রূপচর্চায় বিস্ময় নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল
রূপচর্চায় ঘর থেকে যেসব জিনিস করা যায়, এর মধ্যে নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েলের মিশ্রণ সবচেয়ে ভালো কাজে দিতে পারে। মুখ ও ত্বকে নারিকেল তেল মাখার উপকারিতা আমরা সবাই কমবেশি জানি, তবে প্রতিদিনের রূপচর্চায় চুল ও ত্বকের জন্য অলিভ অয়েলের উপকারিতা হয়তো অনেকেরই ঠিকমতো জানা নেই। অলিভ অয়েলের নির্যাস ময়েশ্চারাইজার, রিংকেল রিমুভার, কন্ডিশনারসহ আরও নানা কাজে ব্যবহার করা যায়।
নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েলের এই মিশ্রণ তৈরি করা বেশ সহজ কারণ এই দুইটিই আমাদের রান্নাঘরে সহজলভ্য। বোনাস হিসেবে এই মিশ্রণ অনেক উপায়ে কাজে লাগানো যায়। যেমন ১ টেবিল চামচ অলিভ অয়েলের সাথে ৩ টেবিল চামচ নারিকেল তেল তাৎক্ষণিক একটা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে যেমন কাজে লাগানো যায়, তেমনি এটি দিয়ে স্কাল্পে মাসাজ করে চুলের শুষ্কতাও দূর করা যায়।
ত্বকে নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল ব্যবহার
চিটচিটে ভাব থাকার কারনে ত্বকে তেল মাখা কখনো বিরক্তিকর হতে পারে। কিন্তু নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল একসাথে ব্যবহার করলে যে উপকারিতা পাওয়া যায়, বিশেষ করে অলিভ অয়েলের, সেটা আপনি নিশ্চয় মিস করতে চাইবেন না! এই দুইটি ত্বককে যেমন উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে, তেমনি নরমও রাখে।
নারিকেল তেল
- ত্বকে নারিকেল তেল মাখার অনেক উপকারিতা আছে। বিশেষ করে ভার্জিন নারিকেল তেল হলে সেটার উপকারিতা আরও বেশি। কচি নারিকেল থেকে এই তেল আহরণ করা হয়, তাই এরপর স্বাস্থ্যগত উপকারিতাও অনেক।
- লরিক এসিড থাকার কারণে নারিকেল তেল দারুণ একটা ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে।
- এর অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল গুণের কারণে অ্যাকনে সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ করে
- অ্যান্টি-ইনফ্লামেটরি বৈশিষ্ট্যের কারণে এটা ত্বকে সুরক্ষার আবরণ সৃষ্টি করে।
- লো-বার্থ ওয়েট শিশুদের ক্ষেত্রে নারিকেল তেল বেবি মাসাজেও কার্যকর।
- নারিকেল তেলে ভিটামিন ই আছে যেটা স্বাস্থ্যকর ত্বক নিশ্চিত করে। একই সঙ্গে ভিটামিন ই শরীরের স্ট্রেচ মার্কও দূর করে।
- নারিকেল তেল দিয়ে ত্বক মাসাজ করলে সানবার্ন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
- বাজারের দামি প্রোডাক্টের চেয়ে নারিকেল তেল আরও কার্যকর মেকআপ রিমুভার হিসেবে কাজ করে।
- নারিকেল তেলের অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে ত্বকের বিভিন্ন কন্ডিশন যেমন অ্যাকনে, সেলুলাইটিস ও অ্যাথলেটস ফুট প্রতিরোধ করে।
অলিভ অয়েল
- ত্বকে ও মুখের যত্নে ও একটা সতেজ ভাব এনে দিতে অলিভ অয়েল বেশ কার্যকর। আমাদের ত্বক ও মুখ বেশ সংবেদনশীল সে কারণে এর বাড়তি যত্ন দরকার। অলিভ অয়েলের বেনেফিট নিচে দেওয়া হলো।
- অলিভ অয়েলে প্ল্যান্ট-বেজড স্কোয়ালিন আছে, এটা এমন একটা কেমিক্যাল কম্পাউন্ড যেটা ট্রান্স-এপিডার্মাল ওয়াটার লস কমায় ও ত্বকের নমনীয়তা রক্ষা করতে সাহায্য করে।
- এই অয়েলে অ্যান্টঅক্সিডেন্ট আছে যেটা মুখের যত্নে অলিভ অয়েলের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।
- অলিভ অয়েল পায়ের পাতা ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
- এটি ত্বক উজ্জ্বল ও সাদা করতে ব্যবহার করা যায়।
- এটা চোখের পাতা ও ভুরুকে সুন্দর ও বড় করতে সাহায্য করে।
- নখের ভেতরের দিকে আরেকটু অয়েল দিলে আপনার কিউটিকল আরও বেশি সফট হবে।
- এটা স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করা যায় ও কনুই, হাঁটু, পায়ের পাতার মতো একটু শক্ত জায়গায় মাসাজ করতে ব্যবহার করা যায়।
- অলিভ অয়েল ত্বকের ভাজ প্রতিরোধে সাহায্য করে। চোখের ওপর মালিশ চোখের পাতায় ভাজ প্রতিরোধে সাহায্য করে।
কোকোনাট ও অলিভ অয়েল ব্যবহারে চুলের উপকারিতা
চুলের যত্নে নারিকেল তেল ব্যবহারের উপকারিতা কারও অজানা নয়। অলিভ অয়েলের সাথে মেশালে শুষ্কতা, চুলের আগায় ফাটল, চুল ভেঙে পড়াসহ নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে। সেই সঙ্গে চুলের জন্য অলিভ অয়েলের অনেক গুণও আছে।
নারিকেল তেল
- ভিটামিন ই, প্রোটিন ও নারিকেল তেলের মিনারেল অয়েল চুলের শুষ্কতা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এটা চুলের ফলিকলের ভেতর পুষ্টি যুগিয়ে চুলকে আরও উজ্জ্বল ও নরম করে তোলে।
- নারিকেল তেলের পুষ্টি উপাদান চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এটা চুল পড়ার হার কমিয়ে দেয় এবং চুলের আরও ভেঙে পড়া, ঝরে পড়া ও আগা ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
- নারিকেল তেল চুলের অনেক গভীরে ঢুকে চুলকে বাইরের তাপ ও ক্ষতিকর আবহাওয়া থেকে রক্ষা করে।
- নারিকেল তেল খুশকি, উকুন ও ব্যাকটেরিয়া-ছত্রাকের সংক্রমণ রোধ করে।
অলিভ অয়েল
- অলিভ অয়েল যে চুলের জন্য ভালো সেটা নিচের আবিষ্কারগুলো থেকেই বোঝা যায়।
- অলিভ অয়েল চুলের ডিপ কন্ডিশনিং করে চুলকে নরম রাখে। একই সঙ্গে চুলকে আরও নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে।
- ওলিভ অয়েলের ঘনত্ব চুলের ময়েশ্চারাজিং এর কাজটা আরও ভালোভাবে করে।
- স্কাল্পে জ্বালাপোড়া প্রতিরোধ করে খুশকি দূর করার কাজও করতে পারে এটি।
- নারিকেল তেলের সাথে মেশালে চুল পড়া বন্ধ হয়।
নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েলের কিছু সাধারণ বৈশিষ্ট্য
- অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট আছে
- অ্যান্ট-এজিং ইনগ্রেডিয়েন্ট হিসেবে কাজ করে
- ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও কাজ করে
- চুলকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে
- চুলের ও স্কাল্পের সমস্যা রোধ করে।
নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল বাসায় রাখার চেষ্টা করুন যেন আপনার ত্বকের বা চুলের যত্নের জন্য বাইরের দামি বা কৃত্রিম উপাদানের সাহায্য নিতে না হয়। নিশ্চিতভাবেই হতাশ হবে না আপনি।
কিছু বহুল ব্যবহৃত প্রশ্ন
১, নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল কীভাবে চুল গজাতে সাহায্য করে?
নারিকেল তেল ও অলিভ অয়েল চুল গজাতে নানাভাবে সাহায্য করে। নারিকেল তেলে থাকা ভিটামিন ও ফ্যাটি এসিড চুলের কিউটিকলের ভেতরে ঢুকে স্কাল্পে পুষ্টি জোগায় যেটা চুলের বৃদ্ধিতে অনেকটা সাহায্য করে। একই সঙ্গে অলিভ অয়েলেরও অনেক উপকারিতা আছে। অলিভ অয়েল চুলের ইলাস্টিসিটি বাড়িয়ে চুলকে আরও শক্ত রাখে ও চুল পড়া বন্ধ করে। অলিভ অয়েলের যথেষ্ট ভালো পরিমাণ অ্যান্টি অক্সিডেন্ট থাকে, যেটা স্কাল্পের স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে।
২। অলিভ অয়েল রাতে দিয়ে রাখা কি ঠিক?
অলিভ অয়েল রাতারাতি ব্যবহার করা যায় তবে তেলতেলে বা অ্যাকনে প্রোন ত্বকের মধ্যে যাদের পোর-ক্লগিং আছে তারা ব্রেকআউট এড়াবার জন্য এটা সপ্তাহে এক বা দুইবার ব্যবহার করতে পারেন। চুলের জন্য অলিভ অয়েলের অনেক উপকারিতা আছে। এটা অন্য তেলের সাথে মিশিয়ে সারারাত চুলে রেখে দেওয়া যায়।
৩। চুলে অলিভ অয়েলের সাথে আরে কী মেশাতে পারি?
অলিভ অয়েল পারফেক্ট একটা তেল যেটা নারিকেল তেল, ক্যাস্টর অয়েল, আলমন্ড অয়েলের সাথে মিশিয়ে চুলকে আরও পুষ্টি এনে দিতে পারে। এর সঙ্গে অলিভ অয়েলের সাথে আরও কিছু হেয়ার প্যাক যেমন মধু, ডিম, দুধ বা অ্যাভোকাড মেশানো যায়।
৪। চুলে কী পরিমাণ নারিকেল তেল ব্যবহার করা উচিত?
এটা আসলে মানুষ থেকে মানুষের ওপর নির্ভর করে। যাদের চুলের শুষ্কতার সমস্যা আছে তারা একদিন পর পর নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারে। আবার যারা চুল তেলতেলে তারা সপ্তাহে দুইবার বা তিনবার এটা ব্যবহার করতে পারে।
https://coconutoils.com/coconut-oil-vs-olive-oil-hair/
https://www.evergreenbeauty.edu/beauty-tips/the-benefits-of-olive-oil-for-hair-regrowth/
https://https://www.google.com/search?client=firefox-b-d&q=how+olive+oil+grows+hair
[sc name=”amazing-beauty-hacks-with-coconut-and-olive-oil-bn”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।