এসেনশিয়াল অয়েল অনেকভাবেই ত্বকের যত্নে উপকারী এবং এর বাইরেও আরও উদাহরণ আছে। এটার গুণগুলো জানলে এবং সেটা কাজে লাগালে ত্বক আরও ভালো হবে, সেটা ময়েশ্চারাইজড স্কিনের জন্য জজবা অয়েল দিয়ে হোক বা অ্যাকনে ফ্রি স্কিনের জন্য টি-ট্রি অয়েল দিয়ে হোক। লেমনগ্রাস অয়েল যেমন ব্রাইট স্কিনের জন্য, আবার ক্যারট সিড অয়েল স্বাস্থ্যকর স্কিনের জন্য নিশ্চিত করা যায়। এসেনশিয়াল অয়েল আসলে আপনাকে হতাশ করবে না।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন
ত্বকের সেরা সেরা এসেনশিয়াল অয়েল কোনটা?
ত্বকের জন্য কোন এসেনশিয়াল অয়েল সবচেয়ে ভালো সেটা নির্ভর করে কীভাবে আপনি এটা ব্যবহার করছেন তার পর। সব এসেনশিয়াল অয়েলেরই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য আছে। যেমন টি ট্রি অয়েল অ্যাকনে আর পিম্পলের জন্য খুব উপকারী। আবার জজবা অয়েল বেশ ভালো একটা ময়েশ্চারাইজার। রোজ জার্মেনিয়াম অয়েল ও ল্যাভেন্ডার অয়েল শুষ্ক ত্বক ঠিক করতে অনেক সাহায্য করে। অন্যদিকে ক্যারট সিড অয়েল ত্বকের জ্বালাপোড়া কমায়। সেজন্য ত্বকের জন্য কোনটা ভালো সেটা না বুঝে একটা নির্দিষ্ট তেলের নাম বলা কঠিন। তবে এটা বলা যায় মুখের জন্য জজবা অয়েল সবচেয়ে ভাল। বেশির ভাগ ফেস ময়েশ্চারাইজার ও ক্রিমে এটা পাওয়া যায়।
সরাসরি ত্বকে কি এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করা সম্ভব?
এসেনশিয়াল অয়েলের অনেক উপকারিতা আছে এবং ত্বকের ওপর নির্ভর করে সেটা আলাদা হতে পারে। তবে এগুলো বেশিরভাগই বেশ শক্তিশালী এবং কোনো বেস অয়েল বা অন্য কোনো উপাদানের সাথে না মিশিয়ে ও ঘনত্ব না কময়ে ব্যবহার করা কঠিন। সেজন্য ঠিকভাবে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার না করলে ত্বকের ক্ষতিও হতে পারে। যে বোতল থেকে তেল ব্যবহার করতে হবে সেখানেই বলা থাকে এটা কীভাবে কাজে লাগাতে হয়। যখন আপনি নিশ্চিত হবেন এটা আপনার ত্বকে ব্যবহার করা নিরাপদ, তখনই আপনি এটা ব্যবহার করতে পারেন।
উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কোন এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করবেন?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মতো অনেক নাম আছে, কিন্তু সম্ভবত উজ্জ্বল ত্বকের জন্য সবচেয়ে ভালো হতে পারে ল্যাভেন্ডার অয়েল। এটা অনেকভাবে কাজে লাগানো যায় যে তাই শুধু নয়, ল্যাভেন্ডার অয়েলের আরও অনেক গুণ আছে এবং উজ্জ্বল ত্বক এর মধ্যে শুধু একটি। এর বাইরে ক্যারট সিড অয়েল ও লেমনগ্রাস অয়েল ত্বককে উজ্জ্বল করতে কার্যকরী।
ত্বকের জন্য কীভাবে এসেনশিয়াল অয়েল মেশাবেন?
কোন এসেনশিয়াল অয়েল আপনার জন্য উপকারী সেটা জানার জন্য অবশ্যই আপনাকে পরীক্ষিত কারও পরামর্শ নিতে হবে। অনেক রকম তেল মেশালে সেটা উপকারী হতে পারে কিন্তু কিছু তেল আছে যেগুলো একসঙ্গে যায় না। এটা মাথায় রেখে এই মিশ্রণটা অনেক বেশি উপকারী হতে পারে এবং আপনার ত্বককে সুরক্ষা দিতে পারে।
মুখে কীভাবে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার করবেন?
মুখে এসেনশিয়াল অয়েল ব্যবহার অনেক পুরনো একটা প্রথা। একটা বেস অয়েলের সাথে এসেনশিয়াল অয়েল মেশান। এরপর বেজ অয়েল ঘনত্ব কমিয়ে দিলে ফেস প্যাক বা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে এটা ব্যবহার করা যায়। একই সঙ্গে এটা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াতে ও বয়স কমাতেও কার্যকরী।
তথ্যসূত্র:
https://zelenlife.com/best-jojoba-oil-moisturizer/
https://www.healthline.com/health/best-essential-oils#rose-geranium
https://www.md-health.com/lemongrass-oil-for-skin.html
https://heathersholistichealthcoaching.com/can-you-put-essential-oils-directly-on-your-skin/
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।