রূপচর্চায় ও ত্বকের যত্নে অনন্য ভার্জিন কোকোনাট অয়েল
- নারিকেল তেল ক্ষতিকর অণুজীব ধ্বংস করে।
- নারিকেল তেল প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
- নারিকেল তেল ব্রণ ও অ্যাকনে দূর করতে সাহায্য করে।
- নারিকেল তেল শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা সরবরাহ করে।
নারিকেল এমন একটি পণ্য যা প্রায় সব মানুষের বাড়িতেই পাওয়া যায়। নারিকেলের বিভিন্ন কাজের মধ্যে ত্বক এবং চুল পরিচর্যার কাজে ব্যবহার অন্যতম।
নারিকেল তেল সাধারণত দুই রূপে ব্যবহার করা হয়। ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ও পরিশোধিত নারিকেল তেল। ভার্জিন কোকোনাট অয়েল একদম ১০০ ভাগ বিশুদ্ধ ও খাঁটি নারিকেল তেল যা কোনো রকম রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার না করে এবং সূর্যের রশ্মির সংস্পর্শ ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয়। গবেষণায় দেখা গেছে ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ত্বকে নানারকম পুষ্টি উপাদান সরবরাহ করে থাকে। শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখা নিয়ে চিন্তা করছেন? ত্বকের প্রদাহ কমাতে কি করবেন তাই নিয়ে ভাবছেন? ভাবছেন ত্বকে নারিকেল তেল ব্যবহারে সুবিধা কী কী? চিন্তা নেই, ভার্জিন কোকোনাট অয়েল আপনার ত্বকের নিত্যদিনের সমস্ত সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে। এটি ভিটামিন ই সমৃদ্ধ তাই ত্বকে শোষিত হয়ে ত্বককে নরম করে তোলে ও ত্বকে পানির পরিমাণ বজায় রাখতে সাহায্য করে।
নারিকেল তেল ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে কীভাবে সাহায্য করে সেটা এখানে আলোচনা করা হল:
ক্ষতিকর অণুজীব ধ্বংস করে-
নারিকেল তেলে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য যা ত্বকে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়। বিশেষ করে ত্বকে ব্যাকটেরিয়া বা ফাঙ্গাস আক্রমণ সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায় নারিকেল তেল উপকারি ভূমিকা পালন করে।
প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে-
ভার্জিন কোকোনাট অয়েল অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ। এটি ত্বকে প্রদাহ সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর উপাদান সহজেই নষ্ট করে ত্বকের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে।
ব্রণ ও অ্যাকনে দূর করতে সাহায্য করে-
ত্বকের সবচেয়ে বিরক্তিকর সমস্যা হল ব্রণ। ব্রণ সমস্যা সমাধানে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়ালের বিকল্প নেই। আর তাই নারিকেল তেল হতে পারে এর অন্যতম সমাধান। নারিকেল তেলে রয়েছে লরিক এসিড যা প্রাকৃতিকভাবেই ত্বকের ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করতে সহায়তা করে।
শুষ্ক ত্বকে আর্দ্রতা সরবরাহ করে-
গোসলের ঠিক পরপরই ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ব্যবহার করুন। এটি ত্বকে ফ্যাটি লিপিড সরবরাহ করে। ফলে আপনার ত্বকে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা এবং পানির পরিমাণ বজায় থাকে এবং ত্বক শুষ্কতা থেকে মুক্তি পায়।
ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে-
ত্বকের ক্ষত নিরাময়ে ভার্জিন কোকোনাট অয়েল আয়ুর্বেদিক ঐতিঘ্য হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি প্রাকৃতিকভাবেই ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ যা ত্বকের ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।
উপরে উল্লিখিত বিষয়গুলো ছাড়াও ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ত্বক, চুল ও শরীরের জন্য অনেকভাবেই উপকারি।
মুখের ত্বকে ভার্জিন কোকোনাট অয়েলের ব্যবহার-
সাধারণত আমাদের শরীরের তুলনায় মুখের চামড়া পাতলা হয়। ফলে মুখের ত্বক শরীরের ত্বকের তুলনায় বেশি সংবেদনশীল হয়। সুতরাং বাজারের ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ যুক্ত পণ্য ব্যবহার না করে প্রাকৃতিক পণ্য ব্যবহার করা উচিত। ভার্জিন কোকোনাট অয়েল একদম কাঁচা নারিকেলের নির্যাস থেকে তৈরি। তাই এটি ত্বকে ময়েশ্চারাইজার হিসেবে, কালো দাগ, রিংকেল, ইত্যাদি দূর করতে ব্যবহার করা যায়। বিশেষ করে যাদের শুষ্ক ত্বক, তাদের জন্য ভার্জিন কোকোনাট অয়েল দারুণ উপকারি। মুখের ত্বকে এটি যে যে উপায়ে ব্যবহার করা যেতে পারে:
- ফেস স্ক্রাব হিসেবে
- নাইট ক্রিম হিসেবে
- মেক-আপ রিমুভার হিসেবে
- সান বার্ন থেকে রক্ষা পেতে
কীভাবে ব্যবহার করবেন:
নারিকেল তেলের সাথে চিনি মিশিয়ে স্ক্রাবার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। দুটি উপাদান এক সাথে মিশিয়ে মুখের টি-জোনে, হাতে ও পায়ে ভালোভাবে মাসাজ করে স্ক্রাব করুন। নাইট ক্রিম বা মেক-আপ রিমুভার হিসেবে নারিকেল তেল ব্যবহার করতে খুব অল্প পরিমাণ তেল হাতে হাতে নিয়ে মুখের ত্বকে ভালোভাবে মাসাজ করুন। সানবার্নের ক্ষেত্রে প্রথমে আক্রান্ত জায়গায় ১৫ মিনিট ধরে ঠাণ্ডা একটা তোয়ালে ধরে রাখুন। কয়েক ঘন্টা পর যখন ত্বক ঠাণ্ডা হবে, সেখানে নারিকেল তেল দিন।
চুলের যত্নে ভার্জিন কোকোনাট অয়েলের ব্যবহার-
চুলের যত্নে নারিকেল তেলের জুড়ি নেই। সব বয়সের এবং সব ধরনের চুলের যত্নেই নারিকেল তেল সেরা। বিভিন্ন কারণে নারিকেল তেল সবারই পছন্দের তালিকায় প্রথম। কিন্তু এটি এত জনপ্রিয় কেন? চুলের যত্নে নারিকেল তেলের বিশেষত্বই বা কী? কারণগুলো হল:
- এটি চুলের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে
- চুল ভেঙে পড়া রোধে সহায়তা করে ও চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করে
- খুশকি দূর করে
- চুলে এবং মাথার ত্বকে আর্দ্রতা বজায় রাখে
প্রাকৃতিক পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ ভার্জিন কোকোনাট অয়েল নিয়মিত চুলে ও মাথার ত্বকে মাসাজ করলে মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক থাকে। এর ফ্যাটি এসিড মাথার ত্বকের গভীরে পৌঁছে চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায়।
কীভাবে ব্যবহার করবেন:
তেল হালকা গরম করে নিয়ে মাথা্র ত্বকে ভালোভাবে মাসাজ করুন এবং সারা রাত রেখে দিন। নারিকেল তেলের সাথে লেবু মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার খুশকি থেকে পরিত্রাণ পেতে সাহায্য করে। চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে চাইলে নারিকেল তেলের সাথে ডিম এবং দই মিশিয়ে হেয়ার মাস্ক বানিয়ে ব্যবহার করুন। এতে করে চুল নরম ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে।
ত্বকের যত্নে ভার্জিন কোকোনাট অয়েলের ব্যবহার-
ত্বকের যত্নে নারিকেল তেলের উপকারিতা অনেক। শরীরের ত্বকে নারিকেল তেল নিয়মিত ব্যবহার করা যেতে পারে। নারিকেল তেল ব্যবহারে ত্বকের পিএইচ ব্যালেন্স স্বাভাবিক থাকে ও ত্বককে করে তোলে কোমল ও মসৃণ। গোসলের ঠিক পর পর নারিকেল তেল শরীরে ব্যবহার করলে এটি ত্বকে ময়েশ্চার লক করে রাখে। নারিকেল তেল অনেক ক্ষেত্রেই লোশন, ক্রিম বা বডি বাটারের মূল উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
এতে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টিফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য তাই এটি পায়ের ত্বকে ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়।
নখ এবং কিউটিকলে মাসাজ করার জন্য নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
বডি স্ক্রাবার হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন।
কীভাবে ব্যবহার করবেন:
মুখে স্ক্রাব করার পদ্ধতি আর শরীরের ত্বকের পদ্ধতি একই। এছাড়া অন্য যে কোনোভাবে ব্যবহার করতে নারিকেল তেল সরাসরিই মাসাজ করতে পারেন।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন:
১। নারিকেল তেল ত্বকের সমস্যা সমাধানে কীভাবে সাহায্য করে?
নারিকেল তেলের অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ত্বককে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে। এর অ্যান্টিইনফ্ল্যামাটরি বৈশিষ্ট্য ত্বকের প্রদাহ দূর করে। এছাড়া নারিকেল তেল ত্বকের ব্রণ দূর করে ত্বকের বলিরেখা, দাগ, ছোপ দূর করে ত্বকের কুচকে যাওয়া রোধ করে।
২। চুলের যত্নে ভার্জিন কোকোনাট অয়েল কীভাবে উপকার করে?
ভার্জিন কোকোনাট অয়েল শুষ্ক, রুক্ষ ও এলোমেলো চুলের জন্য দারুণ উপকারি। চুলে আয়রণ করা বা বিভিন্ন রঙ ব্যবহার করার জন্য চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নারিকেল তেল শুষ্ক চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি যোগায় ফলে চুল হয়ে ওঠে মজবুত। নারিকেল তেল চুলের হারিয়ে যাওয়া প্রোটিনও ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। ফলে চুল হয়ে ওঠে মসৃণ, উজ্জ্বল ও ঝলমলে।
৩। ত্বকচর্চায় ভার্জিন কোকোনাট অয়েলের উপকারিতা কী কী?
নারিকেল তেলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই যা সাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের জন্য খুবই জরুরি। ভিটামিন ই ত্বকের স্ট্রেচ মার্ক দূর করতে সাহায্য করে। গোসলের সময় পানিতে নারিকেল তেল মিশিয়ে নিলে এটি ত্বকের ময়েশ্চারাইজেশনে সাহায্য করে।
৪। ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ও সাধারণ নারিকেল তেলের মধ্যে পার্থক্য কী?
ভার্জিন কোকোনাট অয়েল তৈরি হয় নারিকেলের শাঁস থেকে। কোনো রকম রাসায়নিক পদার্থ ছাড়া খাঁটি নারিকেল তেলই ভার্জিন কোকোনাট অয়েল। এতে অন্য কোনো রঙ বা গন্ধ কিছুই মেশানো হয়না। পরিশোধিত নারিকেল তেল তৈরি করতে নারিকেলের শাঁস প্রথমে শুকিয়ে নেয়া হয়। এটি ব্লক করার পর কিছুটা ফ্লেভার যোগ করে পরিশোধিত নারিকেল তেল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কাজেই, ভার্জিন কোকোনাট অয়েল হল নারিকেল তেলের বিশুদ্ধতম রূপ, এতে কোনো ধরনের রাসায়নিক পদার্থ যোগ করা হয় না।
Reference:
https://www.allure.com/story/beauty-uses-for-coconut-oil
https://draxe.com/nutrition/coconut-oil-benefits/
https://www.kamaayurveda.com/blog/virgin-coconut-oil/
https://www.healthline.com/health/coconut-oil-for-sunburn#use
[sc name=”virgin-coconut-oil-the-one-stop-solution-to-all-your-hair-care-woes-bn”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।