যে সকল ত্বকের যত্নের টিপস অবলম্বন করে ইভা মেনডেস তার তারুণ্য ধরে রেখেছেন
- আমেরিকান অভিনেত্রী, মডেল এবং ব্যবসায়ী ইভা মেন্ডেস বিশ্বজুড়ে একজন বিউটি আইকন হিসেবে বিবেচিত।
- নিজেকে সবসময় লাবণ্যময়ীরূপে উপস্থাপন করতে তিনি বিভিন্ন ধরনের ‘বিউটি টুলস’ ব্যবহারের উপর তিনি জোর দিয়ে থাকেন।
- তিনি আকর্ষণীয় ত্বক ও ফিগার ধরে রাখতে যতটা সম্ভব চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাদ্য এড়িয়ে চলেন।
যদি ইভা মেন্ডেসের উই অওন দ্য নাইট, স্টাক অন ইউ, হিচ বা অন্য কোনও সিনেমা দেখে থাকেন, সে সময় তার থেকে চোখ ফিরিয়ে নেওয়া অবশ্যই আপনার জন্য বেশ কঠিন ছিল। তার দিকে তাকিয়ে ঈর্ষান্বিত বোধ করেন না এমন মানুষ খুব কমই আছে। অবশ্য এমন বোধ করাটা তখন বেশ স্বাভাবিক যখন আপনি দেখবেন যে একজন ৪৬ বছর নারীর ত্বক, গড়পড়তা ২০-২২ বছর বয়সী মেয়েদের থেকেও বেশি দীপ্তিময়।
আপনার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না? আপনিই এমন একমাত্র ব্যক্তি নন। ব্যাপারটি বেশ অবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে টুফাস্ট টু ফিউরিয়াস-খ্যাত অভিনেত্রী তার চল্লিশের দশকে রয়েছেন।
তবে এখানে একটি ব্যাপার রয়েছে- এতটা আবেদনময়ি রূপ ধরে রাখতে তিনি বেশ কিছু নিয়ম মেনে চলেন। কিন্তু আশার বিষয় হল যে ইভা মেন্ডেসের স্কিনকেয়ার রুটিনটি খুব কঠিন কিছু নয়।
নিরহঙ্কারী এ অভিনেত্রী তার সৌন্দর্যের রুটিন কেবল নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেননি। বেশ কয়েকবার এই মোহনীয় অভিনেত্রী তার বিউটি টিপস এবং কৌশলগুলো সকলের সামনে উন্মোচন করেছেন। সুতরাং, আপনি যদি ইভা মেন্ডেসের সেলিব্রিটি বিউটি টিপস সম্পর্কে জানতে চান, আমাদের সাথেই থাকুন।
ইভা মেন্ডেস বিউটি টিপস
১. মেকআপ রিমুভার ব্যবহার করুন: এটি কোনও নতুন টিপস নয়, বরং সকলের জানা দরকার যে কখনো মেকাপ না তুলে ঘুমানো যাবেনা। কাজের জন্য মেন্ডেসের প্রায় প্রতিদিনই ভারী মেকআপ করতে হয়। এমনকি হালকা মেকআপ করলেও, মেকআপ তোলার বিষয়টি তিনি বেশ গুরুত্ব সহকারে নেন। তার মতে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সৌন্দর্যের পরামর্শ হল বিছানায় যাওয়ার আগে সবসময় মেকআপ উঠিয়ে নেওয়া।
কিন্তু কেন তিনি অন্যান্য বিউটি টিপসের মধ্য থেকে এটিকে এত বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন? যখন আমরা ঘুমাই, আমাদের ত্বকের কোষগুলো তাদের পুনর্নবীকরণের কার্যক্রম শুরু করে। কোষগুলোর নিঃশ্বাসের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা করে দিতে, ঘুমের আগে মেকআপ তুলে ফেলা বাঞ্ছনীয়। সুতরাং, ব্রণ এবং ত্বকের অন্যান্য সমস্যা দূরে রাখতে, অবশ্যই মেকাপ তুলে ঘুমাতে হবে।
২. বিউটি টুলস ব্যবহার করুন: সাধারণ নেটিজেনদের মত, এই চিরনবীন সুন্দরীও বিভিন্ন বিউটি টুলস নিয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত। টুলসগুলো ছাড়া তার সেলিব্রিটি ত্বকের যত্নের রুটিন অসম্পূর্ণ।
তবে বাজারে উপলব্ধ যে কোন টুলের পরিবর্তে, তিনি শুধুমাত্র শীর্ষস্থানীয় টুলসগুলো ব্যবহার করেন। তাছাড়াও, তিনি বিভিন্ন মাইক্রোকারেন্ট ডিভাইসও ব্যবহার করেন।
শুধু তাই নয়, তিনি স্বীকার করেন যে বয়স এবং চাপের কারণে তার চোখের নিচেও ফোলাভাব দেখা যায়। তবে তা তার সৌন্দর্য কমিয়ে ফেলতে পারেনা। ফেসিয়াল রোলার ব্যবহার করে তিনি খুব সহজেই এ সমস্যা থেকে পরিত্রান পান। তার মতে, রোলারটি ফ্রিজে রাখলে আপনি আরও ভালো ফল পাবেন।
৩. চিনি খাওয়া পরিহার করুন: একজন প্রকৃত সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞের মতোই, তিনি প্রকাশ করেছেন যে, মিষ্টি জিনিসের প্রলোভন থেকে তিনি নিজেকে সংযত রাখেন। এই অভ্যাসটি তাকে মোহনীয় শরীর এবং ত্বক বজায় রাখতে সহায়তা করে।
তবে তার মানে এই নয় যে আপনাকে ফলমূল, শাকসব্জী এবং দুধ ইত্যাদি যেসকল খাদ্যে প্রাকৃতিকভাবে চিনি থাকে, সেসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। আপনার ডায়েট থেকে কেবলমাত্র প্রক্রিয়াজাতকৃত চিনি বাদ দিতে হবে। তবুও, তিনি মাঝে মাঝে নিজেকে কিছুটা ছাড় দেন এবং তার প্রিয় মিষ্টান্নগুলো উপভোগ করেন। এটি বলেই তিনি আবার মনে করিয়ে দেন যে এক্ষেত্রে আধিক্যতা বর্জনীয়।
৫. প্রোটিন সমৃদ্ধ ডায়েট মেনে চলুন: ইভার সেলিব্রিটি বিউটি টিপসের মধ্যে প্রোটিন সমৃদ্ধ ডায়েট অনুসরণ করা অন্তর্ভুক্ত। এজন্য সকালের খাবারে তিনি প্রতিদিন ডিম খান। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরণের ডিমের রেসিপি তৈরি করেন। তবে, সাধারণত, তিনি এক টুকরো এজকিয়েল টোস্ট এবং ভাঁজা ডিম দিয়ে সকালের নাস্তা সেরে ফেলেন।
প্রোটিন ছাড়াও, প্রতিদিনের খাবারে তিনি শস্যজাতীয় খাদ্য অন্তর্ভুক্ত করার পরামর্শ দেন। এছাড়াও, মধ্যাহ্নভোজন এবং রাতের খাবারে তিনি অবশ্যই সালাদ রাখেন কারণ এর চেয়ে স্বাস্থ্যকর আর কী হতে পারে?
৬. আপনার ফিচারগুলো ফুটিয়ে তুলুন: ইভা জানেন কীভাবে তার মুখের আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যগুলোকে আরও সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলতে হয়। এ কৌশলগুলো তিনি শিখেছেন বিশ্বের সেরা মেকআপ আর্টিস্টদের থেকে। যখন মেকআপ আর্টিস্টরা তাদের জাদুকরী তুলি দিয়ে তাকে সাজান, তারা কী করছেন তা ইভা মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেন। এভাবেই, তিনি আবিষ্কার করেছেন যে গালে আনুভূমিকভাবে ব্লাশ প্রয়োগ করা তার দীর্ঘ মুখের জন্য আশ্চর্যজনকভাবে কাজ করে। তদুপরি, তিনি আরও বিশ্বাস করেন যে নাকে কিছুটা ব্লাশ লাগালে সেটি তার নাকের দৈর্ঘ্য কম দেখিয়ে তাকে আরও মনোরম করে তোলে।
৭. আপনার চোখের দিকে নজর দিন: বেশিরভাগ মেকআপ লুকের কেন্দ্রবিন্দু হল চোখ। এজন্য ইভা মেন্ডেস বিউটি টিপস অনুসারে আপনার চোখের মেকআপ বেশ বিস্তৃত পদ্ধতিতে প্রয়োগ করা উচিৎ। তবে তার মতে, সবসময় একই লুক অনুসরণ না করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন ভাবে আইলাইনার দেওয়া উচিত।
আপনি কোথায় যাচ্ছেন এবং কেমন বোধ করছেন তার উপর নির্ভর করে আপনার চোখের উপরের এবং নিচের পাতাগুলোতে লাইনার প্রয়োগ করতে পারেন। তবে আপনি যদি স্বল্প মেকআপ লুক পছন্দ করেন, তবে উইংড লাইনার এড়িয়ে চলুন।
৮. হেয়ার ট্রিটমেন্ট করুন: হেয়ার ট্রিটমেন্ট কোন বিলাসিতা নয়, বরং চুলের যত্নে অত্যাবশ্যকীয়। চুল পড়া, শুষ্ক এবং ঝাঁঝালো চুল এড়াতে, তিনি সর্বদা বিভিন্ন হেয়ার ট্রিটমেন্ট অবলম্বন করেন।
কিন্তু কেন? হেয়ার ট্রিটমেন্টের সময় এর উপাদানগুলো আপনার চুলের গভীরে প্রবেশ করে আপনার চুলের গোঁড়াকে ভিতর থেকে শক্তিশালী করে তোলে। সুতরাং, ঝলমলে ও স্বাস্থ্যকর চুল পেতে সাপ্তাহিক হেয়ার ট্রিটমেন্টের জুরি নেই।
৯. আপনার ঠোঁটের উপর হাইলাইট করুন: সঠিক লিপস্টিক নির্বাচনের মাধ্যমে আপনি আপনার সম্পূর্ণ মেকাপ লুকটি আরও ভালভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেন। তাই, ইভার সৌন্দর্য রীতি অনুসরণ করে খুব সূক্ষ্মভাবে লিপস্টিক প্রয়োগ করা উচিত।
কিন্তু কিভাবে? প্রথমে, ঠোঁটে হালকা চ্যাপস্টিক লাগিয়ে নিন। এতে করে আপনার ঠোঁট জোড়া আরও পুরু দেখাবে। তারপর, লিপলাইনার দিয়ে ঠোঁট এঁকে নিন। লিপলাইনারের রঙটি অবশ্যই আপনার লিপস্টিকের অনুরূপ হতে হবে। তারপর, সুন্দর করে লিপস্টিক দিয়ে ঠোঁটের ভিতরের অংশ ভরাট করুন। এ পর্যায়ে এসে, টিস্যু দিয়ে একদম আলতো করে ঠোঁটের উপরিভাগ মুছতে পারেন যাতে লিপস্টিকের রঙ আপনার দাঁতে স্থানান্তরিত না হয়। অবশেষে, একটি পাতলা ব্রাশ নিন এবং আপনার কিউপিডস বো এর উপর সামান্য হাইলাইটার লাগান। এতে করে আপনাকে আরও উজ্জ্বল দেখাবে।
১০. ঘরোয়া ফেসপ্যাক ব্যবহার করুন: আমাদের মত ইভা মেন্ডেসও ত্বকের যত্নে রান্নাঘরের বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভর করেন। তার মধ্যে নারকেল তেল হল তার সবচেয়ে প্রিয়। এক্সফোলিয়েশনের জন্য তিনি টক দই এবং সামুদ্রিক লবণ ব্যবহার করেন। তাছাড়া, চেহারার ক্লান্তি আড়াল করতে তিনি মুখে বরফ লাগান।
ইভা মেন্ডেসের স্কিনকেয়ার এর পন্থাগুলো অনুসরণ করা খুবই সহজ। আমজনতার জন্য তার সৌন্দর্যের রুটিন মেনে চলা মোটেও কষ্টসাধ্য নয়। এজন্য আপনাকে খুব একটা খরচও করতে হবে না। সুতরাং, ত্বকের যত্নে তার দেওয়া সৌন্দর্যের রহস্যগুলো মেনে চলুন এবং রাতারাতি নিজের মাঝে তার মত আভা খুঁজে পান।
সচরাচর জিজ্ঞাস্য প্রশ্নসমুহ
১. কীভাবে আমি তারুণ্যদীপ্ত ত্বক পেতে পারি?
– বয়স ছাপ এড়িয়ে চলতে উচ্চমানের সানস্ক্রিন ব্যবহার প্রতিটি সেলিব্রিটির ত্বকের যত্নের রুটিনের অন্তর্গত। এছাড়াও, দীর্ঘ সময়ের জন্য তারুণ্য ধরে রাখতে কোলাজেন সমৃদ্ধ পণ্য ব্যবহার এবং সপ্তাহে দুবার এক্সফোলিয়েট করা উচিত।
২. ৪0 বছর বয়সে আমি কীভাবে দ্যুতিময় ত্বক পেতে পারি?
– সর্বদা দিনে দুবার সিটিএম (ক্লিনিজিং> টোনিং> ময়শ্চারাইজিং) পদ্ধতি অনুসরণ করুন। এছাড়া, একটি ভাল সিরাম ব্যবহার করুন যার মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে। তাছাড়াও আপনি রাতে রেটিনল ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে, পরের দিন সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
৩. কীভাবে আমি নিজেকে আমার বয়সের থেকে কম হিসেবে উপস্থাপন করতে পারি?
– আপনার ত্বককে আরও টানটান করতে হাইড্রেটিং মাস্ক ব্যবহার করুন। মেকাপ করার আগে চোখের ফোলা ভাব কমাতে চোখের আশেপাশে বরফ লাগান। যদি পারেন তবে আপনার চুলে হালকা শেডের হেয়ার ডাই ব্যবহার করতে পারেন।
৪. কীভাবে আমি রাতারাতি উজ্জ্বল ত্বক পেতে পারি?
– নিজের সৌন্দর্য বর্ধন করতে বিভিন্ন ঘরোয়া ফেসমাস্ক ব্যবহার করতে পারেন। সে জন্য দুধ, মধু, গোলাপ জল বা অ্যালোভেরা জেল এর উপর নির্ভর করতে পারেন। এসব উপাদান দিয়ে মাস্ক বানিয়ে যদি তা রাতে ব্যবহার করেন, তবে সকালবেলাই আপনি বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করবেন।
৫. ৪০ বছর বয়সেও কীভাবে কোন নারীকে আরও কমবয়সী লাগতে পারে?
– যদি আপনি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বজায় রাখেন, তবে ৪0 বছর বয়সেও নিজেকে আরও নবীন দেখানো সম্ভব। সুতরাং, আপনার ডায়েট থেকে চিনি এবং কার্বস বাদ দিন এবং আপনার ত্বকের যত্নের রুটিন ভালোভাবে মেনে চলুন।
তথ্যসূত্র:
https://www.womenshealthmag.com/beauty/a32270381/eva-mendes-skincare-routine/
https://bestlifeonline.com/healthy-skin-after-40/
https://www.dermstore.com/blog/top_ten/how-to-look-10-years-younger/
[sc name=”beauty-secrets-that-keep-eva-mendes-looking-youthful-bn”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।