আপনার ত্বক এবং চুলের যত্নের জন্য একটি নতুন বছরের রেজোলিউশন তৈরি করুন
বছর শেষ হওয়ার সাথে সাথে নতুন বছরকে কোন নতুন স্বপ্ন ও আশা দিয়ে স্বাগত জানাবো সেই ভাবনা কিন্তু সবার মাথাতেই কম বেশি থাকে। প্রতি বছরই নিশ্চয়ই শুরুতে “নতুন বছর, নতুন আমি”- এই স্বপ্ন নিয়েই বছর শুরু করেন, কিন্তু ঘুরে ফিরে আবার সেই পুরোনো অভ্যাসেই কীভাবে যেন ফেরত চলে যান, তাই না? কিন্তু, চলুন এই বছরটা আমরা নতুনভাবে সাজিয়ে ফেলি। কারণ এই নতুন বছরে আপনার স্বাস্থ্য বা ডায়েটের পাশাপাশি আপনি নতুন বছরে নতুন আমি-কে খুঁজতে নিজেকে ভালোবাসার, নিজের শরীর, মন, ত্বক ও চুলের যত্ন নেয়ার শপথও করতে পারেন।
স্বাস্থ্যকর ও সুন্দর জীবন যাপনের ক্ষেত্রে নিজের শরীর, ত্বক ও চুলের যত্ন নেয়া কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় চেষ্টা করলেও রুটিন মেনে চলা আসলে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এতে করে ত্বক ও চুল ধীরে ধীরে অযত্নে নষ্ট হতে থাকে। ত্বকের যত্নে নিয়মিত, ক্লিনজিং, এক্সফলিয়েটিং ও ময়েশ্চারাইজিং জরুরি। ত্বকচর্চায় এই ধাপগুলি নিয়মিত না মেনে চললে ত্বকে অ্যাকনে ও ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। বয়সের সাথে সাথে আমাদের চুল পড়তে শুরু করে। এছাড়া পরিবেশ দূষণের কারণেও চুল নষ্ট হয়ে যায়। তাই দেরি হবার আগেই চুলে এবং মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগাতে ও ময়ল মুক্ত রাখতে চুলের যত্ন নিন। এই আর্টিকেলে আজ আপনি জানতে পারবেন কতো সহজ উপায়ে নিজের ত্বক ও চুলের যত্ন নিয়মিতভাবে নিতে পারবেন।
ত্বক পরিচর্যার সহজ উপায়:
ত্বকের যত্নে কিছু কিছু বিষয় আছে যেগুলো আবশ্যক আর কিছু আছে যেগুলো একদমই করা যাবে না। শুধুমাত্র দামি পণ্যই যে ব্যবহার করতে হবে এমন নয়, ত্বকের যত্নে আপনাকে জানতে হবে ঠিক কোন কোন কাজগুলি আপনার করা উচিত।
১। সঠিক স্কিন কেয়ার রুটিন:
ত্বকের যত্নে আপনি কত ধরনের পণ্য ব্যবহার করছেন সেটা কিন্তু জরুরি নয়। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক স্কিন কেয়ার রুটিন যদি আপনি না মেনে চলেন তাহলে ত্বক দিনে দিনে নষ্টই হবে। কাজেই সকাল এবং রাতের জন্য একটি সঠিক স্কিন কেয়ার রুটিন সবচেয়ে বেশি জরুরি। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বা গোসলের পরে ত্বক ক্লিনজিং, টোনিং ও ময়েশ্চারাইজিং খুব জরুরি। আর বাসার বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন একদম আবশ্যক একটি পণ্য।
২। মানসম্মত পণ্য ব্যবহার:
বাজার থেকে কিনুন আর প্রাকৃতিক পণ্যই ব্যবহার করুন না কেন, অবশ্যই সেটা আপনার ত্বকের উপযোগী হতে হবে। পণ্য দামি মানেই যে আপনার ত্বকের জন্য উপযোগী তা কিন্তু নয়। আবার টাকা বাঁচানর জন্য সব সময় সস্তা পণ্যও কিনতে যাবেন না। ত্বকের জন্য যেটা উপযোগী সেটাই বাছাই করুন।
৩। নিজের ত্বকের ধরন সম্পর্কে জানুন:
ত্বকের যত্ন ত্বকের ধরন বুঝে করতে হবে। শুষ্ক ত্বকের যত্ন ও তৈলাক্ত ত্বকের যত্ন কিন্তু একইরকম নয়। কাজেই ত্বকে কোনো পণ্য ব্যবহার করার আগে ত্বকের ধরন সম্পর্কে জেনে নিন।
৪। ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখুন:
সুন্দর, নরম ও কোমল ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজারের বিকল্প নেই। পরিবেশ দূষণ, বাতাসে আর্দ্রতার অভাব, ত্বকে গরম পানির ব্যবহার ইত্যাদি কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে ফেটে যায়। ময়েশ্চারাইজার ত্বক ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককে আর্দ্রতা বজায় রেখে নরম ও কোমল করে তোলে।
৫। পানির পরিমাণ বজায় রাখুন:
শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে ত্বকও রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। বিশেষ করে শীতকালে এটা বেশি হয়। ত্বকের সুস্থতার জন্য বেশি বেশি পানি পান করুন।
প্রাকৃতিক ভাবে ত্বকের যত্নে টিপস:
প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের যত্ন কীভাবে নেবেন তাই নিয়ে চিন্তিত? মুখ এবং দেহের ত্বকের যত্নে প্রয়োজনীয় টিপস দেয়া হল:
ত্বকের উজ্জ্বলতার জন্য হলুদ ব্যবহার করুন। এটি রোদে পোড়া দাগ ও ব্লেমিশ দূর করতে সহায়তা করে।
টমেটো ত্বকের পোরস টাইট করতে সাহায্য করে। এছাড়া টমেটো পেস্ট করে ব্ল্যাকহেডসের উপর মাসাজ করলে ব্ল্যাকহেডস থেকে সহজেই পরিত্রাণ পাওয়া যায়।
মধু ও দারুচিনি একসাথে মিশিয়ে মাস্ক বানিয়ে অ্যাকনের উপর লাগালে অ্যাকনে থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
চোখের নিচের ডার্ক সার্কেল থেকে মুক্তি পেতে ব্যবহার করুন আলুর রস।
চুল পরিচর্যার সহজ উপায়:
চুল সৌন্দর্য বৃদ্ধির একটি অপরিহার্য অংশ। চুলের যত্নে যা যা আপনাকে করতে হবে:
১। মাথার ত্বক পরিষ্কার রাখুন:
খুশকি ও চুলকানিমুক্ত থাকতে হলে মাথার ত্বক সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। মাথার ত্বক ঠিক মত পরিষ্কার না করলে চুল পড়ে যাওয়া শুরু হতে পারে। আর মাথার ত্বক পরিষ্কার করতে সব সময় মাইল্ড শ্যাম্পু ব্যবহার করুন।
২। চুলে অতিরিক্ত কেমিক্যাল ব্যবহার করবেন না:
চুলে নিয়মিত কালার করা, আয়রন করার কারণে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজেই চুলে স্টাইলের কারণে এগুলো খুব ঘন ঘন করা বন্ধ করুন। চুল যদি খুব লম্বা সময় শক্তভাবে বেঁধে রাখা হয়, তাতেও কিন্তু চুল পড়া শুরু হতে পারে। কাজেই হেয়ার স্টাইল করার ব্যাপারে সাবধান হোন। আর প্রতিদিন শ্যাম্পু না করে সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন শ্যাম্পু করুন।
৩। হেয়ার ট্রিটমেন্ট করুন:
পার্লারে অথবা ঘরে বসেই হেয়ার ট্রিটমেন্ট নিন। এতে করে আপনার মাথার ত্বকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান পৌঁছাবে। চুলের গোড়া শক্ত করতে পুষ্টি জরুরি। নিয়মিতভাবে তেল মাসাজ করলে চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি পৌঁছায় ফলে চুল ভেঙে যাওয়া বন্ধ হয়। তাছাড়া বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে হেয়ার প্যাক তৈরি করেও ব্যবহার করতে পারেন।
৪। চুলে পুষ্টি যোগায় এমন ধরনের খাবার গ্রহণ করুন:
চুলের যত্নে খাদ্যাভ্যাস কিন্তু খুব জরুরি। প্রোটিন এবং আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন ডিম, মাছ, মাংস, বাদাম জাতীয় খাবার চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে সহায়তা করে। তাই জাংক ফুড বাদে পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করুন যাতে আপনার চুলও জরুরি পুষ্টি পায়।
৫। সঠিক শ্যাম্পু ব্যবহার করুন:
চুলের ধরন অনুযায়ী শ্যাম্পু বাছাই করুন। চুল পড়া বন্ধ না হলে অনেক সময় বেবি শ্যাম্পু ব্যবহার করে দেখতে পারেন। কারণ এতে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ থাকেনা, ফলে চুলের ক্ষতিও হয়না।
প্রাকৃতিক ভাবে চুলের যত্নে টিপস:
কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য দিয়ে চুলের যত্ন করার চেয়ে প্রাকৃতিকভাবে চুলের যত্ন করা ভালো। এখানে কিছু ঘরোয়া টিপস দেয়া হল:
চুলে নিয়মিত ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ব্যবহার করুন। হালকা গরম করে ব্যবহার করলে উপকার পাবেন।
নারিকেল তেলের সাথে ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে ব্যবহার করলে চুলের বৃদ্ধি বাড়বে।
চুলের গোড়া মজবুত করতে ডিম, দই ও মেহেদী দিয়ে হেয়ার প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করুন।
নরম ও কোমল চুলের জন্য কলা এবং মধুর প্যাক ব্যবহার করুন।
নতুন বছর মানেই নতুন আশা, নতুন সুযোগ, নতুন শুরু। তাই নিজেকে আরেকটু ভালোভাবে যত্ন করতে ত্বক ও চুলের জন্য প্রাকৃতিকভাবে কেয়ার রুটিন শুরু করতেই পারেন। নিজের প্রতি যত্ন নিলে ভিতর থেকেই ভালোলাগা কাজ করে। এবং এরপর যখনই নিজেকে আয়নার সামনে দেখবেন, দেখতে পাবেন সুন্দর ও আত্মবিশ্বাসী একজন মানুষ দাঁড়িয়ে আছে।
সাধারণ প্রশ্ন:
১। আমার ত্বক ও চুলকে সাস্থ্যোজ্জ্বল কীভাবে রাখবো?
চুল ও ত্বকের যত্ন মানেই গাদা গাদা পণয় ব্যবহার করা নয়। যা কিছু আপনার চুল ও ত্বকের ক্ষতি করে, সেসব এড়িয়ে চলুন। প্রোটিন, ভিটামিন ও আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খান। চুলের যত্নে নিয়মিত চুলের ফেটে যাওয়া আগা ছেটে ফেলুন। চুলে খুব বেশি আয়রন ব্যবহার করবেন না। আর সিল্কের বালিশের কভার ব্যবহার করুন। ত্বকের যত্নে সূর্যের আলো এড়িয়ে চলুন, নিয়মিত স্ক্রাব করুন ও ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। ত্বকে ও চুলে পানির পরিমাণ বজায় রাখুন। এবং সবচেয়ে জরুরি, পরিমিত পরিমাণ ঘুমান।
২। উজ্জ্বল ত্বকের জন্য কী কী খাবার খেতে হবে?
প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের যত্ন মানে ত্বকের যত্নের পাশাপাশি সুষম খাবার খাওয়া। বিশেষ করে যদি ভিতর থেকেই ত্বকের উজ্জ্বলতা চান। কাজেই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় ফল ও সবজি বেশি পরিমাণ থাকতে হবে। অ্যাভোক্যাডো, কমলা, তরমুজ, পেঁপে, কুমড়া, গাজর, টমেটো খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়।
৩। চুল কতক্ষণ পর পর ধুতে হবে?
চুল খুব ঘন ঘন ধুতে নেই। প্রতিদিন চুল ধোয়ার ফলে চুলের প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয় এবং চুল শুষ্ক হয়ে যায়। তাই সপ্তাহে একদিন বা দুইদিন চুল ভালোভাবে ধুয়ে ফেলুন।
Reference:
https://www.luxyhair.com/blogs/hair-blog/healthy-hair-habits
https://www.luxyhair.com/blogs/hair-blog/healthy-hair-habits
[sc name=”make-a-new-year-resolution-to-care-for-your-skin-and-hair-bn”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।