শীতে চুল পড়া থেকে মুক্তি পাওয়ার চারটি উপায়
- শীতে চুল পড়া সব বয়সের মানুষের জন্য সাধারণ একটা সমস্যা
- খুশকি, শুকনো আবহাওয়া, শুষ্ক স্কাল্প ও জেনেটিকস মূলত এজন্য দায়ী
- নিয়মিত চুল আঁচড়ানো, অয়েল ম্যাসেজ, হেনার হেয়ার প্যাক দেওয়া, ডিমের মাস্ক ও গরুর দুধের কার্ড এই সমস্যাটা সমাধান করতে পারে।
শীত মানে ব্যাডমিন্টন, কেক, খেজুরের রস, তাজা সবজি ও মজা। কিন্তু সেই মজাটা বেশিক্ষণ তজাকে না যদি চুল পড়ার মতো সমস্যা হয়। শীত আবারও এসেছে এবং ঝরা পাতার মতো চুল পড়ছে। এখানে শীতে কীভাবে চুলের যত্ন নিতে হবে তারই কয়েকটি টিপস নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
শীতে চুল পড়া সব বয়সের ও সব ধরনের মানুষের জন্য আধারণ একটা সমস্যা। তবে এর মানে এই না শীতে খুব বেশি চুল পড়া স্বাভাবিক কোনো ব্যাপার। চুল বেশি পড়লে সেটা মেনে নেওয়া আসলেই কঠিন। চুল পড়ার এই প্রক্রিয়া একবার শুরু হয়ে গেলে এরপর কিছু করার থাকে না। নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম, এমন একটা কথা আছে। সেজন্য সময় থাকতে চুলের যত্ন নিতে হয়।
চুল পড়া সব মানুষের জন্য সাধারণ হলেও টিন এজে, বা বিশের ঘরের শেষ দিকে, বা ত্রিশের গোড়ার দিকে এটার জন্য আরও বেশি করে যত্ন নেওয়া উচিত ও চিকিৎসা করা উচিত।
প্রথমেই আমাদের বুঝতে হবে কেন শীতে চুল পড়ে। মানুষভেদে এই কারণটা ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। শীতে চুল পড়ার একটা বড় কারণ হচ্ছে নিয়মিত চুল না আচড়ানো।যদি চুল পড়ার ব্যাপারটা জেনেটিক হয় তাহলে চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা উচিত। একজন ভালো চর্ম বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
শীতে চুল পড়ার কারণ
শীতে চুল পড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। বংশগত বা জেনেটিক সমস্যা হলে এটা নিরাময় করা কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। শীতে চুল পড়া কারও জন্য একটা সাধারণ সমস্যা। আবার শীত চলে গেলে অনেকের চুল পড়ার পরিমাণ কমে যায়।
কীভাবে প্রাকৃতিকভাবে চুলের যত্ন নিতে হয়
শীতে চুল পড়া নিরাময়যোগ্য একটা ব্যাপার। অনেক সময় চুল পড়া কীভাবে কমানো যায় সেটার জন্য টিপস খোঁজেন অনেকে। সেটা ইউটিউবে হো, বা গুগলে বা কোরায়। কারণ আমরা বাস করছিই প্রযুক্তির যুগে। আবার প্রতিটা মানুষ কোনো না কোনোভাবে স্পেশাল এবং তাদের শারীরিক, জেনেটিক ব্যাপারে একে অন্যের চেয়ে আলাদা। কোনো একটা ব্যাপার একজনের ক্ষেত্রে কাজ করলেও আরেকজনের ক্ষেত্রে নাও করতে পারে।
এখন চুল পড়া ঠেকানোর এই চারটি ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করা যাক
১। কম্বিং বা চুল আঁচড়ানো
আমরা প্রতিদিনই চুল আঁচড়াই। তবে সেরা ফলের জন্য কিছু নিয়ম আছে। চুলকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করুন ও একটা ওয়াইড টুথ কম্ব দিয়ে জট ছাড়ান। এলোমেলোভাবে চুলে চিরুনি চালাবেন না। ভেজা চুলেও আঁচড়াবেন না কারণ তখন গোড়া নরম থাকে এবং খুব সহজেই চুল উঠে আসতে পারে। স্পাইক দূর করার জন্য ভেজা চুলে আপনার হারকে চিরুনির মতো ব্যবহার করুন। শুতে যাওয়ার আগে সবসময় চুল ধুয়ে নিন। নিয়মিত চুল আঁচড়ালে আপনার স্কাল্প থেকে শুষ্ক চামড়া উঠে যাবে একই সঙ্গে স্কাল্পে রক্ত সরবরাহ নিশ্চিত করে চুলের পরিমাণও বাড়াবে।
২। অয়েল মেসেজ
চুলে পুষ্টির অভাবে শুষ্ক চুল হয়, বিশেষ করে খুশকি হতে প্রে। আপনার স্কাল্পে নারিজেল তেল দিতে চুলে পুষ্টির পরিমাণ বাড়বে। এতে চুলের গোড়া থেকে পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি রক্ত সঞ্চালনও নিশ্চিত হবে। নারিকেল তেল রোদে রেখে গরম করুন ও গলে যেতে দিন। এরপর সেটা চুলে মাখুন, এটা হচ্ছে সবচেয়ে সাধারণ শীতকালীন চুলের যত্নের টিপস। নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার করলে চুল পড়া ৭০ ভাগ পর্যন্ত কমতে পারে। তাতে নতুন চুল গজানোও নিশ্চিত হয়।
৩। হেয়ার প্যাক দেওয়া
শীতে ঘরে বসেই চুলের যত্ন নেওয়ার কিছু সহজ উপায় আছে। সেগুলো হলো
১) হেনা প্যাক
হেনার পাতা নিয়ে জুয়াস বানিয়ে চুলের গোড়ায় দিন। হেনার মধ্যে ফেনোলিক গ্লাইসোসাইডস, জ্যান্থন্স, বি সিটস্টেরল গ্লুকোসাইড আছে যেটা চুলের সাথে মিশে আরও ঘন, সুন্দর করে ও চুলের পরিমাণ বাড়ায়।
২) ডিমের মাস্ক
একটা আস্ত ডিম নিয়ে লেবুর রসের সাথে মিশুয়ে স্কাল্পে দিন। ডিমের মধ্যে ভিটামিন ডি, বি৬, বি১২, জিংক, আয়রন, ভিটামিন এ, ডি, ই, কে ও লেসিথিন আছে। রুক্ষ ও ক্ষতগিরস্ত চুলে প্রোটিনের ভালো একটা উৎস ডিম।
৩) কাউ কার্ড
অলিভ অয়েল, অ্যালু ভেরা জেল, কাউ কার্ড ও ডিম একসঙ্গে মেশান। কার্ড বা দই খুশকি প্রতিরোধ করে ও চুল পড়া বন্ধ করে।
৪) ওয়ার্ম স্টিম
একটা মাইক্রোওয়েভে লিনেনের তোয়ালে নিয়ে সেটা গরম করুন। এরপর আপনার মাথায় ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন। চুলে তাপ দিলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে, চুলের ক্ষতি কমায় ও খুশকি প্রতিরোধ করে।
৫) মেথি: ফেনুগ্রিক
ফেনুগ্রিকে অনেক বেশি প্রোটিন ও নিকোটিনিক এসিড থাকে যেটা চুলের শুষক হয়ে যাওয়া কমায়, চুল পড়া ও চুল পাতলা হয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
৬) ভিটামিন ই
ভিটামিন ই ক্যাপসুল শুষ্ক ও অপুষ্ট চুলের জন্য সাপলিমেন্ট হিসেবে কাজ করে। এক বা দুইটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল নিয়ে আপনার নারিকেল তেলের সাথে মেশান এবং স্কাল্পে দিন। ভিটামিন ই তে অ্যান্টিওক্সিডেন্ট থাকে যেটা চুলের জন্য উপকারী।
৭) মিল্ক মাস্ক
মিল্ক মাস্ক ও মধু নিয়ে এই মাজিক ফর্মুলা আপনার চুলে দিন। এটা চুলকে আরও বেশি আর্দ্র করতে এবং ডিপ কন্ডিশন করে। নিয়মিত এটা ব্যবহার করলে চুলের ফ্রিজি ভাব কমে।
৮) চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন
যদি ওপরের কোনো ক্রাইটেরিয়া আপনার জন্য কাজ না করে, তাহলে আপনি একজন চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন। অনেক সময় ডায়েট, অনিয়মিত ঘুম কিংবা কাজের চাপের জন্য চুল পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে ডাক্তারের কাছে যাওয়াই সবচেয়ে ভালো উপায়।
সুন্দর, উজ্জ্বল, স্বাস্থ্যকর চুল কে না ভালোবাসে? কিন্তু সুন্দর চুলের জন্য আপনাকে সময় দিতে হবে। স্বাস্থ্য সকল সুখের মূল, আর চুল হচ্ছে সেটার মুকুট। তাই যতই ব্যস্ততা থাকুক, এর ফাঁকেই চুলের যত্ন নেওয়া উচিত।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন
১. কীভাবে শীতে চুল বাড়ানো যায়?
- শীতে চুলের যত্নের সাধারণ কিছু নিয়ম মেনে চললে চুলের বৃদ্ধি নিশ্চিত করা যায়।
২. শীতে কীভাবে চুল পড়া কমানো যায়?
- নিয়মিত চুল আঁচড়ালে এবং নারিকেল তেল ও মধুর মতো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে চুল পড়া কমানো যায়
৩. কীভাবে শীতে চুলের যত্ন নেওয়া যায়?
- নিয়মিত চুলের প্রতি মনযোগ দিলে ও হেয়ার মাস্কের মতো ঘরেই কিছু উপায়ে চুলের যত্ন নেওয়া যায়।
৪. শীতে কীভাবে খুশকি ও চুল পড়া বন্ধ করা যায়?
- হেনা প্যাক, এগ মাস্ক, কাউ কার্ড চুল পড়া বন্ধ করতে পারে
৫. সরিষার তেল কি চুলের জন্য ভালো?
- হ্যাঁ, সরিষার তেল চুলের জন্য ভালো হতে পারে।
৬. একজন মেয়ে কীভাবে বাসায় চুল পড়া ঠেকাতে পারে?
- স্বাস্থ্যকর খাবার ও রুটিন মেনে চললে চুল পড়া ঠেকানো যায়।
Reference:
https://https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/vitamin-e-for-hair
https://www.bebeautiful.in/all-things-hair/hair-treatments/3-diy-milk-hair-masks-for-healthy-hair
[sc name=”4-ways-to-deal-with-winter-hair-fall-bn”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।