সারার দারুন চুল এবং ত্বকের রহস্য
নারকেল তেলের যাদুকরি গুনাগুন সম্পর্কে হয়ত জানেন বা শুনেছেন। এই তেল দিয়ে আপনি রান্নাও করতে পারেন এমনকি আপনার বাসা পরিষ্কারেও ব্যবহার করতে পারেন। তাছাড়া, সম্ভবত এটিই সবচেয়ে উত্তম সৌন্দর্য বর্ধিতকারক উপাদান। আমরা সবাই জানি নারকেল তেল চুলের জন্য পুরো বিশ্বজূড়ে খ্যাত। অপরদিকে, ত্বকের ক্ষেত্রেও নারকেল তেলের চমৎকার উপকারিতা রয়েছে। তাই, এটি একটি সাধারণ তেলের থেকেও বেশি কিছু হিসেবে গণ্য।
আজকে আমরা নারকেল তেলের সাহায্যে করা যায় এমন কিছু সহজ বিউটি ট্রিক্স আলোচনা করব এবং ত্বক ও চুলের জন্য এর কিছু অসাধারণ উপকারিতা সম্পর্কে জানব।
#১. নারকেল তেল দিয়ে ডিপ কন্ডিশনিং :
ঝলমলে চুল পাওয়ার জন্য নারকেল তেলের ডিপ কন্ডিশনিং একটি ভালো উপায়। কিন্তু আপনি কি জানেন কিভাবে কার্যকরি উপায়ে নারকেল তেল দিয়ে ডিপ কন্ডিশনিং করা যায়?
উপাদান :
- নারকেল তেল
- শ্যাম্পু এবং কন্ডিশনার
পদ্ধতিঃ
- শ্যাম্পু ও কন্ডিশনার ব্যবহার করার আগে চুলে নারকেল তেল এপ্লাই করুন। নারকেল তেল শ্যাম্পু করার সময় চুলকে শুষ্ক হওয়া থেকে বাঁচায়।
- আলতো ভাবে চুলে ম্যাসাজ করুন।
- চুলে শ্যাম্পু করার আগে অন্তত ৩০ মিনিট চুলে তেল রাখবেন।
- চুল থেকে সম্পূর্ণ তেল পরিহার করতে হয়ত বেশ কয়েকবার চুল ধোয়া লাগতে পারে। কিন্তু এরপর আপনি সিল্কি ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল পাবেন। এটি নারকেল তেলের খুবই সাধারণ ও কার্যকরি ব্যবহার।
#২. কোকোনাট বডি বাটারঃ
নারকেল তেল ত্বকে ব্যবহার করার অনেক উপায় আছে, আপনাকে শুধু ট্রিক্সগুলো জানতে হবে। খুব সহজেই আপনি হুইপড কোকোনাট বডি বাটার ব্যবহার বানাতে পারবেন এবং কোমল ও মসৃণ ত্বক পেতে পারবেন।
উপাদান :
- নারকেল তেল
- মধু
- শিয়া বাটার
- কাঠবাদামের তেল
- একটি হুইস্ক ( নাড়নি, যা দিয়ে ফোম তৈরি করা যাবে)
পদ্ধতি :
- দুই টেবিলচামচ নারকেল তেল, দেড় টেবিলচামচ মধু, এক টেবিলচামচ শিয়া বাটার এবং দেড় টেবিলচামচ কাঠবাদামের তেল ( আমন্ড) একত্রে মেশান।
- ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণটিকে ১৫ মিনিট গরম করুন।
- এরপর ৬–২৪ ঘন্টার জন্য এটিকে ঠান্ডা হতে রাখুন।
- যতক্ষন না পাতলা এবং ফোম হচ্ছে ততক্ষণ ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। মিশ্রণটিকে কাচের জারে সংরক্ষণ করে প্রয়োজনমত ব্যবহার করতে পারবেন।
#৩. সারারাত চুলে তেল দিয়ে রাখুন:
চুলের যত্ম নেয়ার জন্য নারকেল তেল চুলে ম্যাসাজ করে সারারাত রেখে দেয়াটা সর্বোত্তম পন্থা। কিন্তু মনে রাখবেন, চুলের ভাংগন রোধের জন্য চুলের জট আগে ভাংগিয়ে নিবেন।
আর, ছয়–আট ঘন্টার বেশি চুলে তেল দিয়ে রাখাটাও উচিত না। এতে চুল নোংরা হয়ে যেতে পারে কারণ এ তেল ধুলা, ময়লাজাতীয় পদার্থ আকৃষ্ট করে চুলকে আঠালো করতে পারে।
#৪. নারকেল তেল দিয়ে বডি স্ক্রাব :
আপনি কি জানেন, নারকেল তেলের সাহায্যে আপনি কীভাবে গ্লোয়িং স্কিন পেতে পারেন? উত্তরটি হলো – নারকেল তেলের সাথে কফি মিশিয়ে। গ্রাউন্ড কফিতে বালির মত একটা টেক্সচার আছে যা ঘরোয়া স্ক্রাব হিসেবে ব্যবহার করা যায়। গ্রাউন্ড কফি শরীরে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায় এবং মৃত কোষগুলো তুলে ফেলতে সাহায্য করে
উপাদান :
- গ্রাউন্ড কফি
- ব্রাউন সুগার
- নারকেল তেল
- ভ্যানিলা এসেন্স
পদ্ধতি :
- হাফ কাপ গ্রাউন্ড কফি ও হাফ কাপ ব্রাউন সুগার একত্রে মিশিয়ে নিন।
- এর সাথে হাফ কাপ নারকেল তেল ও ১ টেবিলচামচ ভ্যানিলা এসেন্স মিশিয়ে নিন।
- সবগুলো উপাদান একসাথে ভালোভাবে মিশিয়ে বানিয়ে নিন আপনার পছন্দের নারকেল ও কফির বডি স্ক্রাব।
#৫. নারকেল তেলের ফেস মাস্ক :
ত্বকের যত্নে নারকেল তেলের অনেক উপকারিতা রয়েছে। ত্বকের রঙ উজ্জ্বল করতে নারকেল তেল ও হলুদের মাস্ক কার্যকর। এটি আপনার ত্বককে আর্দ্রতা ও মসৃণতা দিবে যা আপনার মুখের কুচকে যাওয়া ভাব দূর করতে সহায়তা করবে। এই ফেস মাস্কটি আপনার ত্বককে শুষ্ক হয়ে যাওয়া থেকে বাচাবে ও ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা যেমন, ব্রণ থেকে বাচাবে।
উপাদান :
- নারকেল তেল
- হলুদ
পদ্ধতি :
- এক টেবিল চামচ নারকেল তেল ও এক চিমটি হলুদ ভালোভাবে মেশান।
- পরিষ্কার মুখে এপ্লাই করুন।
- ১৫ মিনিট মুখে রাখুন।
- পরিষ্কার পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
#৬. এলোভেরা জেল ও নারকেল তেল দিয়ে চুলের মাস্ক :
নারকেল তেল ও এলোভেরা জেল আপনার চুলকে সিল্কি ও ঝলমলে করবে।
উপাদান :
- এলোভেরা জেল
- নারকেল তেল
পদ্ধতি :
- দুই টেবিলচামচ এলোভেরা জেল ও এক টেবিলচামচ নারকেল তেল একত্রে মিশিয়ে নিন।
- ভালোভাবে নেড়ে স্মুথ একটি মিশ্রণ করে নিন।
- আঙুলের সাহায্যে মাস্কটি আপনার চুলে এপ্লাই করুন।
- লম্বা চুল হলে চুল কয়েকভাগে বিভক্ত করে অল্প অল্প করে ম্যাসাজ করুন।
#৭. ফেস ওয়াশ হিসেবে নারকেল তেল :
নারকেল তেলের যথাপোযোগী ব্যবহারের জন্য আরেকটি উপায় নারকেল ও এসেনসিয়াল ওয়েলের ফেস ওয়াশ।
উপাদান :
- নারকেল তেল
- বেকিং সোডা
- ল্যাভেন্ডার এসেনসিয়াল তেল
- টি ট্রি এসেনসিয়াল তেল
- লেমন এসেনসিয়াল তেল
পদ্ধতি :
- এক কাপ গরম নারকেল তেল, এক টেবিলচামচ বেকিং সোডা এবং পাঁচ ফোটা ল্যাভেন্ডার ওয়েল, টি ট্রি এসেনসিয়াল ওয়েল ও লেমন এসেনসিয়াল ওয়েল মেশান।
- এরপর, অল্প পানির সাথে ফেসওয়াশ মিশিয়ে এটি ব্যবহার করুন।
#৮. নারকেল তেলের সাবান :
প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি সাবান যেমন অলিভ ওয়েল বা নারকেল তেল দিয়ে বানানো সাবান ত্বককে দূষণমুক্ত করার পাশাপাশি ময়েশ্চারাইজও করে। আপনার ত্বক যদি শুষ্ক বা সংবেদনশীল হয়ে থাকে তবে অলিভ ওয়েল সমৃদ্ধ সাবান আপনার জন্য আরামদায়ক ও উপকারী হবে। নারকেল তেল সন এই সাবানটি আপনি সহজেই বাসায় বানাতে পারবেন এবং উপকার ও পাবেন।
#৯. নারকেল দুধের শ্যাম্পু :
ঝলমলে চুল পেতে বাসায় বানানো নারকেলের দুধের শ্যাম্পু ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপাদান :
- নারকেলের দুধ
- অর্গানিক বেবি শ্যাম্পু
- অলিভ ওয়েল
- ভ্যানিলা এসেনসিয়াল ওয়েল
পদ্ধতি :
- একটি পাত্রে ১/৪ কাপ নারকেলের দুধ, ১/৩ কাপ অর্গানিক বেবি শ্যাম্পু, এক টেবিলচামচ অলিভ ওয়েল ও ১০ ফোটা ভ্যানিলা এসেন্স মিশিয়ে নিন।
- সব উপাদান একত্রে ঝাকিয়ে নিন, এখন এটি আপনার ব্যবহার উপযোগী হয়ে গেলো।
#১০. মেক আপ রিমুভার হিসেবে নারকেল তেল :
আলতোভাবে নারকেল তেল মুখে ম্যাসাজ করলে খুব সহজেই মেকাপ উঠানো যায়। এটি ত্বককে মসৃণ ও করে। আপনার ত্বক যদি রুক্ষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে থাকে তাহলে আপনি সারারাত নারকেল তেল মুখে লাগিয়ে রাখেন এবং সকালে উঠে চমক দেখবেন।
নারকেল তেলে প্রচুর পরিমানে ফ্যাটি এসিড ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যাআপনার ত্বক ও চুলকে দেখাবে ইয়াং ও স্বাস্থ্যকর। এতে রয়েছে এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাংগাল বৈশিষ্ট্য, যা আপনার ত্বককে বিভিন্ন ধরনের এলার্জি,র্যাশ থেকে বাচাবে এবং পাশাপাশি চুল পড়াও কমাবে। আর এই জন্য নারকেল তেল হতে পারে অসাধারণ একটি বিউটি প্রোডাক্ট।
সাধারণ প্রশ্নোত্তর :
১) কতক্ষন নারকেল তেল চুলে রাখা উচিত?
শ্যাম্পু করার আগে চুলে তেল দিয়ে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করুন। আপনাকে হয়ত বেশ কয়েকবার চুল ধুতে হতে পারে কিন্তু এরপর আপনি সিল্কি ও স্মুথ চুল পাবেন।
২) চুলের যত্নে নারকেল তেলের সাথেআর কি কি মেশানো যেতে পারে?
আপনার চুলের ধরন এবং সমস্যার উপর এটি নির্ভর করে।ডিপ কন্ডিশনিং এর জন্য এলোভেরা জেল ব্যবহার করা যেতে পারে। ঝলমলে চুলের জন্য বাসায়ই আপনি নারকেলের দুধের শ্যাম্পু বানিয়ে নিতে পারেন।
৩)নারকেল তেল কি সত্যিই চুলের জন্য উপকারী?
নারকেল তেলে প্রচুর ফ্যাটি এসিড ও এন্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে, যা আপনার ত্বক ও চুলকে ঝলমলে ও স্বাস্থ্যোজ্জ্বল দেখাবে। এর এন্টিব্যাকটেরিয়াল ও এন্টিফাংগাল বৈশিষ্ট্যের জন্য স্কাল্প থাকবে মশ্চারাইজ ও চুল পড়াও প্রতিরোধ করবে।তাই, নারকেল তেলের প্যাক বা মাস্ক আপনার চুলের জন্য উপকারী।
৪)নারকেল তেল কি সরাসরি ত্বকে ব্যবহার করতে পারব?
হ্যাঁ, পারবেন। তবে খেয়াল রাখবেন যেন অনেক সময়ের জন্য তেল মুখে না থাকে, কারণ নারকেল তেল ময়লা আকৃষ্ট করে।
৫) নারকেল তেল কি ত্বকের কুঁচকে যাওয়া প্রতিরোধ করে?
হ্যাঁ, নারকেল তেলের এন্টি এজিং বৈশিষ্ট্য ত্বকের কুচকে যাওয়া প্রতিরোধ করে।
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।