পায়ের গোড়ালি ফাটা? ঘরে বসেই পান মুক্তি!
- পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়া খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। পায়ের ত্বকের যত্ন ঠিকভাবে না নিলেই গোড়ালি ফেটে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
- গোড়ালি ফাটার কারণে পায়ের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার সাথে সাথে অস্বস্তি ও ব্যথাও তৈরি হয়।
- এমনকি পা ফেটে রক্তপাতও হতে পারে। সাধারণত শুষ্ক ত্বকে গোড়ালি ফেটে যাওয়ার সমস্যা বেশি দেখা দেয়। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পায়ের গোড়ালির যত্ন নেয়া প্রয়োজন।
পায়ের ত্বক শুষ্ক হয়ে গোড়ালি কেন ফেটে যায়?
বিভিন্ন কারণেই পায়ের গোড়ালি ফেটে যেতে পারে। পায়ের গোড়ালিতে যেহেতু কোনো অয়েল গ্ল্যান্ড থাকে না তাই যত্ন না নিলে শুষ্কতা দেখা দেয়। যার ফলে পা ফেটে যাওয়া শুরু হয়। এছাড়া একজিমা, সোরিয়াসিস জাতীয় চর্মরোগের কারণেও গোড়ালি ফেটে যেতে পারে। ডায়বেটিস, থাইরয়েড, হরমোনাল ইমব্যালেন্স জাতীয় রোগে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ফলে সহজেই পা ফেটে যায়। এছাড়া অপরিচ্ছন্ন জুতা পরা, সাইজ অনুযায়ী জুতা না পরা, অতিরিক্ত হাঁটা, শক্ত মেঝেতে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে থাকা, পায়ে অতিরিক্ত চাপ দেয়ার ফলে পা ফেটে যেতে পারে।
পা ফেটে যাওয়ার লক্ষণগুলো কী কী?
পা ফেটে যাওয়ার সবচেয়ে প্রধানতম লক্ষণ হচ্ছে গোড়ালি এবং পায়ের পাতায় প্রথমে শুষ্কতা এবং পরে অসংখ্য ফাটল দেখা দেয়া। এই ফাটল থেকে চামড়াও উঠতে পারে। এই ফাটল যদি গভীর হয়ে যায় তাহলে অনেক সময় রক্তও বের হতে পারে। ফাটা জায়গায় ব্যথাও হয় অনেক। পা ফাটার আগে গোড়ালির ত্বক প্রচন্ড শক্ত ও চামড়া মোটা হয়ে যায়। গোড়ালির এই অংশের রঙ হলুদ বা গাঢ় বাদামি হয়ে যায়। এই স্থানে যদি এই সময় থেকেই যত্ন নেয়া না হয় তবে ক্ষত এত গভীর হয় যে হাঁটা-চলা করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে।
পায়ের শুষ্কতা ও ফেটে যাওয়া গোড়ালি প্রতিরোধের টিপস সমূহ:
গোড়ালি ফেটে যাওয়া সমস্যা প্রতিরোধের সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ফেটে যাওয়ার আগেই যত্ন নেয়া। পায়ের ত্বক যদি অতিরিক্ত শুষ্ক থাকে তবে শুষ্কতা দূর করার জন্য যত্ন নেয়া শুরু করতে হবে। কিছু সাধারণ টিপস মেনে চললে সহজেই পা ফাটা থেকে মুক্তি মিলবে।
- পায়ের ত্বক সবসময়ই ময়েশ্চারাইজড রাখতে হবে। যেসব ময়েশারাইজার একটু হেভি ফর্মুলায় তৈরি সেসব ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।
- পা নিয়মিত গরম পানিতে ভিজিয়ে তারপর এক্সফলিয়েট করতে হবে। গরম পানিতে লেবুর রস বা লবণ দেয়া যেতে পারে। স্ক্রাবার বা লুফা দিয়ে ভালোভাবে পা ঘসে নিয়ে তারপর তোয়ালে দিয়ে চেপ চেপে পানি মুছে ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।
- একজিমা, সোরিয়াসিস বা শুষ্ক পায়ের ত্বকে নিয়মিত নারিকেল তেল মাসাজ করতে হবে। নারিকেল তেলের এন্টি মাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্যের কারণে পায়ের ত্বকে সংক্রমণ মুক্ত থাকে।
- আরামদায়ক জুতা পরতে হবে। অত্যধিক হাঁটাচলা করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
- শরীরে পানির পরিমাণ বজায় রাখতে নিয়মিত পানি পান করতে হবে।
শুষ্ক পায়ের যত্নে কিছু কার্যকর উপায়:
প্রাকৃতিক এক্সফলিয়েশন:
ত্বক নিয়মিত এক্সফলিয়েট না করলেই ধীরে ধীরে শুষ্কতার দিক এগোতে থাকে। কুসুম গরম পানি ৫-৮ মিনিট পা ভালোভাবে ভিজিয়ে রাখুন। এরপর লুফা বা স্ক্রাবারের সাহায্যে গোড়ালি ডলে ডলে মৃত চামড়াগুলো তুলে ফেলুন। এরপর তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মুছে প্রাকৃতিক আমন্ড অয়েল মেখে নিন, তারপর কমপক্ষে ১ ঘন্টা মোজা পরে থাকুন।
কলার তৈরি প্যাক:
শুষ্ক ত্বকের জন্য কলা দারুণ কার্যকর। এটি প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজারের কাজ করে। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি ও বি কমপ্লেক্স। একটি কলার সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। পায়ের গোড়ালিতে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। টানা তিন দিন দিনে দুবার করে এই পেস্ট লাগানোর পর ফলাফল দেখুন।
লেবুর রস ও নারিকেল তেল:
১৫ মিনিট কুসুম গরম পানিতে পা ভিজিয়ে মুছে নিন। ১ টেবিলচামচ লেবুর রসের সাথে ১ চা চামচ ঠান্ডা নারিকেল তেল মিশিয়ে পায়ে মাসাজ করুন। এক ঘন্টা পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
প্রতিদিন অ্যালোভেরা ব্যবহার করুন:
ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধে অ্যালোভেরা খুব কার্যকর। এতে রয়েছে ভিটামিন এ, সি, ই এবং এন্টি অক্সিডেন্ট যা ফেটে যাওয়া পা সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। পা ধোয়ার পর পর বারবার অ্যালোভেরা জেল টানা তিন দিন লাগালেই কার্যকর ফল পাওয়া যাবে।
পা ফেটে যাওয়া সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আরো কিছু উপায়:
পা ফেটে যাওয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আরো কিছু সহজ উপায় আছে যা নিয়মিত মেনে চললে পা ফাটা সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি মিলবে।
নারিকেল তেল:
নারিকেল তেল শুষ্ক ত্বকের আর্দ্রভাব ফিরিয়ে আনতে ও পুষ্টি যোগাতে দারুণ কার্যকর একটি উপাদান। নিয়মিত পায়ের গোড়ালিতে ব্যবহার করলে এটি পায়ের মৃত কোষ দূর করে ত্বকের গভীরে পুষ্টি যোগায়। প্রতি রাতে ২ টেবিল চামচ নারিকেল তেল পায়ে মাসাজ করে মোজা পরে ঘুমাতে যান। সকালে পা ধুয়ে ফেলুন।
ভেজিটেবল অয়েল:
ভেজিটেবল অয়েলে রয়েছে এন্টিমাইক্রোবিয়াল, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টিইনফ্ল্যামাটরি বৈশিষ্ট্য। যে কারণে ভেজিটেবল অয়েল সহজেই গোড়ালি ফেটে যাওয়া প্রতিরোধ করতে পারে। পা ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে ২ চা চামচ ভেজিটেবল অয়েল ফাটা অংশে ভালোমত লাগিয়ে নিন। এরপর মোজা পরে সারা রাত এভাবেই থাকুন। সকালে পা ধুয়ে ফেলুন।
পেট্রোলিয়াম জেলি:
পায়ের গোড়ালির ত্বক থেকে পানির পরিমাণ কমে যায় বলে শুষ্ক হয়ে ফেটে যায় অনেক সময়। পেট্রোলিয়াম জেলি ত্বকের পানির পরিমাণ বজায় রাখতে সাহায্য করে। ১৫-২০ মিনিট কুসুম গরম পানিতে পা ভিজিয়ে রেখে লুফার সাহায্যে ভালোভাবে ঘসে মৃত চামড়া তুলে ফেলুন। এরপর তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মুছে আক্রান্ত স্থানে ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন। এরপর পেট্রোলিয়াম জেলি লাগিয়ে নিন, এতে করে আর্দ্রতা আক্রান্ত স্থানে সিল হয়ে যাবে। উলের মোজা পরে সারা রাত এভাবেই রাখুন, সকালে পা ধুয়ে ফেলুন।
প্রতি রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে এভাবে পায়ের যত্ন নিন।
মধু:
মধু প্রাকৃতিকভাবে এন্টিসেপটিকের কাজ করে বলে পা ফেটে যাওয়া সমস্যা সমাধানে দারুণ কার্যকর একটি উপাদান।
আধা বালতি হালকা গরম পানির ভিতর এক কাপ মধু মিশিয়ে নিন। ১৫-২০ মিনিট এই পানিতে অ্যা ভিজিয়ে রেখে ভালো করে স্ক্রাব করুন। নিয়মিত ব্যবহারে আপনার পায়ের ত্বক হয়ে উঠবে নরম ও মসৃণ।
পা ফেটে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে কিছু সাধারণ প্রশ্ন:
শীতকালে কেন পা ফাটে, পা ফেটে যাওয়ার আগে থেকেই কীভাবে এর প্রতিরোধ করতে হবে, পা ফেটে গেলে সারিয়ে তোলার উপায় সহ নানা রকম প্রশ্নই আমাদের মনে ঘুরপাক খায়। সেরকম কিছু সাধারণ প্রশ্ন ও উত্তর নিয়েই সাজানো হয়েছে এই অংশটি।
১। পা ফেটে গেলে কীভাবে এটি সারিয়ে তুলবেন?
সাধারণত পা ফেটে গেলে পায়ের গোড়ালিকে সারিয়ে তোলার জন্য নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। কারণ ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যাওয়ার কারণেই ফেটে যায়। এছাড়া পায়ের ত্বকে নিয়মিত নারিকেল তেল ব্যবহার করলেও ত্বক ফেটে যাওয়ার সমস্যা দূর হয়।
২। কি কি উপায়ে পা ফাটা প্রতিরোধ করা যেতে পারে?
পা ফাটা শুরু হবার আগে থেকেই পায়ের নিয়মিত যত্ন করা উচিত। প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত পা কুসুমগরম পানিতে ভিজিয়ে তারপর স্ক্রাব করে মৃত কোষ তুলে ফেলতে হবে। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে ত্বকের আর্দ্রভাব বজায় রাখতে হবে। এছাড়া নিয়মিত পায়ের ত্বকে ময়েশ্চারাইজিং ও হাইড্রেটিং করতে হবে।
৩। পা ফেটে গেলে সেটা সেরে যেতে কত দিন লাগতে পারে?
খুব ভালোভাবে যত্ন নিলে ৭ থেকে ১৪ দিনে ফেটে যাওয়া অংশ প্রাথমিকভাবে কিছুটা সেরে যেতে পারে। তবে এটা নির্ভর করে ফেটে যাওয়া অংশের অবস্থা কতোটা খারাপ। একজিমা বা সোরিয়াসিস জাতীয় সমস্যায়ও রোগের উপর নির্ভর করে কতোদিনে ফেটে যাওয়া পা সেরে উঠবে।
উল্লেখ্য যে, উপরের টিপস এবং উত্তরগুলি সাধারণ জ্ঞান ও সাধারনভাবে আহরিত তথ্য যা কোনওভাবেই স্কিনকেয়ার বিশেষজ্ঞের বা চিকিৎসকের পরামর্শের বিকল্প হিসাবে বিবেচনা করা উচিত নয়। তাই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ বা চিকিৎসার জন্য দয়া করে আপনার ডাক্তার বা চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
Reference:
https://www.stylecraze.com/articles/simple-home-remedies-for-cracked-heels/
https://dermnetnz.org/topics/cracked-heel/
https://www.healthline.com/health/cracked-heel-heal
[sc name=”bid-adieu-to-dry-and-cracked-feet-with-these-home-remedies-bn”]
POST A COMMENT
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।