ব্ল্যাকহেডস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায়
- ত্বকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুলে যাওয়া কালো অংশের নামই ব্ল্যাকহেডস।
- ক্লিনজার দিয়ে ত্বক পরিষ্কার করা, ক্লে মাস্ক বা চারকোল মাস্ক ব্যবহার বা স্কিন ব্রাশ ব্যবহার করে ব্ল্যাকহেডস দূর করা যেতে পারে।
- গ্রিন টি, হানি মাস্ক, মিন্ট টুথপেস্ট সহ নানারকম ডিআইওয়াই পদ্ধতিতে ব্ল্যাকহেডস দূর করা যায়।
ত্বকের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুলে যাওয়া কালো অংশের নামই ব্ল্যাকহেডস। আটকে থাকা ফলিকলসের কারণেই সাধারণত ব্ল্যাকহেডস তৈরি হয়। ব্ল্যাকহেডসের বাইরের দিকের অংশ কালো রঙের হয় বলে একে ব্ল্যাকহেডস বলা হয়। মুখের ত্বকে ব্ল্যাকহেডস হওয়ার পাশাপাশি পিঠে, বুকে, হাতে ও কাঁধেও ব্ল্যাকহেডস হতে পারে।
ফলিকলসের খোলা অংশ ভরে গেলেই ব্ল্যাকহেডস তৈরি হওয়া শুরু হয়। প্রত্যেকটা হেয়ার ফলিকলেই একটি করে হেয়ার গ্ল্যান্ড থাকে যা ত্বকে প্রয়োজনীয় তেল উৎপাদন করতে সাহায্য করে। উৎপাদিত এই তেলকে সেবাম বলে। ত্বককে নরম ও কোমল রাখাই সেবামের কাজ। ত্বকের মৃত কোষগুলো যখন ফলিকলসে আটকে থাকে তখন কমেডো নামের কিছু বাম্প উৎপন্ন হয়। এই বাম্পগুলোই ব্ল্যাকহেডস তৈরির মূল কারণ। বেশ কিছু কারণে ব্ল্যাকহেডস হতে পারে। ত্বকে অতিরিক্ত তেল উৎপাদনের কারণে, ত্বকে ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণে, মৃত কোষের কারণে, হরমোন পরিবর্তন ও জন্ম নিয়ন্ত্রক ওষুধ খাওয়ার কারণে ব্ল্যাকহেডস হতে পারে। আজকের লেখায় ব্ল্যাকহেডস থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাব্য উপায়গুলো আমরা আলোচনা করব।
- স্যালিসাইলিক এসিড সমৃদ্ধ ক্লিনজার বেছে নিন। এটি ত্বকের পোরসে আটকে থাকা মৃত কোষ দূর করে ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সাহায্য করে। তবে যাদের ত্বক সেনসিটিভ তাদের এটি ব্যবহার না করাই ভালো। স্যালিসাইলিক এসিড দিয়ে একদিন পর পর একবার করে মুখের ত্বক পরিষ্কার করে নিতে পারেন। ত্বকে যতি কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা না দেয় তাহলে এভাবেই ব্যবহার করতে থাকুন।
- স্কিন ব্রাশ ব্যবহার করুন। স্কিন ব্রাশ ত্বকের মৃত কোষ দূর করে ব্ল্যাকহেডস থেকে পরিত্রাণ পেতে সহায়তা করে। চর্ম বিশেষজ্ঞরা বিশেষত সেনসিটিভ ত্বকের ক্ষেত্রে স্কিন ব্রাশ ব্যবহারের পরামর্শ দেন। বাজারে ম্যানুয়াল ও অটোমেটিক দুই ধরনের স্কিন ব্রাশই পাওয়া যায়। ব্ল্যাকহেডস দূর করতে দুটোই সমান কার্যকর। কাজেই আপনার ত্বকের জন্য যেটি ভালো সেটিই ব্যবহার করুন।
- ক্লে মাস্ক ব্যবহার করুন। ব্ল্যাকহেডস দূর করতে ক্লে মাস্ক দারুণ কার্যকর। এই মাস্ক ত্বকের পোরসে আটকে থাকা টক্সিন পুরোপুরি দূর করে ব্ল্যাকহেডস দূর করতে সাহায্য করে। ক্লে মাস্কে আছে সালফার যা ত্বকের মৃত কোষ দূর করে।
- চারকোল মাস্ক ব্যবহার করুন। ক্লে মাস্কের মতো এটিও ব্ল্যাকহেডস তুলে ফেলতে দারুণ কার্যকর। এটি ত্বক থেকে অতিরিক্ত তেল ও অন্যান্য ধুলো-ময়লা দূর করে ত্বককে রাখে ব্ল্যাকহেডস মুক্ত।
- রাতে ঘুমানোর আগে অবশ্যই মেক-আপ তুলে ফেলুন। ব্ল্যাকহেডস দূর করতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হল মেক-আপ তুলে ঘুমাতে যাওয়া। অথবা বলতে পারেন ব্ল্যাকহেডস প্রতিরোধ করার জন্য মেক-আপ করে কখনোই রাতে ঘুমানো যাবে না। পাউডার জাতীয় মেক-আপ পোরসের ভিতর খুব সহজে আটকে থাকে। এগুলোই পরে ব্ল্যাকহেডস তৈরি করতে সাহায্য করে। কাজেই, প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে খুব মাইল্ড ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে তারপর ঘুমাতে যান। তখন নিজেকে আর ব্ল্যাকহেডস কীভাবে দূর করবো, এই প্রশ্ন করতে হবে না।
চলুন এখন জেনে নিই এমন কয়েকটি ডিআইওয়াই পদ্ধতি যা দিয়ে সহজেই আপনি আপনার ত্বকের ব্ল্যাকহেডস দূর করতে পারবেন। সাধারণত নাকের মাথায় সবচেয়ে বেশি ব্ল্যাকহেডস দেখা দেয়। আমরা আজ এমন কিছু কৌশলের কথা আলোচনা করবো যা দিয়ে সহজেই এই ব্ল্যাকহেডসের সমস্যা থেকে আপনি মুক্তি পাবেন।
-
- গ্রিন টি ব্যবহার করুন- গ্রিন টি পাতা ভালোভাবে পানিতে ফুটিয়ে পানি ছেঁকে নিন। এবার এটি ঠান্ডা হয়ে গেলে আক্রান্ত স্থানে কয়েক মিনিটের জন্য লাগিয়ে রাখুন। ধোয়ার সময় ভালোভাবে স্ক্রাব করে নিন। নাকের এবং থুতনির ব্ল্যাকহেডস দূর করতে এই পদ্ধতি খুব কাজের।
- হানি মাস্ক ব্যবহার করুন- এক টেবিল চামচ মধু ও কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি নাকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। মধু খুব সহজেই আপনার পোরসের ছিদ্র নরম করে ব্ল্যাকহেডস তুলে ফেলতে সাহায্য করবে। মুখ ধুয়ে ফেলুন।
- মিন্ট টুথপেস্ট ব্যবহার করুন- এই পদ্ধতিতে ব্ল্যাকহেডস দূর করা অবশ্য একটু গতানুগতিকের বাইরে। এই পদ্ধতিতে আক্রান্ত স্থানে সামান্য টুথপেস্ট লাগিয়ে ব্রাশের সাহায্যে ভালোভাবে মাসাজ করুন। কিছুক্ষণ পর মুখ ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে বরফ লাগিয়ে নিন যাতে করে পোরসের ছিদ্র বন্ধ হয়ে যায়। এই পদ্ধতিতে ব্ল্যাকহেডস দূর করা একটু অপ্রচলিত হলেও অনেকের জন্যেই এটি কিন্তু দারুণভাবে কাজ করে।
- বেকিং সোডা দিয়ে এক্সফলিয়েট করুন- এক টেবিল চামচ বেকিং সোডা ও কয়েক ফোঁটা ডিসটিলড ওয়াটার একসাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আক্রান্ত স্থানে আলতোভাবে মাসাজ করে মিশ্রণটি শুকানো পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি আপনার ব্ল্যাকহেডস দূর করার পাশাপাশি ত্বকের উজ্জ্বলতাও বৃদ্ধি করবে।
নাকের মাথা থেকে ব্ল্যাকহেডস দূর করার অনেক ঘরোয়া উপায় রয়েছে। মুখে গরম ভাপ নেয়া, লেবুর রসের মাস্ক ব্যবহার করা ইত্যাদি উপায়েই ব্ল্যাকহেডস দূর করা যায়। অনেকেই জানতে চান ব্ল্যাকহেডসের স্থায়ী সমাধান কী। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান পেতে হলে অবশ্যই আপনাকে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে হবে। বিশেষজ্ঞ আপনাকে সালফার জাতীয় উপাদান দিয়ে চিকিৎসা করতে পারেন, এতে করে আপনি দ্রুত এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাবেন।
সাধারণ প্রশ্ন:
১। তাৎক্ষণিকভাবে ব্ল্যাকহেডস থেকে কীভাবে মুক্তি পাবো?
বেকিং সোডা ও ডিসটিলড ওয়াটার একসাথে মিশিয়ে আক্রান্ত স্থানে লাগালে তা ব্ল্যাকহেডস থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
২। ব্ল্যাকহেডস কীভাবে দূর করবো?
ব্ল্যাকহেডস দূর করতে ক্লে মাস্ক, চারকোল মাস্ক সহ নানারকম ঘরোয়া পদ্ধতিতে তৈরি মাস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
৩। ব্ল্যাকহেডস হওয়ার কারণ কী কী?
অতিরিক্ত তেল ও ত্বকের মৃত কোষ পোরসের ছিদ্র আটকে ব্ল্যাকহেডস তৈরি করে।
৪। ব্ল্যাকহেডস ত্বক থেকে পরিষ্কার না করলে কী হতে পারে?
বেশিরভাগ মানুষের ত্বকেই ব্ল্যাকহেডস পরিষ্কার না করলে খুব একটা সমস্যা হয় না, শুধুমাত্র ব্ল্যাকহেডসগুলো ত্বকের আরো গভীরে গিয়ে শক্ত হয়ে যেতে পারে। এগুলো একদম গভীরে শিকড় জন্মাতে না পারে তাই শুরুতেই ব্ল্যাকহেডস প্রতিকার করা উচিত।
৫। ব্ল্যাকহেডস কী দূর করা যায়?
ত্বককে ব্ল্যাকহেডস মুক্ত রাখার অনেক উপায় রয়েছে। এ জন্য মাস্ক ব্যবহার করা যেতে পারে বা ঘরোয়া পদ্ধতিতে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকহেডস দূর করা যেতে পারে।
৬। নিয়মিত পানি পান করলে কি ব্ল্যাকহেডস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
নিয়মিত পানি পান করলে ত্বকে পানির পরিমাণ বজায় থাকে ফলে ত্বকে অতিরিক্ত তেল জমে না এবং ব্ল্যাকহেডসও তৈরি হয় না।
৭। আমার নাক থেকে চিরতরে ব্ল্যাকহেডস কীভাবে দূর করবো?
নাকের মাথায় ব্ল্যাকহেডস খুবই কমন একটি সমস্যা, এর প্রতিকারও কিন্তু খুব সহজ। নাক থেকে চিরতরে ব্ল্যাকহেডস দূর করতে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
Reference:
https://www.healthline.com/health/beauty-skin-care/how-to-get-rid-of-blackheads#makeup
https://healthfully.com/how-to-get-rid-of-permanent-blackheads-5248300.html
[sc name=”how-to-get-rid-of-blackheads-bn”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।