ত্বকে স্ট্রেসজনিত সাইড ইফেক্ট কমাতে নারিকেল তেল যেভাবে সাহায্য করে
জীবনে স্ট্রেস থাকবে আর তার প্রভাব ত্বকের উপর পড়বে না, এমনটা অসম্ভব। তাই এ ব্যাপারে সবারই কিছুটা জেনে রাখা প্রয়োজন। কখনো ভেবে দেখেছেন খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রেজেন্টেশন বা দীর্ঘ প্রতীক্ষিত অনুষ্ঠানের আগেই ত্বকে হঠাৎ করে ব্রণের উপস্থিতি কাকতালীয় নয়তো? আসলেই কিন্তু কাকতালীয় নয়।
স্ট্রেসের কারণে ত্বকের উপর বিরূপ প্রভাব খুবই কমন একটি ঘটনা। সবচেয়ে খারাপ ব্যাপারটা হচ্ছে আপনার শরীর সিঁড়ি থেকে পড়ে যাওয়া বা ডেডলাইন মিস করার মধ্যে পার্থক্য করতে পারবে না। বিশেষ করে যখন স্ট্রেস হরমোন উৎপাদন করছে তখন তো আরও নয়। এই হরমোনগুলো যখন সিস্টেমে ঢোকে, তখন শরীর এই হরমোনকে ইনফ্ল্যামাশন থেকে রক্ষার চেষ্টা করে ও ত্বককে হাইপারসেনসিটিভ করে। আগে থেকে স্কিন কন্ডিশন থাকলে সেটা ত্বকের ওপর আরও বেশি স্ট্রেস ক্রিয়েট করবে। তবে কার ও এরকম কন্ডিশন না থাকলে তার কোনো ক্ষতি হবে না। স্ট্রেসড আউট হলে কী কী ধরনের সমস্যা হতে পারে তার একটা বর্ণনা এখানে দেওয়া হলো।
১) আন্ডার আই ব্যাগ
একজন মানুষ যখন স্ট্রেসের মুখে পড়ে তখন সবার আগে এটাই দেখা যাবে। স্ট্রেস মানুষের ঘুমের সূচিতে ব্যাঘ্যাত করে এবং দীরঘ রাত পর্যন্ত জাগিয়ে রাখে। চোখের নিচে ব্যাগি হচ্ছে স্ট্রেসের সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ।
২) অ্যাকনে
যদি কেউ একের পর এক অ্যাকনে সমস্যায় ভুগে, স্ট্রেস এই সমস্যা নিশ্চিতভাবেই আরও বাড়িয়ে নেবে এবং আউটব্রেক সৃষ্টি করবে। স্ট্রেসের অনিয়মিতভাবে করটিসল নামে একটা উপাদান তৈরি করে যেটার জন্য অন্য হরমোনেও ভারসাম্যহীনতা তৈরি হয়।
৩) বয়সের দাগ
স্ট্রেসড মুখ সাধারণত কোঁচকানো থাকে এবং ঠোঁত বা ভুরুর দিকে সেটা আরও বেশি থাকে। সেজন্য একটা সময় ধীরে ত্বকের ওপর ভাঁজ বা বয়সের দাগ পড়তে থাকে।
৪) শুষ্ক ত্বক
যখন একজন মানুষ স্ট্রেসড আউট থাকে, তখন পানি খেতে অনেক সময় ভুলে যায় বা সেটার সময়ও থাকে না। এটার জন্য ত্বক অনেক বেশি হাইড্রেটেড থাকে এবং অনেক সময় কফি থেকে আরও বেশি ডিহাইড্রেশনের পর স্ট্রেসফুল একটা দিন আসে, যেটার জন্য ত্বক আরও বেশি মলিন ও ফ্লেকি হয়।
৫) র্যাশ
গাটে ভালো ও খারাপ ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্যহীনতার জন্য অনেক সময় র্যাশ হয়। এই বাজে ব্যাকটেরিয়া ভালোগুলোর উৎপাদন কমিয়ে দেয় এবং যেটার ফলে ত্বকে র্যাশ বা চুলকানির মতো উপসর্গ দেখা দেয়।
কীভাবে মুখে স্ট্রেস পড়ার বিপক্ষে লড়াই করবেন
ত্বককে স্ট্রেসের দাগ থেকে মুক্তি পাওয়ার কিছু উপায় আছে। অনেক কাজের মধ্যেও সেই উপায় আপনাকে খুঁজে বের করে নিতে হবে। যেমন স্ট্রেসের জন্য রিংকেলসের কথা বলা যাক। আপনি যত বেশি ক্লান্ত ও উদ্বিগ্ন হবেন তত বেশি এক্সপ্রেশন পড়বে আপনার মুখের ওপর। এটার মানে নিশ্চিত হওয়া যে আপনার মুখে আর কোনো ত্বকের দাগ থাকবে না।
১) উদ্বিগ্নতার স্ট্রেস থেকে র্যাশ
অ্যাংজাইটি বা দুশ্চিন্তা থেকে র্যাশ হতে পারে। আগে বলা হয়েছে ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যহীনতার কারণে এটা হয়। এবং শুধু আপনার ন্যাচারাল বডিলি রেস্পন্স দিয়ে কন্ট্রোল করা যায়।
- নিয়ন্ত্রিত শ্বাস দিয়ে এটা অর্জন করা যায়
- আগেই বলা হয়েছে, আশেপাশে যাই ঘটুক আপনার বাড়তি চাপ নেওয়া যাবে না
- যখনই সুযোগ পাবেন, শ্বাস নেওয়ার কিছু ব্যায়ামের কথা ভাবুন। এটা আপনার শরীরকে বিশ্বাস কয়াবে সবকিছু ঠিক আছে এবং অতিরিক্ত চাপ নেবার প্রয়োজন নেই।
২) শুষ্ক ত্বক
এই সব ফ্যাক্টরগুলি আপনার জীবনে মেনে চলতে হবে, বিশেষ করে যখন আপনি যখন অনেক বেশি চাপের ভেতর দিয়ে যাবেন।
- শুষ্ক ত্বকের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য, আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান করতে হবে। ডাক্তারদের পরামর্শ হচ্ছে দৈনিক অন্তত আট গ্লাস পানি পান করা।
- তাজা ফলমূলের পাশাপাশি সবুজ চা পান করতে পারেন।
- নিয়মিত ব্যায়াম করতে পারেন। সুন্দর মুখের পেছনে লুকিয়ে আছে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন।
- শেষ পয়েন্টটা ব্যাখ্যা না করলেও হবে। ফোলা চোখ থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে রাতে ভালোমতো ঘুমাতে হবে। অন্তত ৮ ঘন্টা ঘুমাতে পারলে ভালো।
নারিকেল তেল কিভাবে সাহায্য করতে পারে
স্ট্রেস থেকে মুক্তি পাওয়ার ভালো একটা উপায় হচ্ছে নারিকেল তেল ব্যবহার করা। এটা অনেক আগে থেকে হয়ে আসছে এবং আধুনিক যুগে আরও বেশি প্রচলিত। নারিকেল তেলের বিভিন্ন গুণ আছে তবে এই অধ্যায়ে নারিকেল তেল ব্যবহার করে কীভাবে স্ট্রেস কমানো যায় সেটা নিয়ে আলোচনা করা হবে।
আমরা সবাই জানি নারিকেল তেল কীভাবে ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে ও ত্বককে হাইড্রেট করে। স্ট্রেস থেকে শুষ্ক ত্বকের সমস্যা কমানোর জন্য এটা সহজেই অ্যাপ্লাই করা যায়।
পদ্ধতি
- প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে মুখে নারিকেল তেল দিতে হবে।
- ত্বক সুন্দর করে ম্যাসাজ করতে হবে।
- তেল রাতারাতিই তার কাজটা করবে এবং ত্বকের ভেতর ময়েশ্চার ধরে রাখবে।
একইভাবে ত্বকের ভাঁজ পড়া ঠেকানোর জন্যও নারিকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
পদ্ধতি
- প্রতিদিন সকালে কয়েক ফোঁটা করে নারিকেল তেল দিন
- বৃত্তাকারভাবে সেটা মুখে দিন
- হয়ে গেলে মুখটা ধুয়ে মুছে নিন
নারিকেল তেল একই সঙ্গে অ্যাকনেও প্রতিরোধ করে। এর আছে অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্ল্যামাটরি প্রপার্টি।
পদ্ধতি
- এটা ব্যবহার করার ভালো উপায় হচ্ছে নারিকেল তেল ও বেকিং সোডা মিশ্রণ ব্যবহার করা
- মিশ্রণটি আপনার মুখে দিন
- ১০ মিনিট পর্যন্ত রেখে দিন
- হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সুফল পাওয়ার জন্য এই প্রক্রিয়া কয়েক বার প্রয়োগ করুন।
আপনি আন্ডার আই ব্যাগ ও ডার্ক সার্কেল থেকে নারিকেল তেলের মাধ্যমে মুক্তি পেতে পারেন।
পদ্ধতি
- ঘুমাতে যাওয়ার আগে অল্প করে নারিকেল তেল দিন
- বৃত্তাকারভাবে এটা দিন। এটা দাগের জায়গায় রক্ত সঞ্চালন সরবরাহ স্বাভাবিক রেখে ত্বককে নরম ও কোমল রাখবে।
দিন শেষে আপনি কীভাবে স্ট্রেস ম্যানেজ করছেন এটা বড় ব্যাপার। আপনি যদি ঠিকমতো সামলাতে না পারেন তাহলে এই ক্ষতিটা স্থায়ী হতে পারে।
কিছু সাধারণ প্রশ্ন
১) নারিকেল তেল কি স্ট্রেস কমায়?
হ্যাঁ, নারিকেল তেল ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার করা হলে চাপ কমাতে সাহায্য করে।
২) কীভাবে ত্বকে নারিকেল তেল দেবেন?
কিছু উপদানের সাথে নারিকেল তেল ফেস প্যাক হিসেবে মিশিয়ে অথবা সরাসরি ময়েশ্চারাইজার হিসেবে ব্যবহার কয়া যায়।
৩) নারিকেল তেল কি ত্বকের জ্বালাপোড়া কমাতে পারে?
নারিকেল তেলের অ্যান্টি ফ্ল্যামাটরি প্রপার্টি ত্বকের জ্বালাপোড়া ও স্কিন র্যাশ কমাতে সাহায্য করে।
৪) মুখের স্ট্রেস থেকে কীভাবে মুক্তি পাওয়া যাবে?
স্ট্রেস সাইড এফেক্ট থেকে মুক্তির জন্য আপনাকে ভারসাম্যপূর্ণ একটা জীবন লাগবে এবং চাপের মাথায় শান্ত থাকতে হবে। এর সাথে আপনাকে নিজের সূচিরও সঠিক যত্ন নিতে হবে।
৫) চাপের ধকল কিভাবে কমানো যাবে?
নারিকেল তেলের মতো প্রাকৃতিক উপাদানে সমৃদ্ধ দ্রব্য এই চাপের ধক্ল কমাতে সাহায্য করে। এটা নিয়মিতভাবে ব্যবহার করুন যেন তা ক্ষতি কমায় এবং আপনার লাইফস্টাইলের সাথে মানিয়ে যায়।
তথ্যসূত্র:
https://www.self.com/story/how-stress-impacts-skin
https://www.cosmopolitan.com/style-beauty/beauty/how-to/a39033/stress-signs-hair-skin-nails/
https://houseofcoco.net/benefits-of-using-coconut-oil-for-skin/
https://www.stylecraze.com/articles/how-to-get-rid-of-wrinkles-using-coconut-oil/
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।