সব ধরনের চুলের যত্নে কার্যকরী নারিকেল তেলের হেয়ার মাস্ক
- হেয়ার গ্ল্যান্ড থেকে অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদনের ফলে মাথার ত্বক ও চুল তৈলাক্ত হয়।
- চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টি বজায় রাখতে তৈলাক্ত চুলের নিয়মিত যত্ন প্রয়োজন।
- নারিকেল তেল চুলের অতিরিক্ত পানি শোষণ করে চুল পড়ে যাওয়া রোধ করে।
- নারিকেল তেলে প্রচুর ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা চুলের শুষ্কভাব দূর করতে সাহায্য করে।
ঘন কালো চুলের যত্নে নারিকেল তেল সেই আদি যুগ থেকেই ব্যবহার হয়ে আসছে। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সব ঋতুতেই চুলের পুষ্টির জন্য চাই বাড়তি যত্ন। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আগেও চুলের বাড়তি সৌন্দর্যের জন্য নানারকম যত্নের প্রয়োজন পড়ে। তবে চুলের ধরন বুঝে এক এক ধরনের চুলের জন্য এক এক রকম যত্নের প্রয়োজন হয়।
দেখে নেয়া যাক বিভিন্ন রকম চুলের যত্নে নারিকেল তেলের মাস্ক কীভাবে উপকার করে।
তৈলাক্ত চুল:
হেয়ার গ্ল্যান্ড থেকে অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদনের ফলে মাথার ত্বক ও চুল তৈলাক্ত হয়। বারবার শ্যাম্পু করার পরেও এই তৈলাক্ত ভাব যায় না। ফলে চুলে কোনো হেয়ার স্টাইল তো করা যায়ই না, ঝলমলে ভাবও ফিরিয়ে আনা কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।
চুলের অতিরিক্ত তৈলাক্ত ভাব দূর করতে ও চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে নারিকেল তেল ও ডিম দিয়ে তৈরী দারুণ একটি হেয়ার মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপাদানসমূহ:
- ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল
- ১টি ফেটানো ডিম
নির্দেশনা:
- নারিকেল তেল ও ডিম ভালোভাবে মিশিয়ে চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ভালোভাবে লাগিয়ে নিন।
- ৩০ মিনিট পর ঠান্ডা পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
নারিকেল তেল ও ডিম একসাথে মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুলের অতিরিক্ত তেল চিটচিটে ভাব দূর হয়। নারিকেল তেলে রয়েছে লরিক এসিড যা চুলকে অতিরিক্ত পানি শোষণ করা থেকে রক্ষা করে এবং চুলের প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ডিমের কুসুমে রয়েছে এলবুমিন নামে একটি পদার্থ যা চুল এবং মাথার ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল দূর করতে সাহায্য করে।
এই মাস্ক চুলের প্রোটিনের মাত্রা বজায় রাখে এবং চুলের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রাখে। মনে রাখা উচিত, চুলের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পুষ্টি বজায় রাখতে তৈলাক্ত চুলেও নিয়মিত যত্ন প্রয়োজন।
কম্বিনেশন চুল:
কম্বিনেশন চুল বলতে সাধারণত বোঝানো হয় তৈলাক্ত স্কাল্প কিন্তু চুলগুলো শুষ্ক। অর্থাৎ মাথার ত্বকে হাত দিলে তৈলাক্ততা অনুভব করবেন কিন্তু চুলের মাঝারি অংশ থেকে আগার দিকে একদম শুষ্ক চুল। এ ধরনের চুলের জন্য প্রয়োজন বাড়তি যত্ন। কারণ মাথার ত্বক তৈলাক্ত হলেও চুলের আগা শুষ্ক হওয়ায় দ্রুত চুলের আগা ফেটে যায় ও চুল সহজেই পড়ে যায়। এর কারণে চুলের বৃদ্ধিও সেভাবে হতে পারে না।
কম্বিনেশন চুলের জন্য চাই বাড়তি পরিচর্যা। নারিকেল তেল, এভোক্যাডো ও মধুর তৈরী এই হেয়ার মাস্কটি কম্বিনেশন চুলের পরিচর্যার জন্য দারুণ উপকারী।
উপাদানসমূহ:
- ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল
- ১/২ এভোক্যাডো
- ১ টেবিল চামচ মধু
নির্দেশনা:
- এভোক্যাডো চামচের সাহায্যে ভালো করে ভর্তা করে নিন। নারিকেল তেল ও মধু এর সাথে মিশিয়ে মাস্ক তৈরী করুন।
- স্কাল্প থেকে গোড়া ও আগা পর্যন্ত ভালোভাবে মালিশ করে ১ ঘন্টা রেখে দিন।
- হালকা শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। চুল ধোয়ার সময় চুলের গোড়ায় বেশি মাসাজ না করে মাথার ত্বকে আঙুলের সাহায্যে মাসাজ করুন।
নারিকেল তেল চুলের অতিরিক্ত পানি শোষণ করে চুল পড়ে যাওয়া রোধ করে। পাশাপাশি এভোক্যাডো চুলকে প্রাকৃতিকভাবে কন্ডিশনিং করে এবং মাথার ত্বকের তৈলাক্ততা দূর করে। এভোক্যাডোতে রয়েছে এমিনো এসিড যা চুলের প্রাকৃতিক আর্দ্রতা ধরে রাখতেও সাহায্য করে। চুলের ফলিকলস বৃদ্ধি করতে মধু সাহায্য করে। মধু হিউমেকট্যান্ট সমৃদ্ধ হওয়াতে চুলের গোড়া শক্ত করে এবং চুলের রেশমি ভাব ফিরিয়ে আনে।
এই হেয়ার মাস্কটি কম্বিনেশন চুলে সপ্তাহে একদিন ব্যবহারে চুল পড়া রোধ হয় এবং চুলের নরম, কোমলভাব বজায় থাকে।
স্বাভাবিক চুল:
নরমাল বা স্বাভাবিক চুল নিয়মিত পরিচর্যা না করে খুশকি, চুল পড়ে যাওয়া সহ নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই নরমাল চুলের জন্য রয়েছে খুব সহজেই নারিকেল তেল দিয়ে তৈরী একটি হেয়ার মাস্ক।
উপাদানসমূহ:
- ৩ টেবিল চামচ নারিকেল তেল
- ২ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল
- কয়েক ফোঁটা এসেনশিয়াল অয়েল
নির্দেশনা:
- সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে ভালোভাবে মাথায় এবং চুলে মালিশ করুন।
- ২ ঘন্টা পর শ্যাম্পু করে ফেলুন
নরমাল চুলে তৈলাক্ততা এবং শুষ্কতার ভিতর ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। নারিকেল তেল নরমাল চুলের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। এ ছাড়া মাথার ত্বকের প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে। অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই যা চুলকে আর্দ্র রাখতে সহায়তা করে। এই মাস্কটি একটি হাইড্রেটিং মাস্ক যা চুলকে প্রাকৃতিক ভাবে কন্ডিশনিং করে চুলের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা ধরে রাখে এবং চুলকে করে তোলে মোলায়েম ও সিল্কি।
শুষ্ক চুল:
রুক্ষ ও শুষ্ক চুল নিয়ে একটি বড় চিন্তা হচ্ছে, যতোই শ্যাম্পু করা হোক, এটি তবুও কেমন নিষ্প্রাণ থাকে। তাই শুষ্ক চুলে প্রাণ ফিরিয়ে আনতে নারিকেল তেলের একটি মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপাদানসমূহ:
- ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল
- ১/২ কলা
- ১ টেবিল চামচ টক দই
নির্দেশনা:
- কলা চামচ দিয়ে ভালো করে ফেটে নিন।
- কলার ভিতর নারিকেল তেল ও টক দই অল্প অল্প করে মিশিয়ে মাস্ক তৈরী করুন।
- মাথার ত্বকে ও চুলে ভালোভাবে মাস্কটি লাগিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে শ্যাম্পু করে ফেলুন।
নারিকেল তেলের এই মাস্কটি সপ্তাহে একদিন ব্যবহার করা যেতে পারে। নারিকেল তেলে প্রচুর ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা চুলের শুষ্কভাব দূর করতে সাহায্য করে। পাকা কলায় ভিটামিন রয়েছে যা চুলের গোড়ায় পুষ্টির যোগান দেয়। টক দইয়ে রয়েছে ল্যাক্টিক এসিড যা শুষ্ক চুলে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে সহায়তা করে।
এই তিনটি উপাদান একসাথে মিশিয়ে মাস্ক ব্যবহারে শুষ্ক চুল ভেঙে পড়া কমে যায়, চুল হয়ে ওঠে ঝলমলে, কোমল ও উজ্জ্বল।
চুলের রকমভেদে চুলের পরিচর্যা এক এক রকম হয়। তবে সব ধরনের চুলই ময়েশ্চারাইজ করা জরুরি। তাই চুল অনুযায়ী বেছে নিন পছন্দের নারিকেল তেলের হেয়ার মাস্ক।
Reference link:
Oily hair:
https://www.healthline.com/health/coconut-oil-hair-mask#recipe-variations
https://www.bebeautiful.in/all-things-hair/hair-concerns/ways-to-cure-an-oily-scalp
Combination hair:
https://www.youtube.com/watch?v=3PACs8iHPPU
https://www.luxyhair.com/blogs/hair-blog/4-diy-hair-masks-for-your-hair-problems
https://www.luxyhair.com/blogs/hair-blog/7-diy-hair-masks-we-know-youll-love
Normal hair:
https://www.youtube.com/watch?v=NPVF2OxM_Q4
Dry hair:
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।