শীতে চুলের সাধারণ কিছু সমস্যা ও তার সমাধান
- নারিকেল দুধ বা আর্গান অয়েল হাইড্রেটিং হেয়ার মাস্ক তৈরিতে দারুণ কার্যকর উপাদান হিসেবে কাজ করে।
- ঘুমানোর সময় বালিশে সিল্ক বা সাটিনের কভার ব্যবহার করুন।
- নারিকেল তেল মাথার ত্বক ও চুলে ভালোভাবে মাসাজ করে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললেই শুষ্কভাব দূর হয়ে যাবে।
শীতে জীবন যাত্রায় যেমন কিছুটা পরিবর্তন আসে তেমনি শরীর, ত্বক ও চুলেও কিছুটা পরিবর্তন আসে। এ সময় আবহাওয়া কিছুটা রুক্ষ হয়ে যাওয়ায় তার প্রভাব ত্বক ও চুলে দারুণভাবে পড়ে। শীতকালে বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে বাতাসের শুষ্কতার কারণে চুল ও মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। এছাড়া মাথার ত্বক ও চুলে আরো নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। শুষ্কতার কারণে চুলে খুশকি ও মাথার ত্বকে চুলকানি হতে পারে। তাছাড়া চুল পড়ে যাওয়া, গোড়া নরম হয়ে যাওয়া, চুল নিষ্প্রাণ হয়ে যাওয়া, আগা ফেটে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে।
এইসব সমস্যার কারণে শীতে চুলের একটু বাড়তি যত্ন নিতে হয়। শীতে চুলের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা ও সেই সমস্যার সমাধানে কীভাবে চুলের যত্ন নেবেন সেগুলোই বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
খড়ের মতো সোজা ও ছোট ছোট এলোমেলো চুল-
বাতাসে আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে চুলে শুষ্কতা অনুভুত হয়। চুল শুষ্ক হয়ে যাওয়ার ফলে কিছুটা ভঙ্গুর হয়ে যায়। তখন এটাকে অনেকটা শুকনো খড়ের মতো শক্ত দেখায়। বিশেষ করে যাদের চুল কোকড়া, তাদের শীতকালে এই সমস্যা খুব বেশি করে দেখা দেয়।
সমাধান-
চুল শুকাতে নানা রকম হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করা কমানো এই সমস্যার সমাধান হতে পারে। হেয়ার ড্রায়ারের গরম ভাপে চুল নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া শীতে চুলে আর্দ্রতার পরিমাণ বজায় রাখুন। হাইড্রেটিং শ্যাম্পু, এবং কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করার সময় মাস্কের উপাদানগুলি হাইড্রেটিং কি না তা দেখে নিন। নারিকেল দুধ বা আর্গান অয়েল হাইড্রেটিং হেয়ার মাস্ক তৈরিতে দারুণ কার্যকর উপাদান হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ঘুমানোর সময় বালিশে সিল্ক বা সাটিনের কভার ব্যবহার করুন। এতে করে চুলের ময়েশ্চার বালিশের কভারে লেগে চুলের আর্দ্রতা কমে যাবে না। এতেও সমস্যা দূর না হলে রাতে ঘুমানোর আগে লিভ-ইন যে কোনো ময়েশ্চারাইজার চুলে লাগিয়ে ঘুমান।
স্ট্যাটিক হেয়ার-
বাতাসে আর্দ্রতা কমে গেলে চুল বিদ্যুৎ পরিবাহী হয়ে যায়। ফলে চুল সোজা হয়ে থাকে সেটা দেখতে খুব খারাপ দেখায়। শীতকালে যেহেতু বাতাসে আর্দ্রতা এমনিতেই কম থাকে তাই এ সময় চুল বিদ্যুৎ পরিবাহী হিসেবে কাজ করে এবং বাতাস থেকে ইলেক্ট্রিকাল চার্জ গ্রহণ করে। তাই এরকম সোজা চুলের সমস্যা সমাধানে শীতকালে চুলের একটু বেশি যত্ন নিতে হয়।
সমাধান-
চুলের আর্দ্রতার পরিমাণ বজায় রাখার চেষ্টা করুন। এতে করে শুষ্ক বাতাসের প্রভাব চুলের উপর কম পড়বে। চুলের ধরন বুঝে একটু বেশি হাইড্রেটিং শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। এছাড়া চাইলে ট্যুরম্যালাইন বা আয়নিক হেয়ার ড্রায়ার ব্যবহার করতে পারেন। এই হেয়ার ড্রায়ারগুলো সাধারণ হেয়ার ড্রায়ারের মতো না। এগুলো অন্য হেয়ার ড্রায়ারের মতো চুলের আর্দ্রতা নষ্ট করে না। এছাড়া কিছু ড্রায়ার শিট ব্যাগে রেখে দিতে পারেন। চুলে এলোমেলো ভাব মনে হলে ড্রায়ার শিট মাথায় আলতো করে বুলিয়ে নিতে পারেন। অথবা হাতের তালুতে হ্যান্ড ক্রিম নিয়ে চুলে হালকা করে লাগিয়ে নিলেও এলোমেলোভাব দূর হয়ে যায়। সব শেষে শোবার বালিশে সিল্কের কভার ব্যবহার করুন।
চুলের আগা ফেটে যাওয়া-
চুলের আগা ফেটে যাওয়া খুব বাজে ধরনের সমস্যা কারণ আগা ফেটে গেলে চুলের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়। তাই এর সবচেয়ে সহজ সমাধান হলো ফেটে যাওয়া আগা কেটে ফেলা। তবে সব সময় পার্লারে যাওয়ার সুযোগ ও সময় হয়ে ওঠে না। তাই কেটে ফেলার আগ পর্যন্ত এর যত্ন নেয়াই সমাধান।
সমাধান-
চুলের আগা ফেটে গেলে নিচের দিকে দেখতে অনেকটা ঝাড়ুর আগার মত লাগে। এতে করে কোনো ধরনের হেয়ার স্টাইলই করা যায়না, দেখতেও বাজে দেখায়। এরকম সময় চুলের আগার দিকের ফেটে যাওয়া অংশ পেচিয়ে নিয়ে আশে পাশের যে ফাটা চুলের অংশ বেরিয়ে থাকবে সেগুলো কেটে ফেললেই সমস্যার অনেক খানি সমাধান হয়ে যাবে। এছাড়া আপনি চাইলে চুলের ভাঙা অংশে বাইন্ডিং ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন।
জট পাকানো চুল-
শীতে মোটা এবং বড় কলার জাতীয় জ্যাকেট ও স্কার্ফ পরার কারণে ঘাড়ের কাছের চুলগুলো দ্রুত জট পাকিয়ে যায়। এটা দেখতে খুব খারাপ দেখায়। যে কোনো হেয়ার স্টাইল সহজেই নষ্ট হয়ে যায়।
সমাধান-
মোটা কলার সহ জ্যাকেট পরলে চুল পিছনে বা সাইডে বেণি করে রাখুন। এছাড়া মাথার উপরের দিকে উঁচু করে খোঁপাও করে রাখতে পারেন। এতে করে আপনার চুল জটমুক্ত থাকবে। তবে চুল যদি নিচের দিক রাখতেই হয় তবে কানের দু পাশ থেকে সব চুল একসাথে করে একটু পনিটেইল করে রাখুন। এতে করে চুল জটমুক্ত থাকবে।
মাথার ত্বকের শুষ্কতা ও চুলকানি-
শীতে ঘরের ভিতরের গরম আবহাওয়া ও বাইরের শুষ্ক আবহাওয়া, এই দুই প্রভাবে ত্বক যেমন শুষ্ক হয়ে যায়, মাথার ত্বকও সেই সাথে শুষ্ক হয়ে যায়। আর মাথার ত্বক শুষ্ক হয়ে গেলে চুলকানি দেখা দেয় যেটা শীতের অন্যতম প্রধান সমস্যা।
সমাধান-
যদিও শ্যাম্পু মাথার ময়লা দূর করতে সাহায্য করে, কিন্তু সেই সাথে মাথার ত্বক শুষ্কও করে তোলে। তাই শীতে কম শ্যাম্পু করে ময়েশ্চারযুক্ত কন্ডিশনার ব্যবহার করা উচিত। এছাড়া মাথার ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে নারিকেল তেল হেয়ার মাস্ক হিসেবে ব্যবহার করা যায়। নারিকেল তেল মাথার ত্বক ও চুলে ভালোভাবে মাসাজ করে ১০ মিনিট পর ধুয়ে ফেললেই শুষ্কভাব দূর হয়ে যাবে। তারপরেও মাথার ত্বকে চুলকানি বেড়ে গেলে জোরে জোরে নখের আচড় দেয়া উচিত না। আলতোভাবে হাতের তালু দিয়ে ঘষে নিতে পারেন। পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
টুপি পরার কারণে চুলের এলোমেলো ভাব-
শীতে ঠান্ডা থেকে বাঁচার জন্য টুপি পরতেই হয়। তবে টুপি পরার কারণে চুলের আর্দ্রতা অনেকটাই কমে যায় এবং চুল শুষ্ক হয়ে যায়।
সমাধান-
শীতে মাথায় টুপি পরার আগে চুলে ময়েশ্চারযুক্ত কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। যেসব কন্ডিশনার চুলে ব্যবহার করার পর ধুয়ে ফেলতে হয়না সেই জাতীয় ময়েশ্চারযুক্ত কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। চুলে যদি ব্লো-ড্রাই করেন তাহলে চুলের তাপমাত্রা ঠান্ডা না হওয়া পর্যন্ত টুপি পরবেন না। চুলে ব্লো-ড্রাই এর ভাপ থাকা অবস্থায় টুপি পরলে চুল নিস্তেজ হয়ে যায়, নিষ্প্রাণ ও রুক্ষ দেখায়। এছাড়া টুপি পরে কোথাও যাওয়ার পর যখন টুপি খুলবেন তখন চুল একবার উলটে ঝাঁকিয়ে নিন, এতে চুলের এলোমেলো ও রুক্ষ ভাব অনেকটাই দূর হয়ে যাবে।
নিষ্প্রাণ ও নিস্তেজ চুল-
গরমে চুলে প্রাকৃতিকভাবেই উজ্জ্বলতা থাকে। কিন্তু শীতকালে হয়ে যায় এর উলটো। এ সময় চুলে একটা নিষ্প্রাণ ভাব লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া চুলে আরো বিভিন্ন রকম সমস্যার ফলে একদম নিস্তেজ হয়ে পড়ে।
সমাধান-
শীতে আপনার চুলের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সবচেয়ে কার্যকর সমাধান হলো হালকা কোনো সেরাম ব্যবহার করা। সেরাম চুলের হারিয়ে যাওয়া উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি চুলকে করে তোলে ঝলমলে ও সতেজ। আর্গান, জোজোবা অয়েল ও সানফ্লাওয়ার অয়েলের সমন্বয়ে তৈরি যে কোনো হেয়ার সেরাম আপনার চুলের প্রাণ ফিরিয়ে আনবে ও চুলকে করে তুলবে মসৃণ, নরম ও কোমল।
শীতে চুলের সমস্যা ও সমাধান নিয়ে সাধারণ কিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর:
১। শীতে চুলের পানির পরিমাণ কীভাবে বজায় রাখবো?
শীতে শুষ্ক আবহাওয়ার জন্য চুলে আর্দ্রতা ও পানির পরিমাণ কমে যায়। ফলে চুল শুষ্ক হয়ে যায়। এই সমস্যা সমাধানে রাতে চুলে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে তেল ব্যবহার করা যেতে পারে। যেসব তেলে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ বেশি সেসব তেল ব্যবহার করুন। পাশাপাশি রাতে মাথায় সিল্কের স্কার্ফ জড়িয়ে ঘুমাতে পারেন। বালিশের কভারেও সিল্ক বা সাটিনের কভার ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া চুলের স্বাস্থ্য রক্ষার্থে প্রতিদিন নিয়মিত পানি খান।
২। শীতকালে চুলের জন্য তেল ব্যবহার করা কি ভালো?
শুষ্ক চুল তেল দ্রুত শুষে নিতে সাহায্য করে। শুষ্ক চুলে নানা রকম সমস্যার কারণে ময়েশ্চার ও হাইড্রেশনের পরিমাণ বজায় রাখা জরুরি। চুলে ময়শ্চার হিসেবে তেল খুব ভালো কাজ করে। তাই চুলে শীতকালে প্রতিদিন কয়েক ফোঁটা তেল মাসাজ করলে চুল প্রয়োজনীয় পুষ্টি পায়। ফলে চুল ভেঙে যাওয়া প্রতিরধ করা সহজ হয়।
৩। কোন কোন উপায়ে আমার চুলের স্বাস্থ্য শীতকালে সুন্দর থাকবে?
শীতকালে চুল ভালো রাখার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো চুলের আর্দ্রতা বজায় রাখা। যেহেতু চুল শুষ্ক হয়ে যায় তাই চুলে পুষ্টি যোগান দেয়া জরুরি এ সময়। এছাড়া চুলে অতিরিক্ত গরম পানি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। চুলে অতিরিক্ত হিট ব্যবহার করে ব্লো ড্রাই করা, ভেজা চুলে বাইরে যাওয়া, এসবের কারণেও শীতে চুল নষ্ট হয়ে যায়। তাই চুলের যত্নে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করার পাশাপাশি অন্য সব নিয়ম মেনে চলুন।
শীতের রুক্ষ আবহাওয়াতেও আপনি চাইলে নিজের চুলের সৌন্দর্য বজায় রাখতে পারেন সহজেই। চুলের সমস্যা ও ধরন বুঝে সেই অনুযায়ী চুলের যত্ন নিলে এই শীতেও আপনার থাকবে ঝলমলে, মসৃণ ও উজ্জ্বল।
উল্লেখ্য যে, উপরের টিপস এবং উত্তরগুলি সাধারণ জ্ঞান ও সাধারনভাবে আহরিত তথ্য যা কোনওভাবেই স্কিনকেয়ার বিশেষজ্ঞের বা চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বা চিকিৎসার জন্য দয়া করে আপনার ডাক্তার বা চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
Reference:
https://www.mockingbirdsalon.com/blog/2017/12/14/14-ways-to-keep-your-hair-healthy-in-winter
https://www.redken.com/blog/haircare/what-causes-hair-static-and-7-ways-to-fight-it
https://www.mockingbirdsalon.com/blog/2017/12/14/14-ways-to-keep-your-hair-healthy-in-winter
https://www.luxyhair.com/blogs/hair-blog/winter-hair-care
https://www.hairclub.com/blog/10-best-winter-hair-care-tips/
[sc name=”winter-bothering-you-common-hair-issues-and-how-to-fix-them”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।