কেন ভার্জিন নারিকেল তেল আপনার ত্বকের জন্য ভালো?
- সাধারণ নারিকেল তেলের মতো কোনো ধরনের পরিশোধন বা ব্লিচিং ভার্জিন কোকোনাট অয়েল তৈরিতে করা হয় না।
- ভার্জিন নারিকেল তেল অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ও ত্বকের রোগ প্রতিরোধ করে।
- ভার্জিন নারিকেল তেল ও এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেলের মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য নেই, শুধু বাণিজ্যিকভাবে আলাদা নামে ব্যবহৃত হয়।
ত্বক ও চুলের যত্নে নারিকেল তেলের গুণের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নারিকেল তেল নিয়মিত ব্যবহারে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। নারিকেল তেল ত্বকের মৃত কোষ দূর করা থেকে শুরু করে, ব্লাড সার্কুলেশনে সহায়তা করা, ত্বকে ব্যাকটেরিয়াল ও ফাঙ্গাল সংক্রমণ প্রতিরোধ করে ত্বকে পুষ্টি যোগায়।
তবে সাধারণ নারিকেল তেল ও ভার্জিন কোকোনাট অয়েলের মধ্যে সুনর্দিষ্ট কিছু পার্থক্য রয়েছে।
ভার্জিন কোকোনাট অয়েল কী?
ভার্জিন কোকোনাট অয়েল আর নারিকেল তেলের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো তেল তৈরির প্রক্রিয়ায়। সাধারণত নারিকেল তেল তৈরি হয় নারিকেলের ভিতরের শক্ত মোটা শাঁস থেকে। নারিকেল তেল তৈরির জন্য নারিকেলের শাঁস থেকে তেল নিষ্কাশন করে সেটাকে পরিশোধন করে ব্লিচ করা হয়। তারপর তেলের ভিতরে নারিকেলের গন্ধ দূর করে অন্য কোনো সুগন্ধী ব্যবহার করে তেলটি সাধারণের ব্যবহারযোগ্য করা হয়ে থাকে।
অন্যদিকে ভার্জিন কোকোনাট অয়েল তৈরি হয় নারিকেল থেকে কোনরকম বাইরের তাপ ছাড়া। সাধারণ নারিকেল তেলের মতো কোনো ধরনের পরিশোধন বা ব্লিচিং ভার্জিন কোকোনাট অয়েল তৈরিতে করা হয় না। এমনকি কোনো ধরনের কেমিক্যালও ব্যবহার করা হয় না। তাই এতে এন্টিঅক্সিডেন্টের পরিমাণ সাধারণ নারিকেল তেলের তুলনায় বেশি থাকে। ভার্জিন কোকোনাট অয়েল ফ্রেশ অ্যারোমা, শক্তিশালী ফ্যাটি এসিড ও প্রয়োজনীয় ভিটামিনের কারণে এর উপযোগিতা অনেক বেশি।
ভার্জিন কোকোনাট অয়েল কীভাবে উপকারি:
- ত্বকে আর্দ্রতা ও পানির পরিমাণ বজায় রাখে- ভার্জিন কোকোনাট অয়েল পুষ্টিগুণে ভরপুর তাই ত্বকে আর্দ্রতার পরিমাণ বজায় রাখতে কার্যকর ভুমিকা পালন করে। গোসলের পরপরই হাতের তালুতে অল্প পরিমাণ ভার্জিন কোকোনাট অয়েল নিয়ে মুখে ভালো করে মাসাজ করে নিন। এতে করে ত্বকে পানির পরিমাণ বজায় থাকবে।
- মাসাজ অয়েল- ভার্জিন কোকোনাট অয়েল এন্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হওয়ায় মাসাজ অয়েল হিসেবে এর উপযোগিতা অসাধারণ। এটি ত্বকে লুব্রিক্যান্ট হিসেবে কাজ করে বলে ত্বকে পানির পরিমাণ বজায় রাখার পাশাপাশি ত্বকের রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি করে।
- ত্বকে একজিমা জতীয় রোগ প্রতিরোধ করে- ত্বকে একজিমা বা সোরিয়াসিস জাতীয় রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে ভার্জিন কোকোনাট অয়েল দারুণ কার্যকর। এর এন্টি ব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে ত্বকের লাল লাল ভাব, ফেটে যাওয়ার সমস্যা সহ একজিমা বা সোরিয়াসিস দূর করতে সাহায্য করে। আক্রান্ত স্থান পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিনে দুইবার ভার্জিন কোকোনাট অয়েল নিয়মিত লাগালে কিছু দিনের মধ্যেই কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়।
- ত্বকের যত্নে- ভার্জিন কোকোনাট অয়েল বডি স্ক্রাবের বেইজ হিসেবে খুব দারুণ কাজ করে। এর সাথে চিনি বা কফির গুড়া ও ভ্যানিলা এসেন্স মিশিয়ে কেমিক্যালহীন ডি আই ওয়াই বডি স্ক্রাব বানানো খুবই সহজ। তাছাড়া ঠোঁটের ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও এটি ব্যবহারযোগ্য। শীতকালে বডি ময়েশ্চারাইজার হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সারাদিনের ক্লান্তির পর আপনি চাইলে মেকাপ রিমুভার হিসেবেও এটি ব্যবহার করতে পারেন।
তাহলে ভার্জিন ও এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেলের মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়? আসলে এই দুইয়ের মধ্যে তেমন কোনো তফাত নেই। এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল একদম তাজা নারিকেল থেকে সিঙ্গেল প্রেসে বের করে এরপর গ্রেট করে ঘন্টা দুয়েকের জন্য শুকানো হয় ও ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা হয়। এক্সট্রা ভার্জিন নারিকেল তেলের গুণাগুণও কই রকম। শুধু বাণিজ্যিকভাবে এটার আলাদা নাম দেওয়া হয়েছে। ভার্জিন নারিকেল তেল মূলত কোল্ড প্রেসড এবং এটা কম তাপমাত্রায় বের করা হয়। কখনো কোল্ড প্রেসড টেকনোলজি প্রাধান্য দেওয়া হয়, কারণ তাপ দিলে পরিমাণে বেশি বের হয়। কোল্ড প্রেসড নারিকেল তেল ঝুনো নারিকেলের গা থেকে বের করে আনা হয়। এতে তেলের পরিমাণ বেশি থাকে। ফলে এটা সাধারণ নারিকেল তেলের চেয়ে বেশি দামি হতে পারে। সেজন্য এই কোল্ড প্রেসড নারিকেল তেল ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয়। এটা কম তাপমাত্রায় বের করে আনা হয় বলে পুষ্টিগুণ ঠিক থাকে। সেজ্য স্বাস্ত্যসচেতন লোকদের কাছে এটা বেশি প্রাধান্য পেতে পারে, কারণ রক্ত সঞ্চালন ও কার্ডিও ভাসকুলার রোগে এটার প্রভাব বেশি।
আগেই বলা হয়েছে নারিকেল তেল আরও ত্বকের যত্নে নানা রকমভাবে কাজে লাগানো যায়। অনেক সেলিব্রিটি বডি ময়েশ্চারাইজার ও মেকআপ রিমুভার হিসেবে নারিকেল তেলের কথা বলেছেন। ডিপ কন্ডিশনার ও ব্রাশ ক্লিনার হিসেবেও এটা কাজে আসে। নারিকেল তেল ত্বকে আর্দ্রতার পরিমাণ ও কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায় ও জ্বালাপোড়া কমায়। সেজন্য ত্বক থাকে সতেজ ও কোমল।
ভার্জিন নারিকেল তেল নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন আছে। অনেক সময় মানুষ জানতে চায় এটা খাওয়া নিরাপদ কি না। সাধারণত খাওয়ার সময় নারিকেল তেল ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সরাসরি এটা গ্রহণ না করারই পরামর্শ নেওয়া হয় কারণ ভার্জিন নারিকেল তেলে এমন এক ধরনের ফ্যাট থাকে যেটা কোলেস্টরলের মাত্রা বাড়াতে পারে। আরেকটা প্রশ্ন যেটা করা হয় ভার্জিন নারিকেল তেল ও রিফাইন্ড নারিকেল তেলের মধ্যে পার্থক্যটা কী? মূল পার্থক্যটা হচ্ছে গন্ধ ও স্বাদ। ভার্জিন নারিকেল তেলের একটা নির্দিষ্ট গন্ধ ও স্বাদ থাকে, যেটা কপরা বেসড তেলের থাকে না। এবং সবশেষে অনেক সময় প্রশ্ন করা হয় ভার্জিন নারিকেল তেল সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যসম্মত কি না। এখজানে তো ভার্জিন বা বিশুদ্ধ নারিকেল তেলের অনেক গুণের কথা বলা হয়েছেই, একই সঙ্গে এটা রান্নাতেও ব্যবহার করা যায়। সেই সঙ্গে হৃদরোগ, ক্যান্সার, অন্যান্য ডিজেনারেটিভ রোগ ঠেকায়, হজমে উন্নতি করে ও অতিরিক্ত ওজন ঝেড়ে ফেলতে সাহায্য করে। এটা সাধারণত রেফ্রিজারেটরে রাখার প্রয়োজন নেই এবং এটার শেলফ লাইফ প্ল্যান্ট তেলের চেয়ে বেশি।
তাই ভার্জিন নারিকেল তেল সব মৌসুমেই ব্যবহার করা যায়। শুধু নিশ্চিত করতে হবে এটা সঠিকভাবে ও সঠিক পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে।
https://www.kamaayurveda.com/blog/virgin-coconut-oil/
https://www.healthline.com/nutrition/coconut-oil-and-skin#TOC_TITLE_HDR_2
https://www.netmeds.com/health-library/post/virgin-coconut-oil-uses-nutrition-and-health-benefits
https://client.bigboxtm.com/frequently-asked-questions/
https://www.netmeds.com/health-library/post/virgin-coconut-oil-uses-nutrition-and-health-benefits
https://www.centrafoods.com/blog/virgin-vs-extra-virgin-coconut-oil-whats-the-difference
https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/coconut-oil-on-face-overnight#side-effects
https://healthyeating.sfgate.com/benefits-pure-coldpressed-coconut-oil-7169.html
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।